রোড মার্চে দিনাজপুর অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চ

রংপুর ও দিনাজপুরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বুধবার এই রোড মার্চ শেষ হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 07:48 AM
Updated : 4 June 2023, 07:48 AM

সরকারের পদত্যাগ ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৪ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকার বাইরে প্রথম কোনো কর্মসূচিতে দিনাজপুর অভিমুখে রোড মার্চ শুরু করেছে।

ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এই রোড মার্চ শুরু হয় বলে জানান গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক।

তিনি বলেন, “এখান (প্রেস ক্লাব) থেকে আমরা মৎস্যভবন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে রোড মার্চ করে গাড়িতে উঠব। গাজীপুরে আমাদের পরবর্তী সমাবেশ। এরপর থেকে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি আছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই রোড মার্চ সম্পন্ন করতে চাই।

রোড মার্চের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করব, সরকার, সরকারি দল, প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহিংসতা, কোনো ধরনের উসকানি দেওয়া হবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের দাবি, আন্দোলনের দাবি, মানুষের রক্ষা করবার যে দাবি, সেই দাবিতে আমরা আমাদের রোড মার্চ শেষ করতে চাই।

“৭ তারিখ রংপুরের সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোড মার্চ সমাপ্ত হবে এবং সেখান থেকে আমরা আন্দোলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

সকালে প্রেস ক্লাব থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মিছিল নিয়ে মৎস্যভবন মোড়ে যান। সেখান থেকে তারা সাত-আটটি মাইক্রোবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

রোড মার্চে সাইফুল হক ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ শহিদুল ইসলাম বাবুল, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সম্বয়নকারী হাসনাত কাইয়ুম রয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে গত ডিসেম্বর থেকে গণতন্ত্র মঞ্চ গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করে আসছে। ঢাকার বাইরে এটি তাদের প্রথম কর্মসূচি।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, প্রথম দিন ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর চৌরাস্তায় সমাবেশ হবে। এরপর বিকাল ৪টায় টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া বাইপাস মোড়ে সমাবেশ করবেন তারা।

দ্বিতীয় দিন সোমবার বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জে শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তি সোপানে এবং বিকাল ৪টায় হবে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় সমাবেশ হবে।

তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায়, বিকাল ৪টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে, শেষ দিন বুধবার সকাল ১১টায় দিনাজপুরে ইন্সটিটিউট চত্বরে এবং বিকাল ৪টায় রংপুর টাউন হল প্রাঙ্গণে সমাবেশে মধ্য দিয়ে চারদিনের রোড মার্চের শেষ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সকালে কর্মসূচি শুরুর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, “আজকে আমরা যখন রোড মার্চ করছি, আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে, পথে পথে…. যেখানে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিতে আসবেন না। কিন্তু ইতোমধ্যে জেনেছি, টাঙ্গাইলে তারা (সরকারি দল) আমাদের সমাবেশ স্থলে শান্তি সমাবেশ ঘোষণা করেছেন এবং পুলিশ এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য কোনো সমাবেশ স্থান নির্ধারণ করেনি।

“আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এক মুখে বলবেন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন, আরেক মুখে বিরোধীদল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে, জনগণের সামনে তার রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরবে, সেখানে শান্তি সমাবেশের নামে এই কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছেন… এই দ্বিচারিতা জনগণ আর মানবে না, এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, অবিলম্বে এই সমস্ত হামলা ও বাধা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা থেকে আপনারা বিরত থাকুন।”

‘ভিসা নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তার ‘ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক।

তিনি বলেন, “গতকাল (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তার এই বক্তব্যে রাগ-ক্ষোভ-অভিমানের একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতদিন ধরে সরকার বলে আসছিল, বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নাকি এই ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।

“গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে যে, আজকে তারা (সরকার) যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরেকটা দখলদারিত্ব, আরেকটা তামাশা নির্বাচন, আরেকটা একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা বুঝতে পেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই তারা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি জারি করেছে।

“সরকারের থলের বিড়াল ইতোমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে। এভাবে সরকার বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে যেয়ে তারা দেশ ও জনগণকে বাজি ধরছে। এই ধরনের দায়িত্বহীন ও গণবিরোধী সরকার জনগণ মেনে নিতে পারে না।”

ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের ম্যুরালে অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনও বাংলাদেশ সরকারকে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি, কোনো নিন্দা জানাতে দেখিনি। ভারতের এই তৎপরতা এই অঞ্চলের দেশগুলোর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তার সরাসরি বিরুদ্ধে একটা উসকানি, অস্থিতিশীলতা, একটা সাম্প্রদায়িক বার্তা তৈরি করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, “গতকাল আওয়ামী লীগের নেতাদের যুক্তিতর্ক প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আমেরিকা যাওয়ার দরকার নাই, আমেরিকা ছাড়া নাকি পৃথিবীতে আরো দেশ আছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে কী বোঝা গেল?

“প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসানীতি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ন্যক্কারজনক সবচেয়ে কলঙ্কজনক যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের প্রেক্ষিতে নিয়েছে। এটা খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন।’’

তিনি বলেন, “এই ভিসানীতি বাংলাদেশের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এই সরকার সারা বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা হেট করেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করে। ২০২৩ সালেও নাকি তারা এই ধরনের নির্বাচন করতে যাচ্ছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসানীতি দিলো।”