“আমাদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, সেই চেষ্টাগুলো যে তারা করছে- আপনারা সকলে তা টের পাচ্ছেন,” বলেন তিনি।
Published : 06 Dec 2024, 03:42 PM
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে ‘বিদেশি প্রভুদের নিয়ে পতিত স্বৈরাচার’ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, “আজকে আমরা দেখছি- ষড়যন্ত্র চলছে। আগের যে সরকার- স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট চিহ্নিতরা এই ষড়যন্ত্র করছে…আমাদের এখানে হিন্দু সম্প্রদায়…তারা কি শুধু গত তিন মাস যাবৎ বসবাস করে? যারা আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশে বাস করেছে।
“আজকে ভারত থেকে শুরু করে আমাদের এখানের কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক কেন এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে? সারা বিশ্বে বাংলাদেশের বদনাম করছে, আমাদের মানহানি করছে? এর একটাই উদ্দেশ্যে- এখানে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে করে ব্যর্থ হয়, সেজন্য যত রকমের সমস্যা তারা করছে- তারা করবে।”
স্বৈরাচার এরশাদ পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। দিনটিকে স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘আমরা যারা জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দেশাত্মবোধে বিশ্বাসী, আমরা যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নতি দিকে যেতে চাই- তাদেরকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
‘‘এই ঐক্যের জন্য আমরা এর আগেও আহ্বান জানিয়েছি; বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাদেরকে সমর্থন দিয়ে এসেছি যে, আজকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে।”
‘ষড়যন্ত্র করে সফল হবে না’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘এদেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে লাভ হবে না। এদেশের মানুষের পরিচয় বাংলাদেশি…অতএব সকলে আমরা বাংলাদেশি…শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই জাতিসত্তার পরিচয় দিয়ে গেছেন।
‘‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, এখানে ১৮ কোটি মানুষ- কেউ বলে ২০ কোটি মানুষ। যেটাই হোক, ১৮ কোটি মানুষ যদি ধরি- তারা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, যে দেশই হোক না কেন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তারা সফল হতে পারবে না। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবে।”
তিনি বলেন, “স্বৈরাচার এরশাদ পতনের দিনে আমরা দেশের জনগণকে আহ্বান জানাতে চাই, দল-মত-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের দেশকে রক্ষা করা, দেশকে আমরা উন্নতি পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা এক থাকব। যারা যত চেষ্টা করুক- কেউ পারবে না আমাদের ক্ষতি করতে।”
হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “যারা আমাদের বিরুদ্ধে, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ষড়যন্ত্র করছে…অনেক দুঃসাহস দেখাচ্ছে…আমরা বলছি, এটা আপনাদের দুঃসাহস।
‘‘এদের মানুষ প্রমাণ করেছে- তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারে, সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ভোটের মাধ্যমে না পারলে ৫ অগাস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে পারে, ’৯০ সালে ৬ ডিসেম্বরের মাধ্যমে পেরেছিল। অতএব বাংলাদেশের মানুষ এটা বার বার প্রমাণ করেছে।”
‘দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন হতে হবে’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘এই আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা এদেশের ছাত্র-জনতার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে এবং দেশ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা আজকে একটি দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং সেটা বৈধভাবে আশ্রয় গ্রহণ নয়… অবৈধভাবে একটি দেশে আছে।
“সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করছে… আমাদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, সেই চেষ্টাগুলো যে তারা করছে- আপনারা সকলে তা টের পাচ্ছেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘‘সেখানে আজকে আমাদের সকলের প্রয়োজন, জাতির প্রয়োজন যে- এই সরকারকে তারা যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার…এই সরকারের প্রধান বলেছেন যে, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকারের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো তারা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সেই সকল ক্ষেত্রে সংস্কার করা তাদের ওয়াদা।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এই সকল ক্ষেত্রে সংস্কার করে বিশেষ করে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে, নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথা সম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা এবং নির্বাচনের একটি রোড ম্যাপ দেওয়া।
‘‘এটা(রোড ম্যাপ) আমরা আগেও বলেছি…সেদিন আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে ডেকেছিল- সেখানেও আমরা ভালোভাবে এটা উপস্থাপন করেছি। আজকে যে ছোটখাটো সমস্যা আমরা দেখছি নানা রকমের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নব্বইয়ের ছাত্র নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, জহির উদ্দিন স্বপন, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, সুরঞ্জন ঘোষ।