উপমহাদেশে ভাসানীর মতো দ্বিতীয় নেতা নেই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আবুল মকসুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মওলানা ভাসানীকে নিয়ে তার লেখা বই নিয়ে হল আলোচনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
Published : 23 Feb 2023, 01:01 PM
Updated : 23 Feb 2023, 01:01 PM

রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়ে’ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী উপমহাদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক  সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “এই উপমহাদেশে অনেক নেতা এসেছেন, কিন্তু মওলানা ভাসানীর মতো আর দ্বিতীয় কাউকে পাইনি, যিনি মেহনতি মুক্তির জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন। তিনি সামাজিক বিপ্লব করতেন। রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিপ্লব করেছেন।”

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে সৈয়দ আবুল মকসুদের বই ‘ভাসানীচরিত : পাঠ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

লেখক-সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মওলানার সংস্কৃতি চর্চার দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যে সম্মেলন করতেন, সেখানেই সাংস্কৃতিক চর্চা করতেন। সংস্কৃতির মান উন্নয়ন করা, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত করা, কলেজ প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি তার চিন্তায় সবসময় কাজ করত। কৃষকের সমস্যা যে রাজনৈতিক সমস্যা, গণতন্ত্রের সংগ্রাম আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম যে একই সংগ্রাম তা তিনিই বলেছেন।

“তিনি ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু জিন্নাহর পাকিস্তান আর তার পাকিস্তান এক নয়। তার পাকিস্তান ছিল মেহনতি মানুষের পাকিস্তান। মওলানার এরকম সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরিচয় পেতে হলে আমাদের জন্য সৈয়দ আবুল মকসুদের এই বইটি অনেক সহায়ক হবে।”

বইটির উপর আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশে যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, সেই মানুষরাও তাদের নিয়ে করা গবেষণা সম্পর্কে জানে না। সৈয়দ আবুল মকসুদ মওলানা ভাসানীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। ভাসানীকে নিয়ে গবেষণা করলে সেখানে পুরো বাংলাদেশকে নিয়ে আসা হয়, কারণ বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক লড়াই, বিভিন্ন ধরনের সংকট সেই সব জায়গায় মওলানা ভাসানী রয়েছেন। 

“শ্রেণির চেহারাকে শক্তিশালী করা এটা মওলানা ভাসানীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এখন যেটি রাজনীতিতে খুব অবহেলিত, খুবই প্রান্তিক অবস্থানে। বাংলাদেশে যে একচেটিয়া লুণ্ঠন, ক্ষমতা এসবের পেছনে এই শ্রেণির প্রশ্নকে প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। ভাসানীর চিন্তায় কে হিন্দু, কে মুসলমান বা কার ধর্ম কি এসবের দিকে মনোযোগ দিতেন না। ভাসানীর রাজনীতিতে জাতি-ধর্মের কোনো স্থান ছিল না, তিনি দেখতেন কে নিপীড়িত।”

বর্তমান সময়ে ভাসানীকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এখন সবকিছু এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তি এককভাবে উঠতে পারে না, তার পাশে আরও অনেক লোক লাগে, যাদের মধ্যে মাওলানা ভাসানী অন্যতম।

“মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন আহমেদের যে ভূমিকা সেটিও উপস্থাপিত হয় না। সরকার দলের কোনো উদযাপনে তাদের অবদান তুলে ধরা হয় না। ইতিহাস এভাবে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে, ইতিহাসকে এভাবে অপমান করলে সেই রাষ্ট্রের উন্নতির পথে এটি সবচেয়ে বড় বাধা হবে।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সৈয়দ আবুল মকসুদের যতটা মূল্য পাওয়ার কথা ছিল, ততটা মূল্য পাননি তিনি৷ বর্তমান সময়েও এমন যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয় না।

“মাওলানা ভাসানী বর্তমান সময়ের বইগুলোতে যথার্থভাবে উঠে আসেনি। বইগুলোতে যথার্থভাবে স্থান পাননি ভাসানী। আমরা যার সাথে একমত হই সে ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় আর যার সাথে আমি একমত নই তিনিই ইতিহাসের অংশ হবে না। ইতিহাস বিকৃতির এটাই সবচেয়ে বড় কারণ।”

অনুষ্ঠানে সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর বিভিন্ন সম্পর্ক ও নানা বিষয়ে মতের মিল তুলে ধরেন প্রাবন্ধিক, গবেষক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান।