“যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, দুঃসময়ে চুপ থাকে আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়, ওই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের আমাদের প্রয়োজন নেই।”
Published : 25 Aug 2024, 02:32 PM
দেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ‘বিপ্লবীদের’ নিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকার চান’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “বিপ্লবের লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা এই অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সাহায্য সহযোগিতা দেব। কিন্তু তাদেরকে বিপ্লবের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হবে। যারা বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে নিয়ে আপনারা সরকার পরিচালনা করুন।”
রোববার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাফিজ।
ওই সময়ে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র সমাজকে সরকারে নেওয়ার পক্ষে কথা বলেন হাফিজ।
তিনি বলেন, “অবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে সরিয়ে প্রয়োজন হলে উপদেষ্টা পরিষদে আরও ছাত্রদেরকে নেন। যারা বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে নেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন নেই, যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, দুঃসময়ে চুপ থাকে আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় ওই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের আমাদের প্রয়োজন নেই। সুতরাং এই অবস্থার অবসান চাই। প্রকৃত বিপ্লবীদেরকে নিয়ে এই সরকার গঠিত হোক, সেটাই আমরা কামনা করি।”
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে গেলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর নোবেল জয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও স্থান পেয়েছেন ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদে।
এ সরকার নিয়ে হাফিজ উদ্দিনের ভাষ্য, “২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে এখন পর্যন্ত মনে হয় না বিপ্লবীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবলমাত্র আফিস নজরুল ছাড়া এই বিপ্লবে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে কাউকে দেখিনি। এখানে আমার সাথে আজকে উপস্থিত ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ মুক্তিযোদ্ধারা যারা আছেন, তারা ৫ অগাস্টের আগে এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, শহীদ মিনারে, জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হয়েছেন।
“আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এটি কোনো এনজিও সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগণের সরকার। যারা ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাফিজ উদ্দিন, জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান। এ সময়ে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন।
‘বিপ্লব থমকে আছে’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বিপ্লব সম্পূর্ণ হয় নাই, থমকে আছে।”
তিনি বলেন, “পুলিশি স্টেট যারা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশে, যারা আয়নাঘরের মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যারা আয়নাঘর নামে একটি নির্যাতনকারী টর্চার সেল বানিয়েছে, বহু আন্দোলনকারী, সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদেরকে গুম করেছে, হত্যা করেছে তারা বহাল তবিয়তে নিজ নিজ পদে এখনো আছে।”
বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, দেশের প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগের ‘দুর্বৃত্তদের আশ্রয়ে’ পুলিশ কর্মকর্তারা আগের মতই বহাল আছেন।
আয়নাঘরে বৈধ্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “সরকারের উচিত ছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিল সাংবাদিকদেরকে সেখানে নিয়ে গিয়ে দেখানো। কত ঘৃনিত এই নরপিশাচের দল, কীভাবে তারা নীরহ মানুষদের অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে।”
‘সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের তালিকা প্রকাশের দাবি’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সেনাবাহিনী প্রধানকে বলতে চাই, এই সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি বলতে চাই, বাহিনীকে এমনভাবে রাখবেন, এমনভাবে তাদের আচরণ হওয়া উচিত যাতে মনে না হয় যে তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।
“অবিলম্বে যে ৪৮৭ জন এখানে (সেনানিবাসে) আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। তালিকা প্রকাশে ভয়ের কি আছে?”
তিনি বলেন, “আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, বিপ্লবের কয়েকদিন পরে একটি প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে মদদ দিয়েছে কয়েকজন বিচারপতি এবং গোপালগঞ্জে কিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদদপুষ্ঠ সন্ত্রাসী দল। কীভাবে তারা এই সাহস দেখায়? তারা সেনাবাহিনীর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, সেনাবাহিনীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই, আমরা এই বিপ্লবের সফল পরিণতি দেখতে চাই।”
সেনাবাহিনীর উদ্দেশে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, “জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করেন এবং কখনও ভুলে যাবেন না আপনারা কেউ জনগণের প্রভু নন। আপনাদের আচরণের বিনয় থাকতে হবে।”
‘প্রতিবিপ্লবের বিষয়ে সর্তক থাকুন’
যারা শেখ হাসিনাকে এতদিন ধরে শক্তিশালী করেছে, তাদের কেউ যদি উপদেষ্টা পরিষদে থেকে থাকে, তাহলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাফিজ।
তিনি বলেন, “আপনারা কেউ ভাববেন না যে, বিজয় অর্জিত হয়ে গিয়েছে। পাশের দেশে বসে শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র করবে। সুতরাং আপনারা সজাগ থাকবেন।”
ছাত্রদেরও বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা না হতে অনুরোধ করেছেন হাফিজ।
তিনি বলেন, “আপনারা রাজপথে থাকুন। যে কোনো ধরনের প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলে রুখব। বিএনপি আপনাদের সাথে আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও থাকবে। মূল শক্তি হিসেবে আপনারা ছাত্ররা রাজপথে থেকে প্রতিবিপ্লব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন।”