পৌর নির্বাচনে অভিযোগের বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলের জন্য ‘দ্বৈতনীতি’ অনুসরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
Published : 22 Dec 2015, 08:48 PM
মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করে বলেন, “গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একজন নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে যে, তিনি পক্ষপাতিত্ব করছেন। সাথে সাথে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
“অন্যদিকে ২৩৪টি উপজেলার যেখানে বিরোধী দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেখানে হাজারো অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষ রিটার্নিং অফিসারের কাছে করা হয়েছে। ওইসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের (রিটার্নিং অফিসার) কাছে কোনো প্রতিকার নেই। ওই একটা শো-কজ টো-কজের মধ্যে তারা সীমাবদ্ধ। শো-কজ যেন এখন প্রেমপত্রে পরিণত হয়েছে।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য বিএনপি মঙ্গলবার দুপুরে দাবি জানানোর পর সন্ধ্যায় তা নাকচ করে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে আবারও সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, “আমি আবারও জোরালভাবে দাবি জানাচ্ছি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে হলে অবিলম্বে এই সহিংসতা ও তাণ্ডব থেকে মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে, অভয় দান করতে হলে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিতে হবে।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন পৌরসভায় দলের প্রচারে বাধাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী ময়মনসিংহের গফরগাঁও, কুমিল্লার চান্দিনা, ঝিনাইদহের শৈলাকুপা ও হরিণাকুণ্ডু, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা, নরসিংদীর মাধবদি, টাঙ্গাইলের মধুপুর, মাগুরা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকার সাভার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, রংপুর, যশোর, মেহেরপুর, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা প্রভৃতি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে বাধা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলার নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “কলাপাড়া ও কুয়াকাটা পৌরসভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীরা প্রচার চালাতে গেলে তাদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা চালায়। এতে ৫০ জন আহত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে এই হামলা হলেও কোনো কার্য্কর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরকম ঘটনা প্রতিদিন বিভিন্ন পৌরসভায় ঘটছে।”
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী সভায় সংঘর্ষ হলেও উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে- এ অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীনরা নিজেরা সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে দোষ চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর।”
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন সত্তা দান করলেও বর্তমান আজ্ঞাবহ কমিশন নিজেদের স্বাধীনতা বিক্রি করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের আগ্রাসনের কাছে।
“অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা অবস্থা সামলাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তা চাওয়া কমিশনের আত্মবিলুপ্তির আরেক নির্দশন। এটি যেন হরিণের নিরাপত্তার জন্য বাঘের কাছে সহায়তা চাওয়া।”
এবার স্বল্প সময়ে দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন করতে গিয়ে ‘চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়েছে ইসি। প্রচারের শুরু থেকেই মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গের খবরে সমালোচনা হচ্ছে নানা মহলে।
বিধিভঙ্গের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনুরোধ করছি, সরকারে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। যদিও নির্বাচন কমিশন আলাদা, তারপরও সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন করছি আমরা। তাই সরকারের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সেই কারণে যিনি সরকারপ্রধান, তাকেও বলব বিষয়টি দেখার জন্য।”
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, আগামী পৌর নির্বাচন নিয়ে আপনাদের এখন পর্যন্ত গৃহীত কোনো পদক্ষেপই মানুষের কাছে আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। … এখনও সময় আছে স্বাধীন সত্তা অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করুন।”
ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। … তাদেরকে আটকিয়ে রাখা, আড়াল করা, ভোটকেন্দ্রে সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়ার মধ্যে রহস্য আছে বলে আমি মনে করি।”
এসময় সারা দেশে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর পাশে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।