“তারাই তাদেরকে (সেনাবাহিনী) বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 22 May 2024, 04:49 PM
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় সরকারকেই দায়ী করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, “সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করার জন্য এই ঘটনাটা ঘটেছে।”
বুধবার বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘‘দেখুন কত বড় লজ্জার কথা। সাবেক সেনাপ্রধানকে আমেরিকা থেকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, শেইম।
“এ জন্য তারাই (সরকার) দায়। তারাই তাদেরকে (সেনাবাহিনী) বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে।”
সরকারকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া, ‘জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া’ কোনো বিকল্প নাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটাই একমাত্র পথ।”
আগের দিন আজিজ আহমেদ ও তার স্বজনদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:
অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে'পরিণতি'মেনে নেব:জেনারেল আজিজ
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।”
আজিজ আহমেদ এর জবাবে বলেছেন, “আমার সেই ভাই, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিদেশে। নিশ্চয় সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গিয়েছে। সেখানে তার দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি, এই অভিযোগ আমি মেনে নিতে পারি না। এটা সঠিক নয়।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে একটা সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে আমি ঘুষ নিয়েছি, আমি দুর্নীতি করেছি। আমি ৪ বছর ডিজি বিজিবি থাকাকালে কিংবা তিন বছর সেনাপ্রধান থাকাকালে আমি আমার কোনো ভাইকে বা কোনো আত্মীয়কে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি- এমন যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি যে কোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।”
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় আজিজ আহমেদকে নিয়ে প্রচার করা প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকবার বলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় থেকে, বিশেষ করে বাইরের মিডিয়া থেকে। কিন্তু সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, এখনো যেটা বলছে যে, এটা নাকি রাজনৈতিক কথাবার্তা। এভাবে দেশকে একটা জাতিকে তার মর্যাদা থেকে ধ্বংস করে দেওয়া, তার সম্মানকে কেড়ে নেওয়া, এটার অধিকার কারও নেই।”
সেনাবাহিনীকে ‘সবচেয়ে ভরসার স্থল’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “সেই সেনাবাহিনীকে যদি সরকারের কারণে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, সেটা কখনই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।”
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘তারা (সরকার) তো কোনো শিক্ষা নিলেন না। তাদের থেকে একজন পুলিশ বাহিনীর আইজি হয়ে গেলেন। এখন বোধহয় আইজি আছেন। এটার কতটুকু ইমপ্যাক্ট পড়ে, এ ব্যাপারে আমার ধারণা নাই।”
সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে’ বলেও অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা বলেন, “আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সূচকে যে অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, দুর্নীতির ব্যাপারে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক। দেশের মাথা নীচু হয়ে আসে।”
গোটা জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, দেশ পরনির্ভরশীল ও নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে- এমন অভিযোগও আনেন ফখরুল। বলেন, “ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে গোটা জাতির ওপর যে ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাদের ব্যর্থতার কারণে, মানুষ যাবে কোথায়?”
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘এই ইলেকশন নিয়ে আমি তো জনগণের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। কেউ লক্ষ্যও করছে না কোথাও ইলেকশন হচ্ছে।”
সংসদ সদস্য আনার প্রসঙ্গে
ভারতে গিয়ে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের নিখোঁজ হওয়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে তার খুন হওয়ার তথ্য প্রকাশ নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের তথাকথিত একজন সংসদ সদস্য বিদেশে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তার কোনো খবর দিতে পারলেন না তারা। না পারল বাংলাদেশ সরকার, না পারল তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। তাহলে আমরা কী মনে করব?
“দুর্নীতি করা, বিদেশের মাটিতে টাকার পাহাড় তৈরি করা, এটাই ঘটনা কিনা আমরা জানি না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনির গাড়িতে এবং সেগুনবাগিচায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণের ওপরে হামলার নিন্দাও জানান বিএনপি মহাসচিব। দুটি ঘটনাতেই ছাত্রলীগকে দায়ী করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপুসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: