“সরকার এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে রাজনৈতিক কোনো পক্ষের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব তৈরি না হয়।”
Published : 20 Mar 2025, 10:07 PM
অন্তর্বর্তী সরকার যদি কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি পক্ষপাত করে, তাহলে ‘দেশ বিপদে পড়বে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মোটেল সৈকতে গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় গণতান্ত্রিক উত্তরণ পর্বের জন্য আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্যে আসা দরকার। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে এই রাজনৈতিক উত্তরণ সকলকে একসাথে নিয়ে করতে হবে।
“সরকার এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে রাজনৈতিক কোনো পক্ষের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব তৈরি না হয়। যদি আপনারা পক্ষপাতিত্ব করেন তাহলে এই দেশ বিপদের মধ্যে পড়বে।”
আগামী জাতীয় সংসদকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, “এর অর্থ হচ্ছে আগামী সংসদ একদিকে যেমন সরকার গঠন করবে, তেমনি সংবিধানকে এরকম তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে সংস্কার করার জনগণের ম্যান্ডেট অর্জন করবে।
“যেটা ভবিষ্যতে আমাদের আদালত রক্ষা করবে। এই পয়েন্টে এসে জাতীয় ঐক্য তৈরি হওয়া সম্ভব।”
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শাসন ব্যবস্থা বদলানোর যে প্রশ্ন, সংস্কারের যে প্রশ্ন সেটা একটা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটা কারো একক দাবি নয়। এবং অভুত্থ্যান যেমন কারো একক নয় তেমনি এই স্বপ্ন, আশাটাও কারো একক নয়। অভুত্থ্যান এদেশের জনগণ করেছে।
“ছাত্রদের যে কোটাবিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনের উপরে অত্যাচার, তা দ্রুত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। সমস্ত রাজনৈতিক দল শ্রেণিপেশার মানুষ, সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ, সিভিল সোসাইটি সবাই শেষ পর্যন্ত এমনকি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের সাথে একসাথে হয়েছে। এবং এই সবকিছু মিলে অভুত্থান হয়েছে।”
জোনায়েদ সাকি বলেন, “আজকে সংস্কারের দাবি, পরিবর্তনের দাবি, নতুন বন্দোবস্তের দাবি, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবি এটা যেমন জাতীয় দাবি। তেমনি অভুত্থানটাও কিন্তু জাতীয়। সবাই মিলে। কাজেই এই যে সবাই মিলে ব্যাপারটা, এটাকে আমাদের রক্ষা করা দরকার।
“এখন যদি কোনো একটা দল বা একটা পক্ষ পুরো এটার কর্তৃত্ব নিতে যায়, তাহলে আমরা বিপদে পড়ব। আমাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হবে। এবং সেই বিরোধ এমন এক খাদ তৈরি করতে পারে, যে খাদে পুরো জিনিসটা এসে পড়তে পারে।”
তিনি বলেন, “কাজেই আমাদের সর্বোচ্চ অর্জনের চেষ্টা যেমন করতে হবে। কিন্তু ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য যেটা গড়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য সেটাকেও রক্ষা করতে হবে।
“এ দুটোর ভারসাম্য যদি এখন আমরা তৈরি করতে না পারি, আমরা কিন্তু বিপদের মধ্যে পড়ব। খেয়াল রাখবেন ১৯৭১ সালের পরে ৭২ সাল এসেছে, ৭২ সাল বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিগঠনের সময় ছিল। এবং সেই সময়ে একটি দল সমস্ত আন্দোলন, যুদ্ধের কৃতিত্ব পকেটে ঢোকানোর জন্য জনগণকে অস্বীকার করার ফলে আমাদের রাষ্ট্রটা গণতান্ত্রিক না হয়ে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, “আজকেও কেউ যদি সমস্ত কৃতিত্ব একা নিতে চান, তাহলে সেটা বিপদজনক জায়গায় গিয়ে ঠেকবে, যে আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় এমনকি অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার মধ্যে আমরা আছি।
“আমরা কেন সংবিধান সংস্কার পরিষদের কথা বলছি। এই যে সংবিধান নতুন করে লেখার প্রস্তাব হচ্ছে, সংস্কারের প্রস্তাব আছে, সংশোধনেরও প্রস্তাব আছে। সরকার কিন্তু নিজে সংস্কারের প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে এবং সংবিধান সংস্কারের কমিশন গঠন করেছে।”
জোনায়েদ সাকি বলেন, “কাজেই প্রস্তাব এখন যেহেতু সংস্কারের ভিত্তিতে আছে, তাহলে আমরা কিন্তু সংবিধানটা সংস্কার করতে যাচ্ছি। নতুন সংবিধান করার প্রশ্নটি একটি প্রস্তাব। কিন্তু এই প্রস্তাবে যদি জনসমর্থন তৈরি হয়, কেউ যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তাহলে নিশ্চয় নতুন সংবিধান হবে।
“আমাদের দল কিন্তু নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদের দাবিতে আন্দোলন করেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেহেতু আমরা জাতীয় ঐকমত্যের জায়গায় দাঁড়াতে চাইছি, সেজন্য আমরা বলেছি সরকার যেহেতু ইতিমধ্যে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। তার মানে বিদ্যমান সংবিধানের একটা তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার হবে। এবং তাতে ন্যূনতম যে ঐকমত্য হবে, সেটাই জাতীয় সনদ আকারে আমরা সামনে আনব। এবং সেই সংস্কারগুলো সম্পন্ন করব।”
সংবিধান সংস্কার একটি সংশোধনীর মাধ্যমে হবে কিনা সে প্রশ্ন তুলে জোনায়েদ সাকি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী হয়েছে, সেটা বাতিল হয়ে গেছে আদালতের রায়ে। তারপর পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছে। এখন আবার পঞ্চদশ সংশোধনীও বাতিল হয়ে গেছে আদালতের রায়ে।
“আমরা যদি কেবলমাত্র একটা অষ্টাদশ সংশোধনী করে সংবিধান বদলাই, তাহলে ভবিষ্যতেও কোনো আদালত এসে আবার এটা বাতিল করে দিতে পারে। কিন্তু এই যে সংস্কার হতে যাচ্ছে সেটা তো আদালতের সুরক্ষা দেওয়ার কথা। কারণ এই সংস্কার হচ্ছে জনগণের অভিপ্রায় আকারে।”
তিনি বলেন, “গণপরিষদের মানে কী? জনগণ ম্যান্ডেট দিচ্ছে একটা নতুন সংবিধান লেখার জন্য। সংবিধার সংস্কার পরিষদ মানেও তাই। জনগণ ম্যান্ডেট দিচ্ছে এই সংসদকে সে যাতে সংবিধানটাকে সংস্কার করতে পারে। ফলে যা কিছু সংস্কার করা হবে সেটা হবে জনগণের অভিপ্রায় আকারে। এবং সেই সংস্কারকৃত সংবিধানকে আদালত সুরক্ষা দিবে। আদালত তাকে প্রশ্ন করবে না।”
‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক এ আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী।