“কার কানাডায় বাড়ি আছে, বেগম পাড়ায় বাড়ি আছে, কে টাকা পাচার করেছে, কে কালোবাজারি করেছে, সবার নাম প্রকাশ করা হোক”, বলেন তারানা।
Published : 05 Jun 2024, 11:37 PM
জাতীয় সংসদে অর্থপাচার ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘বাধার মুখে’ পড়লেন সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তারানা হালিম।
বুধবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বক্তব্য দিতে শুরু করলে কথা শেষ হওয়ার আগেই ফ্লোর চান চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। তাকে ফ্লোরও দেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
নূর-ই-আলম চৌধুরী ফ্লোর নিয়ে বলেন, “আলোচনাটা কীসের উপর হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আপনি কীসের উপর আলোচনা..এটা কি সাধারণ আলোচনা? এটা কি বাজেট অধিবেশন আলোচনা?
“পয়েন্ট অব অর্ডার হলে এটা কীসের উপর পয়েন্ট অব অর্ডার, সেটা থাকতে হবে, সেটার সময় থাকবে। আপনি পয়েন্ট অব অর্ডারে যদি একজনকে আধাঘণ্টা সময় দেন, তাহলে তো সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি, নীতিমালা কোনোটাই মানা হচ্ছে না। পয়েন্ট অব অর্ডারে অবশ্যই বলতে হবে কী পয়েন্টের উপর, সেটা সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।”
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে উদ্দেশ করে চিফ হুইপ বলেন, “আপনি তো সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। এটা কোন ধারায় বলতেছে? এখানে অনেক এমপি বসে আছেন, তাদের মূল্যবান সময় আছে। কিন্তু আপনি তো পয়েন্ট অব অর্ডারে সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন “
পরে ডেপুটি স্পিকার বলেন, “চিফ হুইপ সঠিক কথা বলেছেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে আমাদের আইন আছে, কার্যপ্রণালি বিধি আছে। অভিজ্ঞ সদস্য আছেন, তাদের সেই অনুযায়ী কথা বলার দরকার।”
পয়েন্ট অব অর্ডারে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি।
কী বলেছিলেন তারানা
এর আগে তারানা হালিম তার বলেন, “যানবাহনে সিন্ডিকেট, রাস্তাঘাটে সিন্ডিকেট, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সিন্ডিকেট। অমুক খানে সিন্ডিকেট, চালের গুদামে সিন্ডিকেট, বস্ত্র বিতরণে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কারা? আমরা জানতে চাই, নাম প্রকাশ করা হোক। আমরা জানতে চাই পানামা পেপারসে, প্যারাডাইস পেপারে কাদের নাম আছে।”
বাংলা নাটকে এক সময়ের প্রতিষ্ঠিত তারকা তারানা এবার টানা তৃতীয়বারের মতো সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের পর তাকে প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পরে সরকারের শেষ বছরে তিনি হন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি।
তারানা বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। তার কন্যার (বঙ্গবন্ধুর) আওয়ামী লীগ করি, তাই আমরা চাই না একটি, দুটি, তিনটি লোকের জন্য আমাদের মত যারা তাদের সমস্ত জীবন সততার শপথ বাক্য রক্ষার জন্য ব্যয় করেছেন, তাদের গায়ে একটি ফোঁটা কালি লাগুক।
“আমি আহ্বান করব, সবার নাম প্রকাশ করা হোক এই সংসদে। কার কানাডায় বাড়ি আছে, বেগম পাড়ায় বাড়ি আছে, কে টাকা পাচার করেছে, কে কালোবাজারি করেছে, সবার নাম প্রকাশ করা হোক।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে টাকা পাচার রোধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন শাখের করাত কাটে, তখন এদিকেও কাটে, ওইদিকেও কাটে।
“চোর ধরলে বলে, কে ধরেছে? মানে সব চোর। চোর না ধরলে বলে, কেন ধরে নাই। সব দোষ তাদের।”
দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় সরকারের প্রশংসা করার জন্য বিরোধীদের অনুরোধ জানান তারানা। বলেন, “আমরা শুরু করেছি। এটার শেষ করেই ছাড়ব।”
এই সংসদের মধ্যে যারা সিন্ডিকেটের মধ্যে পড়েন, তাদেরকে আত্মসমালোচনা করে আত্মশুদ্ধি করার অনুরোধও করেন তারানা। বলেন, “আর যারা সিন্ডিকেটের মধ্যে না পড়েন, অনুগ্রহ করে সাধারণ জনগণ যেন কখনো সবাইকে এক রঙে রঞ্জিত না করে। অনেক সৎ মানুষ আছেন, যারা তাদের সততার জন্য আজকে প্রতিষ্ঠিত এবং এখানে আছেন।”
বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সৈনিক হয়ে থাকলে ‘একটি টাকা ঘুষ খাওয়ার সময় বুক চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা’ বলেও মন্তব্য করেন তারানা।
এর আগে সংসদে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে নিয়ে কথা বলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
তারানা বলেন, “যার কথা বলা হল এতক্ষণ, তার মন খারাপ হলে ১০টা বাড়ি কিনেছেন। আমাদের মন খারাপ হলে আমরা বড়জোর দুই/একটা শাড়ি কিনতে পারি। ওনার মন খারাপ হল অনেক বড় বড় কিছু কিনতে পারেন।”