প্রতিষ্ঠান কিছু ব্যক্তির সমষ্টি এবং এই সব ব্যক্তি যখন ডোবে, সঙ্গে প্রতিষ্ঠানকেও ডোবায়। ব্যক্তি নিমজ্জমান কারণ বেশির ভাগ ব্যক্তির প্রকৃত শিক্ষা নেই, অপরিহার্য নীতিবোধ নেই।
Published : 10 Apr 2024, 07:02 PM
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের ইচ্ছে হলো, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। তাঁর মনে হয়েছিল কিংবা তাঁকে বোঝানো হয়েছিল, সারা বিশ্বের মৃতপ্রায় বা হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা ও উন্নয়নের কাজে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারবে। উদ্দেশ্য মহৎ সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে সরকার বাহাদুরের উদ্যোগে এ ধরনের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা অভিনব বটে।
শিব গড়তে বানর। ১৯৯৬-২০২৪ পর্যন্ত প্রায় তিন দশকে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানটি উচ্চতায় এবং কলেবরে বেড়েছে, কিন্তু কাজেকর্মে বাড়েনি। দুই বছর আগেও, বর্তমান মহাপরিচালক দায়িত্ব নেবার আগে পর্যন্ত, এই ইনস্টিটিউট ছিল ‘এমন একটা গাড়ির মতো যার একমাত্র হর্নটা ছাড়া আর সব কিছুই বাজে!’ ভাষা, ভাষা-সংরক্ষণ, গবেষণা, অনুবাদ ইত্যাদি যা কিছু অবশ্য-কর্তব্য ছিল এই প্রতিষ্ঠানের, তার বিশেষ কিছুই হয়নি। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে একটি স্মরণিকা হয়তো প্রকাশিত হয়েছে কিছু নিম্নমানের ফরমায়েশি লেখা দিয়ে এবং সেগুলোর বেশিরভাগ ইনস্টিটিউটের গুদামে উইয়ে কেটেছে। একটি তথাকথিত ভাষা জাদুঘর করা হয়েছিল, যেটাকে খুব বেশি হলে একটি পোস্টার সংগ্রহশালা বলা যেতে পারে। ভাষা সংরক্ষণের নামগন্ধ নেই, সে ক্ষমতাও নেই, কারণ প্রায় তিন দশক ধরে একটি ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ এবং পাঁচ দশক ধরে একটি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থাকা সত্ত্বেও ভাষা এবং ব্যাকরণ নিয়ে কাজ করার মতো শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি হয়নি।
বর্তমান মহাপরিচালক দায়িত্ব নিয়েই এই প্রতিষ্ঠানকে তার প্রকৃত রূপ দেবার চেষ্টা করেছেন। ভাষা অভিধান, অনুবাদ, মাতৃভাষাপিডিয়া ইত্যাদি অপরিহার্য এবং ইতিবাচক উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন না শোনে জ্ঞানচর্চার কাহিনী। গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের একটা বিশেষ চরিত্র ও মেজাজ থাকে। বাঙালি এমন কিছু জ্ঞানমুখী, গবেষণা-প্রবণ জাতি অবশ্যই নয়। রাতারাতি আমাইতে গবেষণার ঝড় বয়ে যাবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু অধঃপতনেরও একটা সীমা আছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) নামক প্রতিষ্ঠানটি আজ নেহায়েতই শিক্ষামন্ত্রণালয় কিংবা সচিবালয়ের পিকনিক স্পট, রঁদেভুর স্থান।
শিক্ষা বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের যে কোনো বড়সড় সভার আয়োজন হবে, ঠিকানা: মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন। এক উচ্চপদস্থকে নিজের কানে বলতে শুনেছি: ‘এখানে এত কক্ষ, বাইরে যাবার দরকার কী। সরকারের নতুন ভবন করারই কী প্রয়োজন? সব সভা এখন থেকে এখানেই হবে।’ মহামহিমের খায়েশ বলে কথা। যখনি এই প্রতিষ্ঠানে যাই, ‘স্যুটেড-বুটেড-পাঞ্জাবিড-শাড়িড’ লোকজনকে হাতে বড় বড় ফুলের তোড়া নিয়ে সেখানে ভিড় করতে দেখি মন্ত্রী কিংবা সচিবকে শ্রীমুখখানা একবারটি দেখানোর খায়েশ মেটাতে। প্যাকেট বিরিয়ানির তীব্র গন্ধে নরক গুলজার। সব সময় এই প্রতিষ্ঠানে একটা হৈচৈ চলছে, জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যা একেবারেই যায় না।
প্রথমেই মনে হতে পারে এর জন্য দায়ী আমলাতন্ত্র, যেহেতু আমলাতন্ত্রই এই প্রতিষ্ঠান চালায়। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ধারক-বাহকদের মনোবৈকল্যের প্রধান একটি লক্ষণ, আমলারা খেয়াল করে, খেয়াল করতে তাদের শেখানো হয়, কিংবা সঙ্গদোষে তারা আপনিই শিখে যায়: যে ব্যক্তি আমাকে ‘স্যার’ বলার কথা, সে ঠিকঠাকমতো ‘স্যার’ বলছে তো? ক্ষমতাবান মাত্রেই ক্ষমতা দেখাতে চায় এবং দেখাতে না পারলে খেপে যায়। ‘স্যার’ ডাকটা এমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে লিঙ্গগত পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে ম্যাডামকেও ‘স্যার’ ডাকা বাংলাদেশের অন্যতম আমলাতান্ত্রিক শৃঙ্গার।
কোনো আমলাকে যদি ইনস্টিটিউট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে ক্ষমতানুক্রম বা হায়ারার্কিতে কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যা অন্য জায়গায়। আমলার পক্ষে সাধারণত গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হয় না (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে), কারণ গবেষণা এবং আমলাতন্ত্র— এই দুই শকটের প্রকৃতি ভিন্ন এবং এদের চালকও আলাদা। গাড়ির চাকা এবং স্টিয়ারিং দুটিই চক্র বটে, কিন্তু দুই চক্রের প্রকৃতি ও ক্ষমতা এক নয়। গরুর গাড়ির গাড়োয়ান দিয়ে বিমান চালানোর চেষ্টা না করাই শ্রেয়। তবুও আমলা দিয়ে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত হয়েছে বহু বছর। ফলাফল, বলা বাহুল্য: অষ্টরম্ভা।
আমলার জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েও দেখা হয়েছে। এখানেও মূল সমস্যা হয় ‘ডাক’-এর (শের শাহ ঘোড়ার ডাকের প্রবর্তন করেন। ইহার পূর্বে ঘোড়া ডাকিতে জানিত না!)। কে কার চেয়ে বড়? কে কাকে ‘স্যার’ ডাকবে। আমলাতো তার ডাক শোনার অধিকার ছাড়বে না। ‘কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে। ভাই বলে ডাকো যদি দেবো গলা টিপে।’ অধ্যাপকইবা কম যান কীসে? অধ্যাপকেরা ইদানিং আমলার চেয়ে বেশি বয়সে অবসরে যান। সুতরাং বয়সেও তিনি ছোট হবার কারণ নেই। সুতরাং তিনি ‘ভাই’ও বলবেন না, ‘স্যার’ও বলবেন না। ব্যাস, লেগে গেল গিট্টু।
২০০৮-২০২৪ পর্বে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের যা করার কথা, অধ্যাপক মহাপরিচালকেরা কি তা করতে, করাতে পেরেছেন? ইতিহাসে আমরা এই প্রশ্নের হ্যাঁ-বোধক উত্তর পাই না। অন্য অধ্যাপকেরা যে সব গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, নৃগোষ্ঠীর ভাষা বিষয়ক প্রকল্প যার অন্যতম, সেগুলোও প্রকাশের মুখ দেখেনি বেশির ভাগ। প্রকল্পের যন্ত্রপাতি-কম্পিউটার সব নাকি কীভাবে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কোম্পানিকা মাল দরিয়ামে ঢাল। সুতরাং ফলাফল এক্ষেত্রেও: অষ্টরম্ভা। এর মানে, পরিচালক-মহাপরিচালক পদে আমলার চেয়ে অধ্যাপক যে খুব বেশি কাজের (বর্তমান মহাপরিচালক ব্যতিক্রম, সুতরাং ধর্তব্য নয়!), সেটা আপাতত প্রমাণিত নয়।
কেউ ভাবতে পারেন, স্বায়ত্তশাসন নেই বলে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কিছু করে উঠতে পারছে না। এই ধারণা সত্য হবার কারণ নেই। বাংলা একাডেমির কথাই ধরুন। এই প্রতিষ্ঠানটিতে স্বায়ত্তশাসন আছে গত প্রায় ষাট বছর ধরে। কিন্তু বাংলা একাডেমি যা হয়ে ওঠার কথা ছিল, তা যে হয়নি, সেটা বাংলা একাডেমিতে আজীবন কাজ করে গেছেন যারা, তারাও স্বীকার করবেন। বাংলা ভাষা নিয়ে কার্যকর সব গবেষণা করার কথা ছিল এই প্রতিষ্ঠানটির। এখানে থাকার কথা ছিল সবার জন্য সর্বক্ষণ অবারিত দ্বার সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। বাংলা একাডেমির ভবন বেড়েছে, কলেবর বেড়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেড়েছে, বিখ্যাত সব কবি-চিন্তক-গবেষককে ধরে এনে মহাপরিচালক বানানো হয়েছে, কিন্তু ‘সকলই গরল ভেল’। বাংলা একাডেমিতে কোনো গবেষণা আদৌ হয় কিনা, গবেষণার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয় কিনা, আমরা জানি না। বছরে একবার এক বইমেলা করা ছাড়া বাংলা একাডেমি আর তেমন কিছুই যে করে না— এই অভিযোগ সম্ভবত অসত্য নয়।
বাংলা একাডেমি কিংবা মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে ব্যতিক্রম নয়। স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি যা হয়ে ওঠার কথা ছিল, তা হয়েছে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যবৃন্দের অপকর্মের ফিরিস্তি দেখলে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে কথা বলার মতো মুখ থাকে না। পত্রপত্রিকার ভাষ্য অনুসারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরাও অপকর্মে পিছিয়ে নেই। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অপকর্মের কথা মিডিয়ায় আসে না বটে, কিন্তু দুর্নীতিতে তারাও যে কম যান না, সেটা বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায়। এক সদ্যসাবেক উপাচার্য নাকি পত্নী-পুত্র-আত্মীয়দের মাধ্যমে নিয়োগ-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এমনকি উপাচার্য ভবনের সামনে বসা আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকেও নাকি নিয়মিত তোলা তুলেছেন তিনি। এইসব খবর যারা সপ্রমাণ চাউর করার কথা, তারাসহ অন্য সবাইকে তিনি এতটাই খুশি রেখেছিলেন যে হাটে হাঁড়ি ভাঙার গরজ কেউ করেনি।
আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো যে নিমজ্জমান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিষ্ঠান কিছু ব্যক্তির সমষ্টি এবং এই সব ব্যক্তি যখন ডোবে, সঙ্গে প্রতিষ্ঠানকেও তারা ডোবায়। ব্যক্তি নিমজ্জমান কারণ বেশির ভাগ ব্যক্তির প্রকৃত শিক্ষা নেই, অপরিহার্য নীতিবোধ নেই। এর কারণ প্রথমত গত কয়েক শ বছরে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তিভিত্তিক এবং নৈতিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের অভাব আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায়, সে বুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা যাই হোক না কেন, অন্ধবিশ্বাস ও প্রশ্নহীন আনুগত্যকে সার্কাসের নাচুনে ছাগলের মতো লোহার ছ্যাঁকা দিয়ে ব্যক্তির অস্তিত্বের অংশ করে তোলা হয়। বাংলাদেশের সমাজ এমন শিক্ষা দিতে বিদ্যালয়কে বাধ্য করে, কারণ সমাজও প্রজন্মান্তরের অপশিক্ষিত ও নৈতিকতাবর্জিত ব্যক্তির সমাহার।
এই ব্যর্থতা প্রধানত শিক্ষাব্যবস্থার হলেও সমাজ ও রাষ্ট্র যেহেতু শিক্ষার দায়িত্বে, ব্যর্থতার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের উপরও বর্তায়। স্কুলে নৈতিকতার পরিবর্তে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয়। লোক দেখানো ধর্ম অনুসরণ করে, আবার দুর্নীতিও করে, সমাজে সব যুগেই এমন ব্যক্তির বাহুল্য ছিল। অথচ প্রকৃত ধার্মিক আর প্রকৃত জ্ঞানী খুঁজে পাওয়া ভার। সমাজে ধর্মাচরণ আছে বলে দৃশ্যত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ধর্মের বাণী কেউ অনুসরণ করে বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে আপামর জনগণের শিক্ষা ও নীতিবোধ অত্যন্ত নড়বড়ে, সে হোক আমলা-মন্ত্রী, কিংবা অধ্যাপক, কিংবা বিচারক, কিংবা সাধারণ জনগণ। কুশিক্ষা এবং বিচারহীনতার সুযোগ নিয়ে যে কোনো প্রকারে, যে কোনো দুর্নীতি করে প্রত্যেকে নিজের জীবৎকালে নিজের ফায়দাটুকু কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে চায়।
এমন সব ব্যক্তি দিয়ে, এমন একটি সমাজে কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়, বলা বাহুল্য। শিক্ষার ঘাটতি মেটাতে পারত সুবিচার। শাস্তির ভয়ে হয়তো কিছু মানুষ নীতিবান হয়ে উঠত। কিন্তু আমাদের বিচারব্যবস্থাতেও গলদ আছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাবানেরা সহজেই আইনের জাল কেটে বের হয়ে আসতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না যে বিচারকেরাও ব্যর্থ শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রাষ্ট্রও চায় না সুবিচার হোক, কারণ বাংলাদেশ মূলত একটি অলিগার্কি যেখানে কিছু সুবিধাভোগী ক্ষমতাবানই রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
আইনের তোয়াক্কা না করে, আইন ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তি হয়তো শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি আইনকে ফাঁকি দেয়, সেও শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ওপরও ভরসা করতে চায়। দিনশেষে সৎ-অসৎ নির্বিশেষে প্রতিষ্ঠানই সবার কাছে নৈতিকতা ও আইনের মানদণ্ড। বেশির ভাগ ব্যক্তি কুশিক্ষিত, নীতিহীন ও আইনবিরোধী হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ে। সমাজকে ধারণ করে একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান নড়বড়ে হলে, সমাজও টিকে থাকতে পারে না।
কুতো পন্থা? সমাধান দ্বিবিধ। প্রথমত, কয়েক দশক ধরে যুক্তিবাদী শিক্ষাদান এবং দ্বিতীয়ত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: লাল আলোতে গাড়ি থামবে, সবুজ আলোতে চলবে এবং এর অন্যথা হলেই শাস্তি হবে। সমাধানের এই দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায় বটে, কিন্তু জনগণেরও দায়িত্ব আছে, কারণ সরকারের গাফিলতির মাশুল আখেরে জনগণকেই গুনতে হয়। সুতরাং সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, যথাসম্ভব। সমাজের ইতিবাচক ও টেকসই পরিবর্তনের জন্য সচেতন ও যুক্তিবাদী নাগরিকের সম্মিলিত প্রতিবাদ অপরিহার্য।
ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের সমস্যার প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে শিক্ষাব্যবস্থায়, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায়। প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ার সমস্যা একটা চক্রাকার সমস্যা বটে, কিন্তু চক্রটা কোথাও না কোথায় ভাঙ্গতে হবে। (সুইডেন-নরওয়ে-ডেনমার্কের মতো) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ, সর্বোচ্চ সম্মানি ও সম্মান দিলে এবং সর্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যাপক বিনিয়োগ করা হলে, আমি মনে করি, আগামি দুই দশকে উন্নততর ‘ব্যক্তি’ বা ‘নাগরিক’ গড়ে উঠবে এবং প্রতিষ্ঠানও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।