বুধবার দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত এই কমিটিতে সভাপতি পদে প্রবীণ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকেই রাখা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের চট্টগ্রামের অনেক নেতাই বলছেন, মহিউদ্দিনের সঙ্গে অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধের কারণেই নগর রাজনীতিতে ‘নবিশ’ নাছির সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছেন।
তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন্দ্র থেকে কমিটি দিলে আমাদের কিছু বলার নেই।”
কমিটি ঘোষণার আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খোরশেদের নামও নগর নেতা-কর্মীদের আলোচনায় ছিল। এছাড়াও ছিল মন্ত্রী আফসারুল আমীন, ইব্রাহিম হোসেন বাবুল ও আলতাফ হোসেন বাচ্চুর নাম।
নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে দক্ষ ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আনার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করলেও নতুন কমিটি নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে চাননি মহিউদ্দিন।
“অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু বেশি কথা বলব না। দল বা বিরোধী দল কারো বিরুদ্ধে বেশি কথা বলব না।”
২০০৬ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের আগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি মহিউদ্দিনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী ইনামুল হক দানু। দানু মারা যাওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশা করছিলেন অনেকে।
নবগঠিত ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পুরনো কমিটির মহিউদ্দিন অনুসারী অধিকাংশ নেতাই ঠাঁই পেয়েছেন। নতুন করে জায়গা মিলেছে আ জ ম নাছির অনুসারী কয়েকজন নেতারও।
নগর রাজনীতিতে মহিউদ্দিনবিরোধী হিসেবে পরিচিত আফসারুল আমীন, সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি নতুন কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে স্থান পেয়েছেন।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোতোয়ালি আসনে নুরুল ইসলাম বিএসসির মনোনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন মহিউদ্দিন।
এরপর ২০১০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিনের বিরোধিতায় নামেন নুরুল ইসলাম বিএসসিসহ অন্যরা। ওই নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটে হারেন আগের তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন।
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে মহিউদ্দিনের বিরোধিতায় আফসারুল আমীন, নুরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম একজোট ছিলেন।
কেন্দ্র থেকে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে চট্টগ্রামের এই নেতাদের বিরোধ মেটানো যায়নি।
এরপর চলতি বছর মহিউদ্দিন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির কাউন্সিল শুরু করলে আফসারুল আমীনের সঙ্গে তার দূরত্ব কিছুটা কমে আসে। কিন্তু নুরুল ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব থেকেই যায়।
এসব বিরোধের কোথাও ছিলেন না নাছির। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মহিউদ্দিনের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গেই দেখা গেছে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেই বেশি পরিচিত নাছিরকে।
‘যে কাউকে নিয়ে রাজনীতি করব’
দলীয় সভানেত্রী ঘোষিত কমিটি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকম প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহিউদ্দিনের কণ্ঠে অসন্তোষের সুর পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেয়া এই ব্যক্তি বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
“চট্টগ্রাম নগর কমিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দক্ষ ও যোগ্য লোক প্রয়োজন”, বলেই মহিউদ্দিন বলেন,
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধের কারণে মাঠে না থাকা একজন তরুণ ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।”
৭১ সদস্যের কমিটি, মেয়াদ ৩ বছর
তিন বছর মেয়াদি ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেখ হাসিনা অনুমোদনের পর তা সভাপতি মহিউদ্দিনকে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ হয়েছে।
নতুন কমিটির নয় সহ-সভাপতি হলেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সুনীল সরকার, আফসারুল আমীন, নুরুল ইসলাম বিএসসি, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল আলম দোভাষ ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু।
তিন যুগ্ম সম্পাদক হলেন রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম ও এম এ রশিদ।
আইন সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমদুর রহমান সিদ্দিকী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাজী জহুর এবং প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।
তিন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান ও কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী।
বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মানস রক্ষিত, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জোবাইদা নারগিস এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক দেবাশীষ গুহ বুলবুল।
এছাড়া যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, শিক্ষা ও গবেষণা জালাল উদ্দিন ইকবাল, শিল্প মাহবুবুল হক মিয়া, শ্রম আব্দুল আহাদ, সংস্কৃতি আবু তাহের ও স্বাস্থ্য ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।
কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও উপ-প্রচার সম্পাদক শহীদুল আলম।
নতুন কমিটির সদস্যরা হলেন- এস এ জাফর, হাজী মো. ইয়াকুব, হাজী মো শফি, আবুল মনসুর, মো. আফসার মিয়া, নুরুল আমিন শান্তি, মো. ইউসুফ সরদার, আমিনুল হক, পেয়ার মোহাম্মদ, দোস্ত মোহাম্মদ, সাংসদ এম এ লতিফ, নুরুল আলম, মাহমুদুল হক মিয়া, গাজী শফিউল আজিম, শেখ জমির আহমদ, কামরুল হাসান ভুলু, জালাল উদ্দিন ইকবাল, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, আহমেদ ইলিয়াস, বিজয় কিষাণ চৌধুরী, জাফর আলম, গৌরাঙ্গ চন্দ্র ঘোষ, মহব্বত আলী, মুনসি মিয়া, আবদুল লতিফ টিপু, চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াস, কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন মঞ্জু, মো জাবেদ, হাজী বেলাল আহমদ, কাউন্সিলর মোরশেদ আখতার চৌধুরী।
১৩ জনের একটি উপদেষ্টা পরিষদও ঘোষণা করা হয়েছে। এর সদস্যরা হলেন ইসহাক মিয়া, বেলায়েত হোসেন, ডা. সৈয়দুর রহমান, কলিমউল্লাহ চৌধুরী, সুলতান আহমেদ, হাজী নুরুল হক, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, খন্দকার সিরাজুল আলম, সফর আলী, শেখ মো. ইসহাক ও এনামুল হক।