“তাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে এর মাধ্যমে। এতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব দেশের ‘ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবস্থা সেটি ভেঙে পড়বে”, বলেন তিনি।
Published : 18 Jun 2024, 05:09 PM
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রেলপথ স্থাপনে ভারত যে জরিপের পরিকল্পনা করছে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশটির সামরিক খাতও এই লাইন ব্যবহার করবে দাবি করে তিনি বলেছেন, সামরিক ও বেসামরিক পরিবহন উত্তরপূর্ব ভারতের দিকে চলাচল করে তাহলে দুর্বল সার্বভৌমত্বের বাকি অংশটাও নিঃশেষ হয়ে যাবে’।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘‘২২ কিলোমিটার সংকীর্ণ রুট যার উত্তরে নেপাল এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ অর্থাৎ শিলিগুড়ি করিডোর যেটিকে চিকেন নেক বলা হয়- যেটিকে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রেলপথ বাকি অংশ ভারতের উত্তরপূর্ব দিকে সংযোগ করা হবে এই ধরনের একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
“বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের সামরিক এবং বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে রেললাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অনুমতিক্রমেই’ এসব হচ্ছে বলেই মনে করছেন রিজভী। বলেন, “এটা উদ্বেগজনক। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া গত ১২ জুন এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ ও নেপালসহ উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে রেলপথে সংযোগ বাড়াতে নতুন লাইন বসানোর বিষয়ে ‘স্থান নির্বাচনের’ চূড়ান্ত জরিপ পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার।
প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে ১৪টি নতুন রেলপথে সংযুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ভারত; যার মধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ৮৬১ কিলোমিটার নতুন পথ তৈরি করতে চায় তারা।
কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে লাইন হলে ভালো হয়, সেসব স্থান নির্বাচনে এ জরিপ চালাবে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা, ফেনী ও চট্টগ্রাম ও যশোর সীমান্তে এসব নতুন সংযোগের পাশাপাশি পুরনো রেলপথ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আওতায় পদ্মা সেতুও ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।
তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চূড়ান্ত কোনো ফয়সালা হয়নি। বাংলাদেশের কী লাভ, কী শর্ত, সেই বিষয়গুলোও সামনে আসেনি।
ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ‘গণহিংসার মনোভাব পোষণ করে’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “তাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে এর মাধ্যমে। এতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব দেশের ‘ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবস্থা সেটি ভেঙে পড়বে।
“দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নতজানু সরকার যদি এই রেললাইন নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করে তাতে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে ক্রমাগতভাবে মিলিয়ে দেওয়া হবে বলে আমরা মনে করি।”
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সঙ্গে ‘গোপন চুক্তি’ করেছেন অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “সেগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণে অনুমতি দিচ্ছেন দাবি করে রিজভী বলেন, “তাদেরকে সব উজাড় করে দেওয়ার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”
‘সাম্প্রদায়িক আগ্রাসী রাষ্ট্র’
ভারতে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের চেতনায় এক সাম্প্রদায়িক আগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ভারত। রাজনৈতিক বহুত্বের কণ্ঠস্বর সেখানে ক্রমান্বয়ে স্তিমিত হচ্ছে।”
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার দেশের মুসলমানদের ‘উই পোকা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদের কথায় নানা ধরনের হিংসার প্রতিফলন দেখা যায়।”
‘সাইবার সিকিউরিটি বিধিমালা বাক স্বাধীনতা রুখতে’
আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছিল, সেই ধারাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে রিজভী।
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালায় মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারা সংযোজিত হবে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, “এটি বাস্তবায়িত হলে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ’ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে।”
‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কফিনে ঢুকে আছে’ মত দিয়ে রিজভী বলেন, “এখন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে, এটা পাস হয়ে গেলে এটাই হবে সর্বশেষ পেরেক। এই বিধিমালা অনুমোদিত হলে গোটা দেশটাকেই বাকরুদ্ধ করে তোলা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।