মহাসচিব হওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অভিনন্দন জানালেও তার নিয়োগ পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন বিএনপি ঘরানার পেশাজীবী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Published : 11 Apr 2016, 07:19 PM
সোমবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার ‘দয়ায়’ মহাসচিব পদে অধিষ্ঠিত মির্জা ফখরুল কতটা কার্যকর হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য এ জাতি দেশ ও আমাদের! একজন রাজনীতিবিদ তার কর্মের যথাযোগ্য সম্মানটা পেলেন না। এক ব্যক্তির দয়াতে তাকে সেক্রেটারি জেনারেল হতে হল।”
গত ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলের ১০ দিন পর মহাসচিব হিসেবে ফখরুলের নাম ঘোষণা করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা। বরাবরের মতো এবারও কাউন্সিলররা তাকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিল।
জাফরুল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়া যদি কাউন্সিলের মতামত নিয়ে মহাসচিব পদে নির্বাচন দিতেন। তাহলে উনি (ফখরুল) নিরাপদে নির্বাচিত হতেন। দুই-চারজন দাঁড়ালেও তার কোনো ক্ষতি হত না।”
এর মধ্য দিয়ে বিএনপিতে গণতন্ত্র চর্চার অভাবের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, সেই গণতন্ত্র পার্টিতে নাই। তার পার্টিতে যদি গণতন্ত্রের প্রচেষ্টা থাকত, উনিই (ফখরুল) নির্বাচিত হতেন।
“উনি যদি নির্বাচিত হতেন, তাহলে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যটাও পূরণ হত। তার (ফখরুল) সাহসটা ভিন্ন হত। উনি (ফখরুল) আওয়াজ করে কথা বলতে পারতেন।”
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও একই রীতির কথা তুলে জাফরুল্লাহ বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের সবার নাম ঠিক করে দিয়েছেন।
“এটা কীভাবে হাসিনা ঠিক করছেন? কোনো গোয়েন্দা সংস্থা... কার পরামর্শ নিয়েছেন তিনি? ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পরামর্শ নিয়েছেন।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফখরুলকে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “এখানে মিটিংয়ে আসার দরকার নেই। আমি মনে করি, উনার একমাত্র কাজ হচ্ছে মাসের ১৫দিন বিভিন্ন জেলায় যাওয়া।
“একেক জায়গায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনবেন।”
মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জন্য স্বতন্ত্র একটি উপদেষ্টা কমিটির প্রস্তাবও বিএনপি দেন পেশাজীবী এই নেতা।
মতিউর-মাহফুজ প্রসঙ্গ
আমার দেশ সংবাদপত্র প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আমার দেশ পরিবার’ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সংবাদপত্রটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের তুলনাও করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
পিকিংপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, “মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমাদের মতি-মাহফুজের তফাৎটা কোথায়? তারা দুজনই সুন্দর চেহারার মানুষ। একজন কমিউনিস্ট পার্টি কইরা বড় হইছে। আরেকজন ছাত্র ইউনিয়ন কইরা বেড়াত, আবার ফর্সা মানুষ, সুন্দর চেহারা। বাপ রাজনীতি করতেন, ভালোভাবে কথা বলতে জানতেন। তারা (মতি-মাহফুজ) একটু করে টোকা দিলেই ছাইড়া দেবেন। তারপরে আর বাড়বে না।”
“আর মাহমুদুর রহমান ইঞ্জিনিয়ার মানুষের অত বুদ্ধি-শুদ্ধি হয় নাই। হাতে হাতুড়ি-বাটাল দিয়া পিটাইলে- সে ওই কথাটাই লিখা দেবেন। এই যে প্রতিবছর ৩২ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়টি তিনি বারে বারে লিখতেন, একবার নয়, প্রতিদিন লিখতেন। মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কী? সে সাধারণ মানুষের কথা লিখেছে।”
প্রকৌশলী থেকে মালিকানা কিনে সংবাদপত্রের মালিক বনে যাওয়া মাহমুদুর রহমানকে ধর্মীয় উসকানি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগেও অসংখ্য মামলা রয়েছে।
বিতর্কিত নানা প্রতিবেদন প্রকাশকারী আমার দেশের প্রকাশনাও সেদিন থেকে বন্ধ রয়েছে।
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা মাহমুদুরের মুক্তির জন্য প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আদালত অবমাননার ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে রেহাই পাওয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
“সুপ্রিম কোর্টের আমাদের সিনহা সাহেব অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলছেন। মাহমুদুর রহমানকে কেন এভাবে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে? উনি (প্রধান বিচারপতি) কি সুয়েমোটো আনতে পারেন না?”
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসঙ্গ
অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “মাদ্রাসায় আরবি, ফার্সি পড়লে হবে না। ফিকহ, হাদিসের সাথে সাথে অংক, ইংরেজি, গ্রামার ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিখতে হবে। এরা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কয়টা লোক ছিল।”
একাত্তরে শান্তি কমিটিতে থাকা অনেকেরও মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনের কথা তুলে ধরে মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ বলেন, “আমাদের নামকরা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, তার পিতা ফয়জুর রহমানকে ৫ মে পাকিস্তানিরা গুলি করে হত্যা করেছিলো।
“অথচ তার নানা, বেলায়েত বোধ হয় নাম, তার মামা নজরুল ইসলামকে ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে মেরেছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে।”
শহীদ ফয়জুরের সন্তানদের প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ বলেন, “তার কবরটাও আমরা যত্ন করে রাখি নাই। অথচ তার ছেলে জাফর ইকবাল সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, নিজের বাবার কবরটার খোঁজও রাখেন না।”