স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের হাতেও এদিন সুপারিশমালা তুলে দেয় নাগরিক কমিটি, যেখানে ইলেকট্রনিক হেলথ কেয়ার কার্ড চালুর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
Published : 04 Feb 2025, 07:23 PM
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটাভুটিতে না গিয়ে ‘ঘূর্ণায়মান’ পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যদেরকেই এই পদে বসানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটি যে সুপারিশমালা হস্তান্তর করে, তাতে এই প্রস্তাবও আছে।
জেলা সরকার, ‘রিকল’ ব্যবস্থা সংযোজন, দলীয় প্রতীকের নির্বাচন বাতিলসহ ১৫টি সুপারিশ করেছে তারা।
কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদের হাতে সুপারিশমালা তুলে দেয় জাতীয় নাগরিক কমিটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাসের খান ও সহ-মুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ।
সুপারিশমালা হস্তান্তরের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন।
১৫ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
১. স্থানীয় সরকারকে ‘স্থানীয় শাসন’ হিসেবে অভিহিত করা;
২. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে এককেন্দ্রিক শাসন-ব্যবস্থার অবসান ও কার্যকর জনসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের স্তর হবে তিনটি- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ;
৩. স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল করে গড়ে তুলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করা
৪. সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সংস্কার;
৫. স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনমানুষের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনে তাদের প্রত্যাহার বা ‘রিকল’ এর ক্ষমতা জনমানুষের কাছে দেওয়া;
৬. স্থানীয় সরকারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া;
৭. স্থানীয় সরকারকে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া;
৮. স্থানীয় সরকারের সব সেবা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ‘ডিজিটাইজ’ করা;
৯. স্থানীয় সরকার প্রতিটি অঞ্চলে কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেন কাজ করতে পারে এবং বিদেশি নিয়োগদাতাকে কর্মীর দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা;
১০. স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্বাধীন হবে না;
১১. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ রোধে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত তারিখে সব স্তরে একই সঙ্গে নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনে কোনোভাবেই দলীয় পরিচয় ও দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা;
১২. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন না। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যরা নির্দিষ্ট মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন;
১৩. স্থানীয় সরকার পরিষদের সভায় নাগরিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা ও মত প্রকাশের আইনি বিধান রাখা;
১৪. এলাকার দরিদ্র ও ভুক্তভোগী মানুষের আর্থিক চাহিদা কমানোর কার্যকর ব্যবস্থা ও প্রতিনিধিদের সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করা;
১৫. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মত স্থানীয় সরকারেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী কমিটি গঠন করা।
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ২৫ পাতার সুপারিশ
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিটির কাছেও এদিন সুপারিশমালা হস্তান্তর করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেখানে ইলেকট্রনিক হেলথ কেয়ার কার্ড বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে।
শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক একে আজাদের কাছে সুপারিশমালা হস্তান্তর করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সেখানে জাতীয় নাগরিক যুগ্ম-আহ্বায়ক তাসনিম জারা এবং স্বাস্থ্যনীতি ও অ্যাডভোকেসি সেলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তাসনিম জারা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একটা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা বেশকিছু প্রস্তাব করেছেন।
“প্রান্তিক পর্যায়ে রোগীরা হাসপাতালগুলোয় তাদের প্রাপ্য সেবা ও সম্মান পাচ্ছেন না। আবার যারা সচ্ছল, তারা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা বিদেশ চলে যাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে।”
তাসনিম জারা বলেন, কারও জরুরি চিকিৎসা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো কিংবা কার্যপদ্ধতি কেমন হবে, সে বিষয়ে তারা প্রস্তাব দিয়েছেন।
“দেশে রোগীরা এক চিকিৎসকের কাছ থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে যখন যাচ্ছেন, কোনো রেকর্ড থাকছে না। ফলে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।
“আমরা প্রস্তাব করেছি প্রত্যেক রোগী, প্রত্যেক মানুষের জন্য একটা ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক হেলথ কেয়ার রেকর্ড থাকবে। যেখানে তার পুরো চিকিৎসার রেকর্ড থাকবে। সেখানে সব হেলথকেয়ার প্রোভাইডারের এক্সেস থাকবে।”
তাসনিম জারা বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রস্তাবকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে হতে পারে। তবে দেশের মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
“আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য আমাদের অধিকার। মানুষ যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব?”