“১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না,” গণভবনকে জাদুঘর করা প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
Published : 10 Sep 2024, 11:33 PM
বাংলাদেশের বিদ্যমান জাতীয় সংগীতের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ।
এ অবস্থানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, “আমি তিনটা কারণে বলেছি- এই জাতীয় সংগীত গ্রহণযোগ্য না। এক নাম্বার হলো, এটা যখন বানিয়েছিলো তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে- এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। সুতরাং বাংলাদেশকে নিইয়া এই গানটা রচিত হয় নাই।
“দুই নাম্বার হলো, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এই গানটা রচনা করে নাই। তিন নাম্বার হলো এই গানটাতে সুরটা নকল করা হয়েছে। সুতরাং এই ধরনের বিভ্রান্তিকর জিনিসগুলো নিয়ে যদি হয় এই জাতীয় সংগীত, তাহলে এটা আমাদের সমগ্র জাতির জন্য অপমানজনক।”
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জাতীয় সংগীত নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রোববার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, “আযমী জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত। সুতরাং তার বক্তব্যকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই।”
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া অলি আহমদ বলেন, “একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে- জাতীয় সঙ্গীত একটি বিতর্কিত বিষয়। সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না।
‘‘তার (উপদেষ্টার) জানা উচিত, জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম এবং তাদের অগ্রাধিকার করণীয় নিয়ে মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয়।
‘গণভবনে কেন জাদুঘর?’
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘‘গণভবন কারো বাপের ভবন না, বরং একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের গর্ব। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে প্রশ্ন হল গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন?
“১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না। আন্দোলনকারী আমাদের ছেলেমেয়েদের বা জনতার সরলতাকে পুঁজি করে কোনো অন্যায় পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। এদেশে একনায়কত্ব স্বৈরাশাসন কায়েমকারী, গণহত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, টাকা লুণ্ঠনকারী, চাঁদাবাজ এবং জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নাই। এই দেশ এখন কারো বাপের সম্পত্তি না।”
‘চাঁদাবাজ রুখতে হবে’
অলি আহমদ বলেন, ‘‘চাঁদাবাজরা বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, পুলিশ নিষ্ক্রিয়।
‘‘আমি বলব গণমাধ্যমকে, আপনারা এখন স্বাধীন, উন্মুক্ত। আপনারা চাঁদাবাজদের- লেখনির মাধ্যমে জনগণের সামনে নিয়ে আসেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করেন… সরকারকে সাহায্য করেন।”
তিনি বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই কঠিন কাজ। তবে পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে, তা নাহলে গণহত্যাকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।”
প্রশাসনে ‘শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা-বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে’ মন্তব্য করে জরুরি ভিত্তিতে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান অলি।
তিনি বলেন, ‘‘গুম, খুন, দুর্নীতি, টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের সকলকে আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা খুবই জরুরি।”
অলি আহমদ বলেন, ‘‘দুর্নীতিবাজ একজন ব্যক্তি এখনো পর্যন্ত দেশের ১ নম্বর আসনে বসে আছেন। এটার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নাই।
‘‘সংবিধানের দোহাই দিয়ে, যারা তাকে এই আসনে বসিয়ে রেখেছে, তারা পক্ষান্তরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করছে না।”
‘সরকারের কাজে দ্রুত গতি চাই’
অলি আহমদ বলেন, ‘‘অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সকল কর্মকাণ্ডগুলো স্বচ্ছতা ও সততার সাথে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন না হলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অনেকগুলো নিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হুজুগের মাথায় লোক দেখানো কাজ করলে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অধিকতর সতর্কতার সাথে মনোনয়ন বা নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
‘‘এছাড়াও উপদেষ্টা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে অথর্ব, অকর্মণ্য, ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে।”
আক্ষেপের সুরে অলি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে বৈঠকে মোট ৮৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে- সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যঞ্জক।”
নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে বলেন তিনি।
ভারত প্রসঙ্গ
অলি আহমদ বলেন, ‘‘পতিত হাসিনার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার স্বার্থে দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না।
‘‘উভয় দেশের সম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ভারত মনে করে, তারা আমাদের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। তাদের আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমরাই বরং তাদের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছি। তারা আমাদেরকে ঘিরে রাখেনি, আমরা তাদেরকে তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছি।”
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। ভারত থেকে কিছু ইউটিউবার মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে প্রতিনিয়ত।
‘‘বাংলাদেশে মেজরিটি বা মাইনরিটি বলতে কিছুই নেই। সকলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, আওরঙ্গজেব বেলাল, হামিদুর রহমান খান, সৈয়দ খাইরুল কবির পাঠান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।