“নতুন আইনের পরিবর্তনগুলো শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ জমির উপর গড়া মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।”
Published : 06 Apr 2025, 04:56 PM
আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক ‘সম্প্রীতি বজায় রাখতে’ সংশোধিত ওয়াকফ আইন ভারত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলের তরফে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের ভূমিকাকে সমুন্নত রেখে এই আইনটি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে- আমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
“আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।”
রোববার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আইনটির বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি যে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার খর্ব করা এবং বৈষ্যমমূলক আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে এই আইনে। ভারতের মুসলমানরা এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ‘মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধন) বিল-২০২৪’ অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।”
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো সংগঠনগুলোর মতে এই আইন ইসলামী ওয়াকফ ব্যবস্থার মূল চেতনার পরিপন্থি। তাদের মতে, ওয়াকফ বোর্ডের পরিচালনায় মুসলমানদের দ্বারাই হওয়া উচিত। তারা একে মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল বলে অভিমত দিয়েছেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ভারতের জনসংখ্যার ১৪% অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতি ও স্বার্থবিরোধী এই আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে- যা ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
‘‘ভারতে ওয়াকফ বোর্ডগুলোর অধীনে প্রায় ১০ লক্ষ একর সম্পত্তির মধ্যে অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণ মূলক কাজে। নতুন আইনে পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন সালাহউদ্দিন। তার দুই মাস বাদে নিজেকে ভারতের শিলংয়ে আবিষ্কার করা এ বিএনপি নেতা পটপরিবর্তনের পর দেশে ফেরেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘ভারতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এই জাতীয় বোর্ডে অথবা কোনো আইনি সংগঠনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে এই আইনটি একটি বৈষম্যমূলক আইন হিসাবে বিবেচিত হবে।
“নতুন আইনের পরিবর্তনগুলো শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ জমির উপর গড়া মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।”
তিনি বলেন, ‘‘নতুন আইনে অমুসলিম সদস্যদের এই সম্পত্তিসমূহের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যে এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে তা মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।