“সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলে আপনারা এই সরকারকে এই দেশকে অস্থিতিশীল করবেন এটা হতে দেওয়া যাবে না”, বলেন তিনি।
Published : 01 Dec 2024, 06:20 PM
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে যে ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদেরকে ‘শায়েস্তা’ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বলেছেন, যদি সেই ব্যবস্থা সরকার না করে তাহলে এই ব্যবসায়ীরা ‘গণপিটুনিতে’ পড়ে যাবে।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম, গতকাল কতগুলো সম্পাদক-সাংবাদিকদের একটা সভা হয়েছে। ওখানে দেখলাম যারা শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২ আগস্ট যে ব্যবসায়ীরা মিটিং করেছিলেন, কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে চাই, সকল সময় চাই, বিপদেও চাই, আপদেও চাই আবার অসম্ভব হলেও তোমাকে আমি চাই’, আরেকজন বলেছিলেন, ‘আপনার সঙ্গে ছিলাম, থাকব, মৃত্যুর পরেও থাকব’, এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে এই দেশটা নিরাপদ নয়।”
‘ওদেরকে শায়েস্তা করার মত ব্যবস্থা আমাদের সরকারকে করতে হবে’ বলে মন্তব্য করে আব্বাস বলেন, “যদি না করে এরা কিন্তু ‘গণপিটুনিতে’ পড়ে যাবে যে কোনো সময়ে।”
শনিবারের একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেখেন না, গতকাল হাসপাতালে গিয়ে কে যেন একজন মাইর খাইল, এ রকম কিন্তু হয়ে যেতে পারে।
“আমি বলছি না, মারবে। কিন্তু গণরোষ বলে একটা কথা আছে, এই গণরোষ থেকে কেউ আপনারা বাঁচতে পারবেন না।”
এই ব্যবসায়ীদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সতর্ক করে আব্বাস বলেন, “আমি প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাব, আপনি দয়া করে যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘ভালো’ ব্যবসায়ী আছে, যাদের ব্যাংকের টাকা লুট করার মত বদনাম নেই, তাদেরকে ডাকেন… তাদেরকে মাল (পণ্য) আমদানি করতে বলেন, তাদেরকে ব্যবসা করার সুযোগ দেন। নইলে কিন্তু এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা (শেখ হাসিনার সমর্থক) আপনাদের ফাঁদে ফেলে দেবে।
“আপনাদের সবার খেয়াল থাকার কথা… কিছু কিছু ‘সিন্ডিকেট’ ছিল, এই ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা’ এই সরকারকে বিপদে ফেলে দেবে। তারা যথাসময়ে মালামাল ইমপোর্ট করবে না, দোহাই দেবে যে, ‘ডলার নাই, এটা নাই, সেটা নাই’।”
‘এত লম্বা কথা বলার সাহস কী করে পায়?’
একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ না করে মির্জা আব্বাস বলেন, “উনি একটা সংবাদপত্রেরও মালিক, একটা চ্যানেলও মালিক। উনারা এখনও এত ‘লম্বা কথা; বলার সাহস কী করে পায়?
“যারা শেখ হাসিনাকে ‘আজীবন’ রাখতে গিয়েছে, অসম্ভবকে সম্ভব করে রাখতে গিয়েছে তারা কি অন্তর্বর্তী সরকারের লোক? তারা বিএনপির পক্ষের লোক? তারা দেশের পক্ষে লোক? কখনই না?”
ওই ব্যবসায়ী ‘সাংবাদিকদের নিয়ে একসঙ্গে হয়েছে, এটা ‘ভালো লক্ষণ নয়’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলে আপনারা এই সরকারকে এই দেশকে অস্থিতিশীল করবেন এটা হতে দেওয়া যাবে না।”
‘ভারতে বসে ষড়যন্ত্রের কলকাঠি’
শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে ‘সাম্প্রদায়িক দেশ’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস।
স্কুলে হিন্দু-মুসলমানরা পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছেন, হিন্দু বন্ধুরা পূজায় নাড়ু পাঠাত, ঈদের সময় বাসায় আসত, তারাও আপ্যায়ন করতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এদের একটা অসৎ উদ্দেশ্য আছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক গন্ডগোল লাগানোর জন্য।
“এদের ইন্ধন যোগাচ্ছে? এই যে আমাদের এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া পলাতক ‘খুনি’ শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, তিনি গিয়ে ওখান থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। সারা বিশ্বের কেউ যখন তাকে জায়গা দেয় না, আজকে ভারত হাসিনার ‘দালালি’ কেন করছে, কোন অধিকারে কীভাবে ‘দালালি’ করছে এটা আমার প্রশ্ন থেকে গেল?”
ইসকনের বাংলাদেশের শাখার সব সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “আপনারা ইসকন মন্দিরে গিয়ে দেখবেন ওদের যে চিফ, উনি বাংলাদেশি নন, ওদের ডেপুটি চিফ, উনিও বাংলাদেশি নন, আরও যারা আছে, এরা অনেকেই বাংলাদেশি নন।”
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নুরুল ইসলাম মনি, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ঢাকা মহানগর আরিফা সুলতানা রুমাও বক্তব্য রাখেন।