বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুই এক দিনের মধ্যেই মুক্তি দেওয়া হবে, বলেছেন তিনি।
Published : 05 Aug 2024, 10:36 PM
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘অতি দ্রুত’ একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘কোনো কালক্ষেপণ না করেই’ মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে গণভবনে যান ফখরুল ও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা।
এই বৈঠক চলাচলে সেখানে যান সরকারি চাকরিতে কোটা ও পরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে অসহযোগের ডাক দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি নেতা।
রাত সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের ছাত্ররা যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে গণঅভ্যুত্থানে এবং তাদের এই ত্যাগ, তাদের এই কষ্ট, তাদের এই পরিশ্রমের ফলে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কারণে এই ‘ফ্যাসিবাদী দানবীয় খুনি’ হাসিনা সরকারের আজকে পতন ঘটেছে এবং তারা আজকে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে সবাই।
“এটা একটা বিশাল সাফল্য। সেজন্য আমি হ্যান্ড আস টু দ্যা স্টুডেন্টস। ছাত্রদের প্রতি আমার দলের পক্ষ থেকে অভিবাদন।”
রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “এই পতনের পর দেশকে কীভাবে সুস্থভাবে পরিচালনা করা যায়, সে পরামর্শ নেওয়ার জন্য সেনা বাহিনীসহ তিন বাহিনীর প্রধান, তারা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা এখানে এসেছিলাম, রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছি।
“এর মধ্যে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা হচ্ছে প্রথমত, আজকেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে তারা অচিরেই একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন এবং সেই সরকার তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করবে।
“দ্বিতীয়ত হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছিল, তিনি অসুস্থ … দুই একদিনের মধ্যে তারা মুক্তি দেবেন।”
“তৃতীয়ত, এই আন্দোলনে যাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল সকলকেই তারা মুক্তি দেবেন।”
‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার’
নতুন সরকার কবে গঠন হবে এরকম প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সরকার গঠন করার সম্ভাবনা আছে।”
কী ধরনের সরকার হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই সরকারটা হবে ইন্টেরিয়ম গভর্নমেন্ট, এর চরিত্র হবে নির্দলীয় সরকার। আমরা এটা প্রস্তাব দিয়েছি। তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
সরকারের প্রধান কবে হবে- এই প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। মূল বিষয় হচ্ছে যে, আলোচনা করা দরকার। আমরা তো দলের সঙ্গে বসতে পারিনি, আমরা দলের সঙ্গে বসে প্রস্তাব নিয়ে আসব।
“অন্যান্য দলগুলোও প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তখন নির্ধারণ হবে।”
দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি যাতে না হয় সেজন্য আমরা সমগ্র জাতিকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাই শান্ত হোন, নৈরাজ্য যাতে না হয় সেদিকে সকলে সতর্ক থাকুন, ব্যবস্থা নিন।”
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, “রাষ্ট্রপতি আজকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে সব কিছু জানাবেন।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আলোচনায় আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তি দাবি করেছি।”
এই সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে আকবর এলাহী উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আমির শফিকুর রহমান, দলের মজলিসে শুরার সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভাইস চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জাকের পার্টির শামীম হায়দার, হেফাজতে ইসলামের মাহবুবুর রহমান, মামুনুল হক, মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, খেলাফত মজলিসের আহমাদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি, ফিরোজ আহমেদ, ইসলামী শাসনযন্ত্র আন্দোলনের সৈয়দ ফজলুল করীম, আশরাফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুলও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও এই বৈঠকে ছিলেন।
আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গভবনে যাওয়ার পর সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হয়ে যান সংগঠনের সমন্বয়ক আরিফ তালুকদার, আব্দুল্লাহ আল হোসেন, মোবাশ্বেরা করিমও।
সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের দ্বিতীয় দিন দুপুরের আগে পদত্যাগ করে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তিনি দিল্লি হয়ে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে।