দশম সংসদ নির্বাচনের রেশে পরের বছর ২০১৫ সালও বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ ছিল উত্তপ্ত; সেই অবস্থা কাটিয়ে ২০১৬ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরুত্তাপই কেটেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
Published : 31 Dec 2016, 12:10 PM
একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকলেও এই বছরজুড়েই দল গোছানোর চেষ্টা দেখা গেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্মেলন করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আগামী নির্বাচনের জন্য আঁটঘাঁট বেঁধে নামার বার্তাই দিয়েছে।
গত তিন বছর সরকার হটানোর হাঁকডাক দিয়ে আসা বিএনপি এবার সেপথে পা না বাড়িয়ে কাউন্সিল করে আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটই চেয়েছে। তারা বলতে চেয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে।
বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও কাউন্সিল করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছে নেতা-কর্মীদের প্রতি।
গোপনে কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে চাপে থাকার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামী।
বাম দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, সাম্যবাদী দলও সম্মেলন কিংবা কংগ্রেস করেছে।
তবে যে লক্ষ্যে সম্মেলন করেছে দলগুলো, তার ঠিক উল্টোটি ঘটেছে সরকারের শরিক জাসদের ক্ষেত্রে; তাদের ছোটখাটো গোছানো ঘর কাউন্সিলে ভেঙে গেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রে নতুন কমিটির পর সব পর্যায়ে ঘর সামাল দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করতে হচ্ছে।
খুব একটা ভালো খবর নেই আওয়ামী লীগের জন্যও, তাদের কোন্দল নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে; বছরের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে শেষে জেলা পরিষদেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।
নয়া পল্টনে দলীয় এবং গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়কেন্দ্রিক বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি। সংবাদ সম্মেলনে করে প্রতিক্রিয়া জানানোর এই প্রবণতার জন্য ‘বিবৃতিসর্বস্ব দল’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছ থেকে।
চেষ্টা থাকলেও ২০ দলীয় জোটকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি; বরং কয়েকটি দল ভেঙে একাংশ ছুটে গেছে তাদের কাছ থেকে। কাদের সিদ্দিকীর কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ এবং এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা আসি আসি করেও ভেড়েনি জোটে।
সেই সঙ্গে ‘আসল বিএনপি’ নামে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দলকেও মোকাবেলা করতে হয়েছে বিএনপিকে। এসবের পেছনে আওয়ামী ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বিএনপির নেতারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে তাদের ১৪ দলে নতুন দল ভেড়ানোর চেষ্টায় দেখা গেছে। বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নাজমুল হুদাকে জোটে আনার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে তারা।
দুই প্রধান দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়া বছরজুড়েই ছিল।
জামায়াত-সঙ্গ আর জঙ্গিবাদ এবং তারেক রহমানের দণ্ড নিয়ে বিএনপিকে আরও কোনঠাসা করার চেষ্টায় আগের মতোই ছিল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির পাল্টা আক্রমণের বক্তব্য ছিল, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে, দেশকে করে রেখেছে গণতন্ত্রহীন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের বিচারে বিদায়ী বছরের তুলনামূলক নিস্তরঙ্গ রাজনীতিতে খানিকটা ঢেউ তোলার আভাস দেখা গিয়েছিল জিয়াউর রহমানের ভাই আহমেদ কামালের নতুন দল গঠনের তৎপরতায়। কিন্তু তা আর এগোয়নি।
‘আসল বিএনপি’ নামে খালেদা জিয়ার হাত থেকে বিএনপির কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বছরের শুরুতে কামরুল হাসান নাসিম নামে এক ব্যক্তি নামলেও কয়েক মাসেই নিভে যান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দোদুল্যমানতার জন্য আলোচিত এইচ এম এরশাদ তার দল নিয়ে ‘সময় মতো’ সরকার থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তার সেই সময় আর আসেনি গোটা বছরে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসা বিএনপি সরকারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে এই বছরের শেষে এসে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সেঙ্গে আলোচনার ডাক পেয়েছে।
বিএনপির ভাষায় ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ ইসির বিদায়ের পর নতুন যে ইসি গঠনের প্রক্রিয়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শুরু করেছেন, সেই ইসির অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আশাবাদী বিএনপির নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এখন দেখার বিষয় গত নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে থাকে কি না কিংবা তাদের রাখতে পারে কি না আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতায় থাকলে দল সরকারের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়- বাংলাদেশের রাজনীতির এই প্রবণতা গত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল।
তবে আট বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার দলটির সম্মেলনে সেই অচলায়তন ভাঙার প্রয়াস দেখা গেছে। সরকারি দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের রাখা হয়নি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির কাজের পদগুলোতে। আনা হয়েছে নতুন বেশ কয়েকজনকে।
সবচেয়ে বড় চমক ছিল সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে আনা। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আস্থাভাজন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে এই পদে এনেছেন তাকে।
আনুগত্য কিংবা দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যে আগামী নির্বাচনে দলকে চাঙা রাখার উপরই জোর দিয়েছেন, তা স্পষ্ট। কেননা সৈয়দ আশরাফকে দূরের মানুষ ভাবলেও কাদেরকে কাছের মানুষ ভাবেন তূণমূলের অনেক কর্মী।
তাই আশরাফকে ওই পদ থেকে সরতে হয়েছে; যদিও তার প্রতি শেখ হাসিনার আস্থায় যে কোনো ঘাটতি নেই, তা কাউন্সিলের তাদের হাত ধরাধরি করা ছবিই বলে দেয়।
চার বছর পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে গঠিত কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীতে ছয়জন নতুন মুখ। কার্যানির্বাহী সদস্য ২৮ জনের মধ্যে ১৮ জনই নতুন।
৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এ বছর ৩২ জেলায় সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে গেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় কোন্দলের কারণে অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও করতে পারেনি তারা।
জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিকে আক্রমণ করে গেলেও একাত্তরে ভূমিকার জন্য বিতর্কিত দলটির নেতাদের ভেড়ানোর প্রবণতা দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মধ্যে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায় এবং গাইবান্ধায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় দলীয় নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় সমালোচনায় পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।
ইউপি নির্বাচনে কোন্দল থেকে সহিংসতার জন্য সমালোচিত হয়েছে দলটি।
গাইবান্ধার মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানা, কক্সবাজারের আবদুর রহমান বদির মতো কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নেতার বিতর্কিত ভূমিকার দায়ও নিতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কোন্দলের জন্য সংঘাতের জন্যও সমালোচনা পোহাতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।
নাজুক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপি কাউন্সিল করলেও তাতে কোনো ফল এখন পর্যন্ত আসেনি।
কাউন্সিলের পর কয়েক মাস গড়ালেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতাদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। চার মাস পর সেই কমিটি ঘোষণা হলেও দল চাঙা হয়নি।
গত সেপ্টেম্বরে একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিল বিএনপি। পরে সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ালেও কাজ শেষ হয়নি।
এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নানা প্রতিকূলতার ভেতরে দলের পুনর্গঠনের কাজটি করছি। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা, সরকারের প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা এগুতে পারছি না। তারপরও ভেতরে ভেতরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
শাহজাহান দাবি করেন, কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার ফলাফল এই মুহূর্তে ‘কম দৃশ্যমান’ হলেও প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
বিএনপির সাংগঠনিক নাজুক অবস্থার সর্বশেষ প্রকাশ ঘটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। পরাজয়ের কারণ হিসেবে অনেকে নেতা সমন্বয়হীনতা এবং ৬/৭ বছর জেলা-ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো কমিটি না থাকাকে কারণ দেখান।
বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করতে গিয়েও ঝড় সামলাতে হয়েছে বিএনপি। ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ হয়, ভাংচুর হয় জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতিও।
বছরের শেষ দিকে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালীকরণে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
জোটসঙ্গী জামায়াত নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অস্বস্তি বছরজুড়েই ছিল। ঘনিষ্ঠ অনেকের আহ্বান এলেও খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান আগের মতোই।
সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে আবার সরকারে যোগ দিয়ে না ঘরকা-না ঘাটকা অবস্থা এখনও চলছে জাতীয় পার্টিতে। এই বৈপরিত্যের অবসানের কথা দলটির চেয়ারম্যান এরশাদসহ বিভিন্ন নেতা বললেও তা বাস্তবে দেখা যায়নি।
এর মধ্যেই এরশাদ বছরের শুরুতে সম্মেলনের ঘোষণা দিলে তা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় দলের মধ্যে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে ভাই জি এম কাদেরকে আহ্বায়ক এবং এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করলে বেঁকে বসেন সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ রওশন এরশাদ সমর্থকরা।
এরপর এরশাদ ভাই কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে বাবুলরা পাল্টা রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার ঘোষণা দিলে শুরু হয় টানাপড়েন। এই কোন্দলের অবসানে শেষ পর্যায়ে স্ত্রী রওশনকে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান করে পরিস্থিতি সামাল দেন এরশাদ।
তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দৈবত ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েই গেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টি আমরা বুঝি। নির্বাচনের পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে। তবে এ বছর কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে আমরা এই জগদ্দল পাথরকে সরানোর চেষ্টা কিন্তু শুরু করেছি। আশা করি নির্বাচনের আগে তা অনেকটাই প্রশমন হবে।”
আগামী নির্বাচনে এককভাবে লড়াইয়ের কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন এরশাদ। নেতা-কর্মীদের সেজন্য তৈরি থাকতেও বলেন তিনি। তবে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এরশাদের এলাকা রংপুরেও স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থা ছিল হতাশাজনক।
নির্বাচন নিয়ে বাবলা বলেন, “আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে এককভাবে নির্বাচন করার। তবে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, সেক্ষেত্রে কোনো একটা জোটে জাতীয় পার্টি যোগ দিতে পারে। তবে জোটের নেতৃস্থানীয় দলকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে।”
নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষনেতাদের ফাঁসি হলেও রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়নি জামায়াতে ইসলামী।
গোপনীয়তার সঙ্গে নতুন আমির নির্বাচন করেছে দলটি। যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী জেলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পাওয়া মকবুল আহমাদকেই আমির পদে বসানো হয়েছে।
মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে হরতাল ডাকা ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি জামায়াতের।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে থাকা দলগুলোর আলাদা কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এরে মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে চলতে শুরু করেছে।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে আদালতের রায় কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম বছরের শুরুতে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করলেও পরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বছরের শেষে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন লংমার্চের কর্মসূচি দিলেও তা কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।
বরাবর বাম ঐক্যের ডাক দিয়ে এলেও তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি মঠে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে কয়েকটি বাম দল; এর বা্ইরে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভাজন।
১৯৭৫ সালে বিপ্লবের ব্যর্থ চেষ্টার পর ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদ।
বছরের শুরুতে কাউন্সিলের পর থেকে আলাদাভাবে চলতে থাকে মইনউদ্দিন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে জাসদের একটি অংশ।
জোড়া লাগানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইসিতে মশাল প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নামে দুই অংশ। তবে রায় যায় ইনুর পক্ষে। এরপর জাসদের দুই অংশই সমান্তরালভাবে ১৪ দলে সক্রিয় রয়েছে।
রাশেদ খান মেনন নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো সংগঠিত কর্মসূচি চোখে পড়েনি জোটের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাড়া। দীলিপ বড়ুয়া নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল বছরের শেষে এসে কংগ্রেস করেছে।
বছরের শেষ দিকে কংগ্রেস করেছে সিপিবি, তবে মূল নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সৈয়দ জাফর আহমেদ শীর্ষ দুই পদে থেকে গেছেন।
সরকারের বাইরে থাকা বাম দলগুলো বছরজুড়েই রামপালবিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন নিয়ে মাঠে ছিল। তাদের এই আন্দোলনকে কটাক্ষও করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সিপিবি-বাসদের বাইরে থাকা গণসংগতি আন্দোলনসহ তাদের মোর্চার সক্রিয়তা ছিল মূলত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে গণসংহতি আন্দোলন সম্মেলন করেছে।