রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তাদেরই সাজানো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Published : 29 Oct 2017, 11:34 AM
তিনি বলেছেন, “যখন জনতার ঢল নামেনি, তখন এ ধরনের একটি ঘটনা প্রয়োজন ছিল টু মেইক এ বিগ নিউজ। তা না হলে তিনি কক্সবাজারে বাই এয়ার না গিয়ে বাই রোড কেন গেলেন?”
হামলার ঘটনার পরদিন রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী কাদেরের এ মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “আমার কাছে খবর আছে, ছাত্রদল ও যুবদল এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল ও যুবদলকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগের উপর যুবলীগের উপর দোষ চাপানোর এটি একটা মতলব, সেই মতলবটা এখন পরিষ্কার।”
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে শনিবার দুপুরে ফেনীতে যাত্রাবিরতি করার সূচি ছিল খালেদা জিয়ার। ফেনীতে ঢোকার আগে চৌদ্দগ্রামের সীমানায় মোহাম্মদ আলী বাজারে হামলার মুখে পড়ে তার গাড়িবহর।
খালেদা জিয়ার গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর একদল যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালালে গণমাধ্যমকর্মীদের বাহনসহ বহরের অন্তত ৩০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সকালে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, ওই হামলা যে ‘আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ অথবা যুব লীগের ক্যাডাররাই’ চালিয়েছে, এটা তাদের কাছে ‘স্পষ্ট’। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
পরে ঢাকায় সচিবালয়ে সেতুমন্ত্রী কাদের সাংবাদিকদের সামনে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন এটা নিয়ে সরকারের ‘কোনো সমস্যা নেই’। বরং তার সফরে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য প্রশাসনকে আগেই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন তারা।
“তারা যদি অধম হয় আমরা উত্তম হব না কেন? আমরা তাকে কেন বাধা দিয়ে খারাপ খবরের শিরোনাম হব।”
কাদের বলেন, “যাত্রাপথে আমরা যদি কোনো বাধা দিই, তাহলে ক্ষতিটা আমাদের। আমরা জেনেশুনে কেন নিজেদের জন্য এ ক্ষতি টেনে আনব? আমরা শান্তিতে দেশ চালাচ্ছি, এরতো কোনো প্রয়োজন নেই।”
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ফেনীতে প্রবেশের আগে চৌদ্দগ্রাম সীমান্তে হঠাৎ করে কিছু মোটরসাইকেল এসে ‘ঢিল মারা থেকে শুরু করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করে; সেখানে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হন।
“আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ কেন সাংবাদিকদের ওপর হামলা করতে যাবে?”
খালেদা জিয়া যেখানে অক্ষত, তার গাড়ি যেখানে অক্ষত, সেখানে সংবাদ শিরোনামে কী করে ‘খালেদার গাড়িবহরে হামলা’ লেখা হল- সে প্রশ্নও তোলেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী।
‘নিজেদের সঙ্গে’ মারামারি করে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপানো বিএনপির ‘পুরানো অভ্যাস’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, “সম্পূর্ণভাবে এটি তাদের নিজেদের সৃষ্টি। নিজেরা নিজেদের উপর হামলা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এত নেতা গেছেন, কারও উপর তো হামলা হয়নি, কেউ তো আহত হননি, তাহলে হামলাটা কেন হয়েছে?
“হামলাটা হয়েছে নিউজ করার জন্য, হামলাটা হয়েছে সাংবাদিকদের গাড়িতে অ্যাটাক করে যেন বড় নিউজ হয়, আওয়ামী লীগকে যাতে দোষ চাপানো যায়।”
ওই হামলার পর ফেনীতে যাত্রাবিরতি করে শনিবার রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি রাতে থাকেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে।
রোববার সড়ক পথে কক্সবাজারে গিয়ে সোমবার উখিয়ার বালুখালী, বোয়ালমারা ও জামতলী রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
খালেদা জিয়া কতটুকু ত্রাণ দেবেন- সে প্রশ্ন তুলে কাদের বলেন, “শত শত টন ত্রাণ সরবরাহের পথ বন্ধ করে তিনি উখিয়ায় নিজে কিছু ত্রাণ দেবেন। এটি কি দায়ত্বশীল আচারণ, তিন দিনের জন্য পথটা রুদ্ধ করে দিলেন।”