পৌর নির্বাচনের মেয়র পদে বিএনপির পরাজিত দুই শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৩৫ জন জামানত হারিয়েছেন; আওয়ামী লীগের অন্তত দুজন প্রার্থী আছেন এই তালিকায়।
Published : 03 Jan 2016, 10:44 PM
নৌকা প্রতীকের যে দুজন জামানত খুইয়েছেন, সে দুটি পৌরসভা বগুড়ার নন্দিগ্রাম ও পাবনার চাটমোহরে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি ১৮টি দলের অন্তত ২০০ মেয়র প্রার্থী এবং আড়াইশ’ স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রাথমিক ফলাফল বার্তা শিট বিশ্লেষণ করে এই চিত্র দেখা যায়।
এবার পৌর নির্বাচনে অনধিক ২৫ হাজার ভোটার সম্বলিত নির্বচনী এলাকার জন্য ১৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার ১ থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার ১ থেকে ১ লাখ ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখ বা তদুর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছে মেয়র প্রার্থীদের।
একটি পৌরসভার প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের একভাগ ভোট না পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
“এ অর্থ (জামানতের) সরকারি কোষাগারে চলে যাবে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম ।
তিনি জানান, যারা এক-অষ্টমাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে জামানতের অর্থ ফেরত পাবেন।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় এই নির্বাচনে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ২২৭টির ফল ঘোষণা হয়েছে। মেয়র পদে ১৭৭টিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে, বিএনপির বিজয়ী মেয়র হলেন ২২ জন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আর কেবল জাতীয় পার্টির একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যে ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তার ১৮ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
অন্তত ২০০ পৌরসভায় ভোটের দিন এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছে বিএনপি। জাতীয় পার্টিও এ ভোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ক্ষমতাসীন দল ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোটে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দলই এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০ দলের সাড়ে ৬ শতাধিক প্রার্থী অংশ নিলেও প্রধান দুই দলের বাইরে বাকি প্রায় সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৮৫ জন অংশ নিলেও জিতেছেন ২৬ জন।
কাজীপুরে ধানের শীষের ভোট ৮৪
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিএনপির ৩৫ জন মেয়র প্রার্থী ন্যূনতম ভোট না পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করে এক হাজারের কম ভোট পেয়েছেন অন্তত ২৯ জন প্রার্থী। দলটির তিন প্রার্থীর ভোট সংখ্যা একশরও কম।
একটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী সর্বনিম্ন ৮৪ ভোট পেয়েছেন। এক হাজারের চেয়ে বেশি ও দুই হাজারের কম ভোট পেয়েছেন এমন পৌরসভার সংখ্যা ১৮টি।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পৌরসভায় বিএনপির মাসুদ রায়হান ৮৪ ভোট পেয়েছেন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের মো. নিজাম উদ্দীন ৭ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে জিতেছেন।
বিএনপি প্রার্থীর জামানত হারানো ৩৫টি পৌরসভার মধ্যে ৩৪টিতেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। একটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নড়াইলের কালিয়া পৌরসভায় বিএনপির স ম ওয়াহিদুজ্জামান মিলু ধানের শীষ প্রতীকে ২৬১ ভোট পেয়েছেন। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফকির মুশফিকুর রহমান ৩ হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান (হীরা) পেয়েছেন ১ হাজার ৭৫৪ ভোট।
যেসব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ভোলা (১৭২৭ ভোট), দৌলতখান (৬৭৯ ভোট), বোরহানউদ্দিন (৬৪৩ ভোট), গৌরনদী (৭৭৬ ভোট), বানাড়ীপাড়া (৪৪৩ ভোট), মুলাদী (৫৯৬ ভোট), মেহেন্দিগঞ্জ (১৪৮৬ ভোট), বাকেরগঞ্জ (১৭৭ ভোট), কুয়াকাটা (৩১৪ ভোট), নলছিটি (৬২৬ ভোট), মিরশ্বরাই (৪৭৫ ভোট), সন্দ্বীপ (৪৬৪ ভোট), বারইয়ার হাট (২৩৮ ভোট), চৌদ্দগ্রাম (৩১২ ভোট), মহেশপুর (৫৬১ ভোট), দেওয়ানগঞ্জ (৫৮৫ ভোট), ভেড়ামারা (৭২৮ ভোট), রায়পুর (৬৯০ ভোট), রামগতি (৯১৬ ভোট), গফরাগাঁও (৫৮৯ ভোট), হাতিয়া (৩৭৬ ভোট), কেশরহাট ৯৯ ভোট, বদরগঞ্জ (৫৫৪ ভোট), গোয়ালন্দ (২২০ ভোট), মাদারীপুর (৩৩৬ ভোট), জাজিরা (২০৮ ভোট), করিমগঞ্জ (৪৬৩ ভোট), রাউজান (২১২০ ভোট), সাতকানিয়া (২২৮৯ ভোট), চান্দিনা (২৩৫৭ ভোট), কচুয়া (১৪৭৫ ভোট) ও ঈশ্বরগঞ্জ (১৪৮২ ভোট)।
২ পৌরসভায় নৌকার ভোট ১ হাজারের কম
নৌকার জয়জয়কারের মধ্যেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। নন্দিগ্রাম ও চাটমোহর এই দুটি পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা এক হাজারের কম ভোট পেয়েছেন।
নন্দীগ্রামে ৫ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মো. রফিকুল ইসলাম পিংকু ৬৯০টি ভোট পেয়েছেন। এ পৌরসভায় ১৩ হাজার ৮৪২ ভোটের মধ্যে ১২ হাজার ২৮৫টি পড়েছে।
এখানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল হাসান সিদ্দিকী ৪ হাজার ৪৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী সুশান্ত কুমার সরকার পান ৪ হাজার ৩৫৬ ভোট।
চাটমোহরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন ৭৫৬ ভোট পেয়ে জামানত হারান। এখানে ১০ হাজার ৮৫৯ ভোটের মধ্যে ৮ হাজার ৫৯৭টি ভোট পড়েছে।
এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মির্জা রেজাউল করিম দুলাল ৩ হাজার ৫৩৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী আবদুর রহিম ১ হাজার ২২১ ভোট পান।