"৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে এই সর্বাত্মক অবরোধ পালন করা হবে,” ঘোষণায় বলেন রিজভী।
Published : 29 Oct 2023, 06:03 PM
হরতালের পর নতুন কর্মসূচি হিসেবে তিন দিনের অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি; আগামী মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশজুড়ে 'সর্বাত্মক অবরোধ' পালন করবে সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনে থাকা দলটি।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে রোববার সন্ধ্যায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, "৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে এই সর্বাত্মক অবরোধ পালন করা হবে।”
অনলাইন মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে অবরোধ দেওয়ার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের 'হত্যা', বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
তার অভিযোগ, ‘‘ দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থপাচার ও সিন্ডিকেটবাজির ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা করা হয়।"
এ হামলার প্রতিবাদসহ সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী গত কয়েকদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, গ্রেপ্তার ও আহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরেন।
শনিবার নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশি হামলায় পণ্ড করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছিলেন। হরতালের দিন সকালে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের খোঁজেও পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নেতাদের বাসাবাড়িতে যান।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শাহজাহানপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা, বনানীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায়, মোহাম্মদপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় এবং গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালান। কিন্তু তাদের কাউকে গোয়েন্দারা পাননি।
দলের মহাসচিবকে আটকের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘‘আজ সকালে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসার চারপাশ পুলিশ ঘিরে রেখেছে এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এর বাসায় ডিবি পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এর বাসায়ও তল্লাশি চালায় পুলিশ।
‘‘সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার আপন ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়ীর ড্রাইভার রাজিবকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।”
মহাসমাবেশের দিন নয়াপল্টনে ‘পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ হামলায় যুবদল নেতা শামীম মোল্লা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বলে দাবি তার।
রিজভীর অভিযোগ, ‘‘সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিন দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে আদাবর থানার সাবেক যুবদল নেতা বর্তমানে আদাবর থানাধীন ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আবদুর রশিদকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ-আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করার পর একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা করে।
‘‘গতকাল (শনিবার) ফরিদপুর জেলাধীন নগরকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশির নামে ভাংচুর চালায় এবং পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শনের সময় তার স্ত্রী রেঞ্জুয়ারা বেগম ভয় পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।”
তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিনের একাংশের সদস্য ও সচিত্র স্বদেশের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক রফিক ভুঁইয়ার মৃত্যুর ঘট্নায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তার অভিযোগ, “গতকাল (শনিবার) বিএনপির সমাবেশে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (রোববার) মৃত্যুবরণ করেন।”
রিজভীর ভাষ্য, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে কেন্দ্র করে মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৯৬০ জনের অধিক, মামলা হয়েছে ২০টি, আহতের সংখ্যা তিন হাজারের অধিক এবং একজন সাংবাদিকসহ মারা গেছেন চারজন।
এছাড়া মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত পাঁচদিনে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৬৪০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং ‘মিথ্যা মামলা’ হয়েছে ৪৫টি বলে দাবি তার।
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন উপস্থিত ছিলেন।