‘জনপ্রতিনিধিহীন’ সংসদে ইসি গঠনে আইন নয়: কাদের সিদ্দিকী

দশম জাতীয় সংসদকে ‘জনপ্রতিনিধিহীন’ আখ্যায়িত করে এই সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়ন নয়, সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ‘গ্রহণযোগ্য’ ইসি গঠন করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে আহ্বান জানিয়েছে সংসদের বাইরে থাকা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2016, 01:32 PM
Updated : 4 Jan 2017, 12:31 PM

নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের তৃতীয় দিনে বুধবার বঙ্গভবনের দরবার হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ চেয়ারম্যান কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দলের ১২ নেতা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেন।

এতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে নতুন ইসি গঠনে বর্তমান সংসদে আইন প্রণয়নের যে প্রস্তাব দেয় তার বিরোধিতা করেন কাদের সিদ্দিকী।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বঙ্গভবনের গেইটে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার সাথে কথা বলেছি। সংবিধানের ১১৮তম অনুচ্ছেদে যে কথা বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের রাষ্ট্রপতির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি স্বাধীন মুক্তভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেন।”

“মনে হয়, কালকে যারা দেখা করেছেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সংসদের দ্বারা আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা এই সংসদকে জনসমর্থনহীন, জনগণের অনাস্থার সংসদ, যার ১৫৩ জন অনির্বাচিত, বাকীরা সামান্য ভোট পেয়েছেন- এই সংসদের দ্বারা কোনো আইনের প্রয়োজন নেই; আমরা রাষ্ট্রপতিকে এটা বলেছি।”

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

ওই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে একটি গ্রহণযোগ্যযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের নিজেদের ধারণা তুলে ধরেন কাদের সিদ্দিকী।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, মাছ পানিতে থাকে। ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কখনো রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো কথা বলেননি, কখনো আলোচনা করেনি।

“আমরা এও বলেছি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভরশীল। বছরে অন্তত দুইবার মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করুন, ঠিক তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করুন।”

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন কাদের সিদ্দকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা এমএ রশিদ, রফিকুল ইসলাম, আবুল হোসেন মল্লিক, হাবিবুন নবী সোহেল, রিফাতুল ইসলাম, ফরিদ আহমেদ ও মনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন এ বৈঠকে।

বিকাল ৪টায় নেতৃবৃন্দকে কাদের সিদ্দিকী বঙ্গভবনে পৌঁছান। ৪৫ মিনিট সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকের বাইরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

মিয়ানমারের অত্যাচারিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিও রাষ্ট্রপতির আলোচনায় তুলেছেন বলে কাদের সিদ্দিকী জানান।

রাষ্ট্রপতির সংলাপ কেমন হয়েছে প্রশ্ন করা হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “রাষ্ট্রপতি একজন পোঁড় খাওয়া রাজনৈতিক। তার চাল-চলন, কথা-বার্তা-ভাষা সবই রাজনৈতিক। আমরা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার কথা-বার্তায় সন্তুষ্ট।

“রাষ্ট্রপতি এই সংলাপের উদ্যোগ আমার কাছে মনে হয়েছে শতাংশে শত অংশ সততা আছে।”

সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সার্চ কমিটি গঠন করা হবে কি করা হবে না, এটা আমরা বলিনি। কারণ সংবিধানে যেটা বলা আছে- সেটা রাষ্ট্রপতি করতে পারেন।

“এটা সার্চ কমিটি গঠন করে করেন, আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তিনি যদি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে তার বিবেচনাপ্রসূত কিছু করেন, সেটাও আমরা সমর্থন করি।”

এদিকে বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে আট দফা দাবি পেশ করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান তার প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদিন।

প্রস্তাবগুলো হলো- ১. ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষদের নিয়ে মানুষের আস্থাভাজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন। ২. কমিশনের একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত। ৩. প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ইসি গঠনের প্রস্তাব। ৪. বছরে চারবার নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে ইসির আলোচনা হতে হবে। ৫. দলের মতামত না নিয়ে নির্বাচনী বিধি প্রণয়ন বা পরিবর্তন করা যাবে না। ৬. নির্বাচনী প্রচারে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর বিধি-নিষেধ রাখা যাবে না। ৭. বছরে দুইবার প্রধানমন্ত্রী নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত নেবেন। ৮. রাষ্ট্রপতি বছরে একবার নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদের এই সংলাপ শুরু হয়।

প্রথম দফায় গত ১২ ডিসেম্বর পাঁচটি দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায় বঙ্গভবন। তার মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ)  সঙ্গে আলোচনার নতুন তারিখ  ২৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি,  ২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ ন্যশনালিস্ট ফ্রণ্ট (বিএনএফ) এবং একই দিন সাড়ে ৪টায় ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি বিকাল ৪টায়  জাতীয় পার্টি (জেপি), ৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাষ্ট্রপতি।