“এত বিরোধিতা, ষড়যন্ত্রের মধ্যেও শেখ হাসিনা নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বাস্তবে বজায় রেখেছেন। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আমরা সেটাই দেখলাম।”
Published : 10 May 2024, 08:13 PM
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়লেও ভোটের হার নিয়ে ভাবতে চান না আওয়ামী লীগ সধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বরং ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতে চান।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ও কিছু সাম্প্রদায়িক দলের ভোট বর্জনের মধ্যে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, সেখানে আমি একটা কথা বলতে চাই- বিএনপি সরকারের সময়ে কোনো স্থানীয় নির্বাচন এত শান্তিপূর্ণ হয়েছিল?”
দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ।
সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১% এর বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১% এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯% ভোট পড়ে। এই হিসেবে দেড় দশকের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার এবারই সবচেয়ে কম।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ভোটের হার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যারই পুনরাবৃত্তি শোনা যায় তার মুখে। তারও যুক্তি, ধান কাটার মৌসুম, ঝড়-বৃষ্টির কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।
বিএনপির ভোট বর্জনকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে কাদের বলেন, “এত চক্রান্তের মধ্যেও ৪২ শতাংশ ভোটার টার্ন আউট। আপনারা (বিএনপি), আপনাদের সমমনারা ভোটে আসেননি। তাহলে এত ভোটার কীভাবে এল?”
তবে অনেক এলাকায় যে ভোটের হার একেবারেই কম, সে কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জে ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ। কিন্তু কোথাও কোথাও একেবারেই স্বাভাবিক না, একটু কমই পড়েছে।”
তারপরও শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “এত বিরোধিতা, ষড়যন্ত্রের মধ্যেও শেখ হাসিনা নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বাস্তবে বজায় রেখেছেন। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আমরা সেটাই দেখলাম।”
‘ডাবল শিক্ষা’
ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্য, রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারায় ফিরে না আসায় বিএনপি ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে যাচ্ছে।তার মতে, ভোটারদের ‘ভয় পায়’ বলেই নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি।
আন্দোলন ও নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থতার পর বিএনপি আবারও ‘আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা’ করছে বলে অভিযোগ করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের।
বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “নৈরাজ্য করবে? (বিএনপি) একবার তো একটা শিক্ষা পেয়েছে, এবার ডাবল শিক্ষা পাবে। আমরা বসে নেই, সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছি। সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।”
তবে ‘ডাবল শিক্ষা’ বলতে কী বুঝিয়েছেন, সে ব্যাখ্যা দেননি কাদের।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোনো সংঘাতে আমরা জড়াব না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব। বাংলাদেশের যে গণতন্ত্র, যিনি গণতন্ত্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করেছেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যার অবদান; তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই গণতন্ত্রকে বাচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।”
শনিবার ঢাকার নয়া পল্টনে যুবদলের সমাবেশ রয়েছে। একই দিনে বেলা সাড়ে ৩টায় মোহাম্মদপুরে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সমাবেশ আমরা করব, কারণ বিএনপির সমাবেশ মানেই অগ্নিসন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা, রক্তপাত। বিএনপির কাছে গোটা রাজধানীকে যদি তাদের ওপর ছেড়ে দিই, তাহলে জনগণের জান-মাল সুরক্ষায় সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আমাদের থাকতে হয়।”
তবে পাল্টাপাল্টি সমাবেশে এ পর্যন্ত কোনো মারামারি, সংঘর্ষ হয়নি বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমরা নাম দিয়েছি শান্তি সমাবেশ, আমরা সেভাবেই শুরু ও শেষ করেছি। আমরা যদি মাঠে না থাকি, তাহলে অতীতের অভিজ্ঞতা বলে বিএনপির সমাবেশ মানেই নৈরাজ্য, পুলিশ হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হাসপাতালে হামলা। এটা ২৮ অক্টোবর লক্ষ্য করেছি। আন্দোলন করেছে- আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আর সেদিন দেখলাম, কত যে দ্রুত মঞ্চ থেকে নেমে অলিগলি খুঁজে পাচ্ছিল না; পালাচ্ছিল। পালায় বিএনপি।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৭ সালে ‘মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন’ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সে নেতার আজও দেশে ফেরার সৎ সাহস হয়নি। যে নেতার নির্দেশে বিএনপি চলে, সেটা ‘রিমোট লিডারশিপ’। নেতৃত্ব যদি দেশে না থাকে, সে আন্দোলন কোনো দিন সফল হয় না। আন্দোলনে ব্যর্থ হলে নির্বাচনেও ব্যর্থ হয়।”
“পার্শ্ববর্তী দেশকে খুশি করতে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না ভারত,”- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “ভারতের দয়ায় ক্ষমতায় বসিনি। ইলেকশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কিছু কিছু দেশ যে ভূমিকা নিয়েছিল, ভারত কিন্তু একেবারেই কথা বলেনি, একেবারেই নিরপেক্ষ ছিল। নিজের দেশকে খাটো করা, এটা গয়েশ্বরদেরই দিয়েই সম্ভব।”
পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাদের বলেন, “ভারতের দয়ায় টিকে থাকব, সরে যাব! পঁচাত্তরের পর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম? তখন কি ভারত আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল?
“কতবছর পর এসে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি দেশের জনগণের ইচ্ছায়, কোনো বিদেশি শক্তির ইচ্ছেয় নয়।”
কর্মসূচি
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ‘স্বদেশ প্রর্ত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আগামী ১৭ মে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা না এলে দেশে গণতন্ত্র থাকত না, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বিপন্ন হত। যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হত না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল হত না। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি হত না। স্যাটেলাইট মহাকাশে পৌঁছে গেছে- এটা শেখ হাসিনার সরকার এবং তার সন্তানের সাফল্য।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ছয় বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদেরের দাবি, চলমান ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির চাপ, অনিশ্চয়তার মুখেও স্থিতিশীলতা দেখিয়ে সম্প্রসারণের পথে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘অনেকটা সফল’ দাবি করে তিনি বলেছেন, আইএমএফের আরও সহযোগিতা পাওয়ার মত ‘শক্ত অবস্থানে’ আছে দেশের অর্থনীতি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, আইনবিষয়ক সম্পাদক নাজিবুল্লাহ হিরু যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন।