আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। না হলে জনগণের কাতারে চলে যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 03:15 PM
Updated : 6 Jan 2023, 03:15 PM

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে ‘অনেক’ এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; বলেছেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা।

তিনি বলেছেন, “জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে, যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাব।”

টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের চার বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে তার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বিস্তারিত খতিয়ান দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুসঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।”

কীভাবে হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট গভার্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্যি, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। তার সরকার ইতোমধ্যে সকল ক্ষেত্রে গবেষণার উপরও জোর দিচ্ছে।

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এদেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।”

বিচারের ভার আপনাদের

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে টানা এতদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড কারও নেই।

ভাষণের শুরুতেই সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে আমি দেশবাসী এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আপনাদের খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৩-এর শুভেচ্ছা জানাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ এ দেশের ‘মহৎ এবং বৃহৎ সব অর্জন’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।

“গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।”

টানা ১৪ বছর সরকারে থেকে আওয়ামী লীগ দেশকে কী দিতে পেরেছে, সেই বিচারের ভার দেশের মানুষের ওপর ছেড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন।”

সতর্কবার্তা

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কোনো ধরনের ‘মিথ্যাচার আর অপপ্রচারে’ বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে তিনি বলেন, “এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠির সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা।

“এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোন উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন যোগাবেন না।”

প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা

দেড় দশক আগে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে দেশ কীভাবে একটি সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের কব্জায় পড়েছিল, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কীভাবে অনিশ্চয়তায় পড়েছিল, সেই ইতিহাসও ভাষণে মনে করিয়ে দেন সে সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, “মেয়াদ শেষে (বিএনপি) নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে ছয়ই জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

“এমনি এক অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে।”

তবে শেষ পর্যন্ত সেই ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার ছবিসহ একটি ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক’ হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। সেজন্য সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তিনি তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

“কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।”

কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” 

আগামীতে সুযোগ পেলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণ শেষ করেন সুকান্তের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে।

তিনি বলেন, “যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।”