মিয়ানমারের গোলা: সরকারের ‘কোমর সোজা’ দেখছেন না ফখরুল

“দমন-নিপীড়ন করে দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না,” বলেছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2022, 03:55 PM
Updated : 18 Sept 2022, 03:55 PM

বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের একের পর এক গোলা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও সরকার কড়া প্রতিবাদ করতে পারছে না বলে মনে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 তিনি বলেছেন, “মিয়ানমার বোমা মেরে শেষ করে দিচ্ছে। তারা সীমান্তে বোমা মারছে, আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তারা গুলি করছে। সরকার নীরব। নীরব কেন? আসলে এদের (সরকার) কোমর সোজা নাই। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদ করতে পারছে না, বিশ্ব জনমতকে একখানে আনতে পারছে না।”

ঢাকার পল্লবীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি এবং আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে রোববার বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

দমন-নিপীড়ন করে দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে বিভিন্ন জায়গায় আপনারা (ক্ষমতাসীনরা) সন্ত্রাস করছেন এবং সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছেন না।…এভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, নিপীড়ন-দমন করে বাংলাদেশের মানুষ কখনও দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পরাজিত করা হবে।”

সরকার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে আমাদের সাধারণ মানু্ষের চাল-ডাল-তেলের দাম কমানোর জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে ভোটের অধিকারকে রক্ষার করার জন্য; তখন এই আওয়ামী লীগের সরকার তারা তাদের পেটোয়া বাহিনী… নামিয়ে দিয়েছে।”

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতা রাখছিলেন মির্জা ফখরুল।

“ওরা হত্যা করেছে ভোলা ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে ও নারায়গঞ্জে যুবদলের নেতাকে। গতকাল আপনারা দেখেছেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানকে আহত করেছে, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুকে আঘাত করেছে, আমাদের নারী নেত্রীদেরও তারা রেহাই দেয়নি, তাদেরও তারা আঘাত করেছে।

“আজকে এই সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে; তখন তারা সন্ত্রাস, হত্যা, সভা পণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সোজা হয়, সহজ হয়।”

Also Read: মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবিতেই আস্থা রাখছে সরকার

রাজধানীতে দলের চলমান কর্মসূচির সময়ে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “এখনও সময় আছে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন পার্লামেন্ট ও সরকার তৈরি করতে হবে।”

সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এই কথা বললে তাদের গায়ে আগুন লাগে, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বলে আমরা তো এই সমস্তের মধ্যে নাই। কিছু দিন আগে গুমের কথা বলা হলো, তারা বললো- গুম হয় না। এটা নাকি তারা নিজেরা নিজেরা গুম হয়ে যায় অথবা ভূমধ্যসাগরে পানির নিচে গিয়ে ডুবে মরে।

 “জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ঢাকায় এসে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এখানে গুম হচ্ছে, এখানে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”

জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জের দলের তিন নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীতে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। সন্ধ্যায় বনানীর কাকলীতে এই কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে হামলায় আহত হন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তাবিথ আউয়ালসহ কয়েকজন।

পল্টনের সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “মোমবাতি প্রজ্বালনে নীরব কর্মসূচিও সরকারের সহ্য হল না। তাহলে কী দাঁড়াল? এদেশের মানুষ কথা বলতে পারবে না। আপনারা নিপীড়ন নির্যাতন করে যাবেন আর আমরা সহ্য করতে থাকব।

“আমি বলতে চাই, এটা আর হবে না। যথেষ্ট হয়েছে। সারাদেশের জনগণ আজকে ফুঁসে উঠেছে, সারা বাংলাদেশের জনগণ আজ রাজপথে নেমে এসেছে।”

সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার পাশাপাশি সরকার বাধা দিচ্ছেও বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব (উত্তর) আমিনুল হক ও সদস্য সচিব (দক্ষিণ) রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মশিউর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল।