“আমরা জনগণের কাছে যাব, তাদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে (সংস্কার) বাস্তবায়ন করব,” বলেন তিনি।
Published : 18 Jan 2025, 09:28 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন থাকার কারণেই বিএনপি ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে’ নির্বাচনের দাবি তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এক আলোচনায় তিনি বলেন, “সংস্কারে সমর্থন আছে; এজন্যই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছি। আমরা জনগণের কাছে যাব, তাদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে (সংস্কার) বাস্তবায়ন করব।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শিরোনামে সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অধিবেশনে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল।
বেশ কিছুদিন থেকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
এদিন সিম্পোজিয়ামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে জাহেদ নামের একজন জানতে চান, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করাটা সম্ভব কি না।
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল। এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কিছু বলব না।’’
মির্জা ফখরুল মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার চাওয়াটা কঠিন। নির্বাচিত সরকার সংস্কারটি করতে পারবে, কারণ তার ম্যান্ডেট থাকবে।’’
জুলাই-অগাস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “আন্দোলনটা হয়ে গেল অভ্যুত্থান। কারণ মানুষ একটা পরিবর্তন চায়; বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চায়। এই চাওয়াটা রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন ছাড়া সম্ভব নয়।
‘‘আমরা সংস্কার দুভাবে দেখি; রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। আমরা রাজনৈতিক সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। এজন্য রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার কথা বলেছি।”
তিনি বলেন, “সংস্কার করতে দুই বছর আগেই ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি রাষ্ট্র মেরামতে। সেখানে বিস্তৃত করে বলা আছে, আমরা কীভাবে কী করতে চাই।”
জাতীয় সংসদ নিয়ে বিএনপির মনোভাব তুলে ধরতে গিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, “আমরা দুই কক্ষের পার্লামেন্ট করতে চাই। আমাদের যা ইচ্ছা, যারা নির্বাচন করেন না, দেশে অবদান রাখতে পারেন, তাদের আপার হাউসে নিয়ে আসব। এটা আমরা এখনো চূড়ান্ত করিনি, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই করব।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছি। কেউ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের পরে একটা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদেরসহ সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছি।’’
টেকনাফ থেকে আসা আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না। চীন ও ভারতের সঙ্গে যেভাবে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল, তারা তা করেনি।’’
১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান ও ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রত্যেকবারই আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে আলাপ-আলোচনা করেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেব।’’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা চাপে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক সরকার চাইলেও সব কাজ করতে পারে না। এখন তো সেই চাপ অনেকটাই মুক্ত।’’