“এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে, সেইভাবে আমাদেরকে এখানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
Published : 06 Apr 2024, 09:30 PM
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করতে রাজধানীতে দলকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তা ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’ হয়ে ওঠে।
শনিবার ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এক ইফতার অনুষ্ঠানে মহানগরের নেতাদের উদ্দেশে এক কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “সারাদেশের মানুষ কত কষ্টে আছে। কয়েকদিন আগে আমি আমার জেলা ঠাকুগাঁওতে গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি তারা ভয়াবহভাবে দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে। অথচ তাদের মুখে কিন্তু কোনো হতাশার ছাপ আমি দেখি নাই। এত অত্যাচার নির্যাতনের পরেও তারা সুন্দর আছে, সঠিক আছে, দৃঢ়চেতা আছে।
“আমাদেরকে তারা এই কথা বলেছে যে, আপনারা সঠিক নির্দেশনা দেন, সঠিক কর্মসূচি দেন, তাহলে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে আগেকার মত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব।”
ঢাকা মহানগরের নেতাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আমি দুই-একটি কথা বলতে চাই, ঢাকা মহানগর হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের সমস্ত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে ঢাকায়, এখানে সরকারের ভয়াবহ সেই দানবদেরকে পরাজিত করা। সেই কারণে ঢাকার মহানগরের দায়িত্ব অনেক বেশি।
“আমি অনুরোধ করব মহানগরের নেতৃবৃন্দকে, ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন, যেন ঢাকা দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়। এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে, সেইভাবে আমাদেরকে এখানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।”
ফখরুল বলেন, “এখন সবেচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে সংগঠনের প্রতি, সবচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে জনগণের যে সাহস, যেটাকে বাড়িয়ে তুলতে এবং শত্রুকে পরাজিত করবার জন্য কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এই কথাগুলো আপনারা মনে রাখবেন।”
বিএনপি মহসচিব বলেন, “এই আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন জাতিকে রক্ষা করবার আন্দোলন। আমাদের চলমান আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের চলমান আন্দোলন ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবার জন্য। আমাদের চলমান আন্দোলন আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রকে সকল ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করবার জন্যে।
“তখনই আমরা জাতিকে রক্ষা করতে পারব, যখন এই জনসমর্থনহীন, একেবারে ম্যান্ডেটবিহীন যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, ক্ষমতায় এই দখলদারি সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।”
ফখরুল বলেন, “প্রত্যেকটি বড় বিজয়ের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমাদের নবী রসুল্লাহ (সা.) একদিনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সক্ষম হননি, দীর্ঘকাল লেগেছে তার এই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে। একদিনের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সব জায়গায়।
“আজকে ফেরাউন-নমরুদ-হিটলারের মত কর্তৃত্ববাদী ধ্বংসকারী সরকারগুলো যখন এসেছে, তখন তারা চেষ্টা করেছে সারা জীবন তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে। আমরা দেখেছি, আজকে আওয়ামী লীগ সেই চেষ্টা করছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য।”
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, “আসুন আজকে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি, আল্লাহর কাছে এই দোয়া চাই যেন, আল্লাহ সেই তৌফিক দেন, সেই শক্তি দেন, যেন আমরা সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আন্দোলনে সংগ্রামে নির্বাচনে, সবখানেই যেন আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারি।এটাই হোক আজকের দিনে প্রার্থনা।”
ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও ‘গুম-খুনের শিকার’ নেতা-কর্মীদের পরিবারের সন্মানে এই ইফতার মাহফিল হয়। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী তাতে অংশ নেন।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দুই মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বক্তব্য দেন।
‘গুম হওয়া’ বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের পক্ষে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাদাত শাওন চৌধুরী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের মেয়ে রাইসা অনুষ্ঠানে তাদের কষ্টের কথা বলেন।
পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি মহাসচিব।