“এই সংসদে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশকে বৈষম্যমুক্ত করা যাবে না। কাজেই সেটা আমাদের প্রত্যাশা যে, এটা আনুপাতিক হবে।”
Published : 24 Dec 2024, 05:59 PM
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ‘ভুল ছিল’ মন্তব্য করে দলটির মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, ওই ভুল সংশোধনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল দ্বাদশের ভোটে অংশগ্রহণের সময় কোনো সমঝোতা না করা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় দলের মুখপাত্র হিসেবে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। উপলব্ধি ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্পধারার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে না পারলে আমি মনে করি বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারা প্রাসঙ্গিকতা হারাবে।”
মাহী বলেন, “২০১৮ সালে দলীয় আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত দল নিয়েছিল, তা বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
“আমি উপলব্ধি করি, এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আমার এবং বিকল্পধারার ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।”
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ছিল আমাদের ২০১৮ সালের ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সংশোধনের প্রথম পদক্ষেপ। বিকল্পধারা বাংলাদেশ ছিল ২০২৪ এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একমাত্র দল, যারা শাসকদল তথা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার চেষ্টা করেনি।”
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক আগামী নির্বাচন নিয়ে বিকল্পধারার ভাবনা জানতে চাইলে মাহী বি চৌধুরী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে রাজনীতিতে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চাইলে প্রথমে বৈষম্যমুক্ত করতে হবে সংসদকে।
“এই সংসদে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশকে বৈষম্যমুক্ত করা যাবে না। কাজেই সেটা আমাদের প্রত্যাশা যে, এটা আনুপাতিক হবে।”
তিনি বলেন, “আসলে এখন আমি ব্যক্তিগত মতামত দিতে পারব। কারণ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে বিকল্পধারা জেনারেল-২ তার যাত্রা শুরু করবে।
“সেই যাত্রায় আমার এককভাবে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নাই। সেখানে আমার অবস্থান থাকবে কিনা, সেটাও আমি এখন জানি না। সুতরাং নির্বাচন সম্পর্কে এটা আমার দলীয় বক্তব্য নয় “
বারিধারায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর প্রয়াত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবন ‘মায়া-বি’তে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের ৯ দফা নির্দেশনা তুলে ধরেন দলের মুখপাত্র।
মাহী বি চৌধুরী বলেন, “মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে ১৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক বি চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল মান্নান ও আমাকে ডেকে কেমন বিকল্পধারা দেখতে চেয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন।
“তিনি বিকল্পধারার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি তার শেষ ৯ দফা নির্দেশনা দেন। আমরা অধ্যাপক বি চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্প রাজনীতির যে বীজ বপন করেছি, ২০২৫ থেকে ২০৪৫ বিকল্পধারা জেনারেল-২ সে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটাবে, আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই।”
বি চৌধুরীর ৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্রজন্ম পরিবর্তন (প্রতি ২০ বছর পর গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন এনে আনুষ্ঠানিকভাবে পরের প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারার দায়িত্ব হস্তান্তর); দলীয় কাঠামো (সিঙ্গেল ইউনিট পার্টি, সমন্বিত ও যৌথ নেতৃত্ব, কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠন) গড়ে তোলা; রাজপথে ন্যূনতম দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা; সকল পর্যায়ে এবং সকল ক্ষেত্রে বিকল্পধারার রাজনৈতিক ভাষা (অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিময় ও সম্মানজনক), অহিংস ও রক্তপাতহীন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।
নিজস্ব উপার্জিত অর্থে দল পরিচালনা; রাজনৈতিক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে পেশীশক্তি অথবা ক্ষমতা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, দলের যেকোনো পদ বা পর্যায়ের নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্ধারণ এবং পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কোনো সুযোগ না রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
গত ৫ অক্টোবর বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা যান।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বি চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বিএনপির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে বি চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে ২০০৪ সালের ৮ মে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা বিকল্পধারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলে জানান মাহী বি চৌধুরী।