“এই বাজেটের পরে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে।”
Published : 06 Jun 2024, 09:01 PM
দেশে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণে বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
অধিবেশন শেষে সংসদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জি এম কাদের বলেন, “আমার কাছে এটা গতানুগতিক বাজেট মনে হয়েছে। গত বছর ও তার আগের বছর যেরকম হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় বাজেট রাখা হয়েছে। এখানে আমি বিশেষত্ব কিছু পাইনি।
“এখন আমাদের যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, মূল্যবৃদ্ধি, উচ্চ হারে মূল্যস্ফীতি, বেকার সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রা, যা আয় করছি ব্যয় তার চেয়ে বেশি, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট আমাদের নেগেটিভ হয়ে গেছে, রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে- এসবের ফলশ্রুতিতে ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এই যে ক্রাইসিস চলছে দেশে, এসব উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ বা কোনো উদ্যোগ এই বাজেটে লক্ষ্য করিনি।”
এই বাজেট জনবান্ধব না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পরোক্ষ করের কারণে জনগণের মাথায় করের বোঝা বাড়বে। জনগণের মুক্তির উপায় নেই। পরিবেশের অভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না, তাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। এই বাজেটের পরে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে।
“বাজেটের আকার করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক কম। রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঘাটতি হচ্ছে। ঘাটতি মেটানো হচ্ছে দেশি ও বিদেশি ঋণ দিয়ে। ঋণ নিয়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে।”
প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ থেকে সুদ দেয়ার পরে আমরা ব্যবহার করতে পারছি ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ করতে হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন ঋণ করা হচ্ছে, তার সুদ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে। ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে। ৬২ শতাংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর বাকিটা পরোক্ষ কর। এতে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
“আয়কর মাত্র ৩৬ ভাগ, আমদানি শুল্ক ১০.৩, মূল্য সংযোজন কর ৩৮.১ এবং সম্পূরক শুল্ক ১৩.৮। এটা রিকশাওয়ালা থেকে ভিক্ষুকদেরও দিতে হবে।”
সরকার যেটা অর্জন বলছে সেটা দুর্নীতি বা লজ্জাজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার বলছে ৩০ হাজার মেগাওয়াট (বিদ্যুৎ) উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট দরকার হলেই লোডশেডিং করতে হয়। সারাদেশে লোডশেডিং চলছে। ১৫ হাজারের পরে বাড়তি ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন না হলেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে।”
এসময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মো. মুজিবুল হক চুন্নু, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, একেএম সেলিম ওসমান, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মো. আশরাফুজ্জামান আশু ও নুরুন্নাহার বেগম উপস্থিত ছিলেন।