একসঙ্গে গণভবনে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের

সংসদীয় গণতন্ত্রে ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা’ পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2022, 02:34 PM
Updated : 13 Dec 2022, 02:34 PM

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তার দেবর, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেদের দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে দেখা করে এলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে।

মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে এ সাক্ষাতের সময় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, "আজ দুপুরে গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এ সময় জাতীয় পার্টির পক্ষে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, এমপি; বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ, এমপি উপস্থিত ছিলেন।"

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং কুশল বিনিময় করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর যে কোনো দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলসমূহের দায়িত্বশীল ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন।

“জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। যার সুফল বাংলাদেশের জনগণ ভোগ করছে এবং দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর এবং জাতীয় পার্টি এ লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে।” 

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে রওশনের সঙ্গে দেবর কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় দুজনের।

তারপর কাদের দলের চেয়ারম্যান হন, আর রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তিন বছর পর থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের নামে গত ৩০ অগাস্ট আকস্মিকভাবে দলের কাউন্সিল ডাকা হয়। এর পাল্টায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে সেপ্টেম্বরের শুরুতে চিঠি দেন স্পিকারকে।

দলে বিবাদের মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কোনো কারণ উল্লেখ না করে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে দলের সভাপতিমণ্ডলীসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাতীয় পার্টি।

প্রায় দুই মাস পার হলেও জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার প্রশ্নে স্পিকারের কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ৩০ অক্টোবর দলটি সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্ত জানায়।

বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত তারা সংসদে যোগ দেবেন না বললেও অবশ্য পরদিনই সংসদ অধিবেশনে তাদের দেখা যায়।

দীর্ঘ পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে নভেম্বরের শেষে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন রওশান এরশাদ। সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন, দ্বন্দ্ব দূর করতে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

এরপর ২৯ নভেম্বর জি এম কাদের ওয়েস্টিনে গেলে লম্বা সময় বৈঠক হয় দেবর-ভাবির।

ভুল বোঝাবুঝির ‘অবসানের’ ইংগিত দিয়ে পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু সেদিন বলেছিলেন, “তারা এক টেবিলে রাস্তা করেছেন।… অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। এরপর আশা করা যায়, দলের মধ্যে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যাবে।”

মাঝে কোনো অনুষ্ঠানে তাদের একসঙ্গে দেখা না গেলেও মঙ্গলবার তারা আবার একসঙ্গে গণভবনে গেলেন।

জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেলা ১১টায় গণভবনে যান। তারা বিকাল ৩টায় ফিরে আসেন।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যানের মধ্যে কী কথা হল জানতে চাইলে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনারা গণভবনে গিয়েছেন। তবে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কথা হয়নি।”