“বিএনপি পারে শুধু না বোঝে, না শুনে অহেতুক হাস্যকরের মত মন্তব্য করতে। এখনও সেই একই কাজ তারা করছে”, বলেন তিনি
Published : 16 Jun 2024, 05:09 PM
কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা না জেনে, না বুঝে সব বিষয় নিয়ে অহেতুক মন্তব্য করে।”
রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশলের বাইরে গিয়ে মির্জা ফখরুল দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রেখেছেন। আমি মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের আগেই আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। সরকার নির্বিকার নয় এখানে, আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তা বলেছি। তিনি তা পরে বলেছেন। আমি আগেই বলেছি, আক্রান্ত হলে আমরা পাল্টা জবাব দেব।”
বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিতে খাদ্যবাহী যান চলাচল নিয়মিত হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গায়ে পড়ে কারো সাথে ঝগড়া করতে চাই না। মির্জা ফখরুল সাহেবকে আমরা বলতে চাই যে, এখানে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ বাঁধাব কেন? সারা পৃথিবী অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আমরা যতদূর সম্ভব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারব।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গত এক মাস টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকা মোটামুটি শান্তই ছিল। কিন্তু ৫, ৮ এবং ১১ জুন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফ ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে বুধবার টেকনাফের নাফ নদীতে ওপারে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধ জাহাজ দেখা গেছে। এরপর রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে। ফলে দ্বীপে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেয়।
পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে বিকল্প পথে যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে জাহাজ পাঠানো হয়েছে সেন্ট মার্টিনে।
শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আক্রান্ত হলে সেই আক্রমণের জবাব দেব। আমরা আমাদেরকে এত খাটো করে দেখি কেন? আমরাও প্রস্তুত আছি। আমরা আক্রমণ করব না। কিন্তু আক্রমণ হলে কি আমরা ছেড়ে দেব?”
সেদিনই মিয়ানমারের জাহাজটি সরে গেছে বলে তথ্য মিলেছে।
মির্জা ফখরুল একই দিন রাজধানীতে এক আলোচনায় বলেন, “এই যে নতজানু, মিয়ানমারের মত দেশকেও কিছু বলা যাবে না, এটা কতটা ‘দাসসুলভ’ মনোভাব হতে পারে!”
তিনি বলেন, “পত্রিকায় খবরে এসেছে, “সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সংকট, সেখানে আতঙ্ক। কি দুঃখজনক! মানে এটাকে কী বলব? কত ‘ব্যর্থতা’ এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ, সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না।
“সেই দ্বীপে গেলেই অন্য দেশ থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত সরকার কোনো রকমের কোনো বক্তব্য পর্যন্ত দেয়নি। হোম মিনিস্টার সাহেব বললেন, ‘এখনো এমন কোনো অবস্থা হয়নি যে, এটাতে আমরা স্টেটম্যান্ট দেব বা কিছু বলব’।”
জবাবে কাদের বলেন, “আমরা নতজানু আচরণ কোনো অবস্থায় করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।
“কয়েকদিন আগেও মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা হলে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, পরে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখনও বিএনপি ‘বেহুদা’ কিছু মন্তব্য করেছে।
“বিএনপি পারে শুধু না বোঝে, না শুনে অহেতুক হাস্যকরের মত মন্তব্য করতে। এখনও সেই একই কাজ তারা করছে।”
‘যুদ্ধ বাঁধানোর ইচ্ছে নেই’
মিয়ানমারের সঙ্গে ‘গায়ে পড়ে’ যুদ্ধ বাঁধানোর কোনো ইচ্ছে নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রোহিঙ্গারা যখন আগে এসেছিল, তখন ওই পাশ থেকে কিছুটা উসকানি ছিল, কিন্তু তাতে আমরা পা দেই নাই। আজকেও আমাদের গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাঁধানোর কোনো ইচ্ছে নাই। তাদের সাথে আমাদের আলাপ আলোচনার দরজা এখনো খোলা।”
কোন ‘মেকানিজম’ বা নীতি দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে, সেটি শেখ হাসিনা জানেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “খোঁজ খবর আমরা রাখছি।”
সেন্ট মার্টিন দখল হয়ে যাচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত গুজব ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়েছিল বিএনপি সরকার। রোহিঙ্গাদের জঙ্গি কাজে তারাই ব্যবহার করছে। আমাদের নেত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে মানবিক কারণে। তবে তারা সত্যিই আজকে আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
‘তাদের ফিরে যেতেই হবে’ মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “সেই কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।”
খ্রিষ্টান রাষ্ট্র: ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অমূলক নয়’
‘সেন্ট মার্টিন সীমান্তে মিয়ানমার যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি এবং গুলির পেছনে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনে বিদেশি ইন্ধন আছে কি না’- এমন প্রশ্ন ছিল এক সাংবাদিকদের।
জবাবে কাদের বলেন, “নতুন রাষ্ট্র গঠনে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা অমূলক নয়। আরো কিছু থাকতে পারে কি না খতিয়ে দেখব এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
“মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটে আমাদের এখানে উসকানি কেন? তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ আছে।”
বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপির অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা নেই বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, “বিএনপি যে ব্যর্থ দল তার প্রমাণ বিভিন্ন কমিটি তারা স্থগিত করছে। এতে এটাই বোঝা যায় যে, একটি দল অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা কখনো করেনি, এখনও করছে না।
“মাঠে যারা ছিল ‘রিমোট কন্ট্রোলে’, তাদের ব্যর্থতার পরিমাপ করা হচ্ছে, পদায়ন করা হচ্ছে। আমাদের পার্টিতে এটা সম্ভব না।
“আমাদের পার্টিতে তেতাল্লিশ বছরের সভাপতি শেখ হাসিনা, তিনি জরুরি হলে শূন্য পদ পূরণ করতে পারেন, সেই ক্ষমতা তার আছে। কিন্তু কাউকে পদায়ন করার দৃষ্টান্ত আমাদের দলে নেই। কাউন্সিল ছাড়া দলীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা আওয়ামী লীগ করে আসছে। এবং আমাদের নেত্রী কখনো গঠনতন্ত্রের যে নিয়মকানুন, তা লঙ্ঘন করেন না।”
কাদের বলেন, “বলতে হয় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যর্থ। তার সৎ সাহস নেই রাজপথে এসে আন্দোলন করার।
“বিএনপি ব্যর্থ বলেই নেতাদের সরিয়ে দিচ্ছে। ব্যর্থতার মূল দায় যার, তিনিই রিমোট কন্ট্রোলে কাউকে সরিয়ে দিচ্ছেন, কাউকে পদায়ন করছেন।”
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও মত বিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।