Published : 27 Jan 2020, 07:19 PM
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া । তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে, অপরাধীদের ধরতে, শনাক্ত করতে তৎকালীন সরকারের অনীহা ছিল, গাফিলতি ছিল। কিন্তু তারপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও এবং টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শেষ হয়নি। কারা তাকে কেন হত্যা করলো তার কারণও আমাদের জানা হয়নি। তার মতো একজন প্রতিভাবান গুণী মানুষের এমন মৃত্যু যেমন প্রত্যাশিত ছিল না, তেমনি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতাও অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে কোন পরিচয়ে পাঠকদের সামনে তুলে ধরলে সেটা যথার্থ হবে বুঝতে পারছি না। কর্মজীবন কাটিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করে। কখনো দেশে, কখনো বিদেশে। ঝানু কূটনীতিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেছেন। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে যোগ দিলেন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে সাফল্যও পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে কিবরিয়া সাহেব মন্ত্রী হলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি বেশ দক্ষতার সাথেই সামলেছেন। তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন না। মন্ত্রী হয়েছিলেন টেকনোক্রেট হিসেবে। মনের মধ্যে অস্বস্তি নিশ্চয়ই কাজ করতো।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি আর টেকনোক্রেট কোটা যে এক নয়, সে কী আর তিনি বুঝতেন না! ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে পারলো না। ক্ষমতায় এলো বিএনপি-জামায়াত জোট। শুরু হলো দুঃশাসনের রাজত্ব। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলনের এক ঘৃণ্য অধ্যায় রচিত হয় সেসময়। তখন কিবরিয়া সাহেব একটি সাপ্তাহিক কাগজ বের করলেন। নাম 'মৃদুভাষণ'। অনেকেই বলেছিলেন, দেশে চলছে চণ্ড শাসন। এখন মৃদুভাষণ কেন, এখন লাগবে কড়া ভাষণ, কঠিন ভাষণ। মৃদুভাষণে কাজ হবে না। কিন্তু কিবরিয়া সাহেব নিজে সজ্জন এবং মৃদুভাষী। তার শিক্ষা-রুচি-সংস্কৃতির সঙ্গে মৃদুভাষণই মানানসই।
মৃদুভাষণে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে, তার সহকর্মী হিসেবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। প্রায় চার বছর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগে তার পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছি তারই কিছু এখানে উল্লেখ করতে চাই। তার জীবন-কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পাঠক পড়তে পারেন তার নিজের লেখা স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য'। বইটি ইউপিএল থেকে প্রকাশিত। শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল কিবরিয়া ছিলেন একজন সুশৃঙ্খল মানুষ। সবকিছু গোছানো এবং পরিকল্পিত। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর তার জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন এলেও তা কোনোভাবেই এলোমেলো ছিলো না। সেসময় রাজনৈতিক সহকর্মীদের মধ্যে বেশি সময় কাটলেও তিনি তার পুরনো অভ্যাস খুব বদলাননি। সৃজনশীলতার প্রতি তার আকর্ষণ বরাবরের। দেশের অনেক কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিল্পীর সঙ্গে তার সখ্য ও যোগাযোগ ছিল। তাদের কারো কারো সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে পারলে তিনি খুশি হতেন। আনন্দ অনুভব করতেন। কয়েকজন লেখক-শিল্পীর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কবি শামসুর রাহমানকে শ্রদ্ধা করতেন, তার কবিতা পড়তেন। মৃদুভাষণের বিশেষ সংখ্যায় শামসুর রাহমানের কবিতা অবশ্যই ছাপা হতো। শামসুর রাহমানের চিকিৎসার জন্য কিবরিয়া সাহেব কতোভাবে সাহায্য করেছেন, সে কথা কবি নিজেই তার লেখায় উল্লেখ করেছেন।
সৈয়দ শামসুল হকও ছিলেন তার প্রিয় লেখকদের একজন। হক ভাইয়ের একটি লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে ব্যক্তিগতভাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন কিবরিয়া সাহেব। এই দুই কবির জন্মদিনে তাদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলতেন না। কিবরিয়া সাহেব বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের লেখা পছন্দ করতেন। তিনি কিছুদিন মৃদুভাষণে লিখেছেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খানের সঙ্গেও তার সম্পর্ক আন্তরিকতাপূর্ণ ছিলো। লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখার তিনি ছিলেন মুগ্ধ পাঠক। গাফফার চৌধুরীর লেখার জাদুকরী প্রভাবের কথা আমাদের বলতেন। দু'জনের সম্পর্ক ছিল চমৎকার। ফোনে কথা হতো। লন্ডন গেলে একটি সন্ধ্যা কাটাতেন গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে।
ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের লেখারও ভক্ত ছিলেন কিবরিয়া সাহেব। মুনতাসীর মামুনের লেখায় শব্দচয়নে যে একটি হুল ফোটানোর প্রবণতা তা উপভোগ করতেন। তবে তিনি নিজে কখনো আক্রমণাত্মক লেখা লিখতেন না। তিনি যেমন ছিলেন মৃদুভাষী, তেমনি লেখার ক্ষেত্রে শব্দ বাছাইয়েও ছিলেন সংযমী ও যুক্তিবাদী। মুনতাসীর মামুনের জন্য কিবরিয়া সাহেবের মনে একটি গভীর দরদ ছিল। জোট শাসনামলে ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মুনতাসীর মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই খবর শুনে কিবরিয়া সাহেব খুব বিচলিত হয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, গবেষক, অসংখ্য গ্রন্থ প্রণেতা, জনপ্রিয় কলাম লেখককে যখন নাশকতার অভিযোগে জেলে ঢোকানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন, তখন সরকারের অগণতান্ত্রিক চেহারাটা নগ্ন হয়ে প্রকাশ পায়। মুনতাসীর মামুনের গ্রেপ্তারের খবর শুনে কিবরিয়া সাহেব আমাকে বলেছিলেন, মিসেস মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা জানাতে যে, তার এই বিপদের দিনে মৃদুভাষণ পরিবার তার সঙ্গে আছে। যেকোনও সমস্যার কথা তিনি যেন অসংকোচে আমাদের জানান।
লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হলেও কিবরিয়া সাহেব কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশটাকে সভ্য দুনিয়ার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। একজন লেখককে যে দেশে তার লেখালেখির জন্য জেল-জুলুমের শিকার হতে হয় সে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা না হয়ে পারে না! অথচ এই দেশটি আমরা স্বাধীন করেছি এক নদী রক্তের বিনিময়ে। দেশের পশ্চাৎমুখী পরিবর্তন সারাক্ষণ তাকে ব্যথিত করতো।
কিবরিয়া সাহেব কখনো কারো অনুপস্থিতিতে তার নিন্দামন্দ করতেন না। পরচর্চা পছন্দ করতেন না। কারো সম্পর্কে তার কোনো রিজার্ভেশন থাকলে তার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতেন না, চুপচাপ থাকতেন। কারো সম্পর্কে কটূক্তি করতেন না, রূঢ় আচরণও করতেন না কারো সঙ্গে। সঙ্গত কারণেই তার সঙ্গে কেউ দুর্বিনীত আচরণ করলে তিনি দুঃখ পেতেন।
তার অপরিচিত, তরুণ কোনো সাংবাদিক বা লেখকের কোনো প্রতিবেদন বা লেখা পড়ে যদি তার ভালো লাগতো তাহলে তার তারিফ করতেন। মৃদুভাষণে তাকে দিয়ে লেখানো যায় কিনা সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলতেন। যা কারো ভালো কাজের প্রশংসা করতে তার কোনো দ্বিধা-কার্পণ্য ছিলো না। মৃদুভাষণে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা নিয়মিত ছাপাতে চাইতেন কিবরিয়া সাহেব। কিবরিয়া সাহেবের এই আগ্রহের কথা আমি জাফর ইকবালকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রথম সংখ্যায় লেখা দিলেও নিয়মিত লেখার সময় করে উঠতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকেও তিনি মৃদুভাষণে লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিবরিয়া সাহেবের ভালো লাগতো আনিসুল হকের রম্যরচনা। তাকেও নিয়মিত মৃদুভাষণে লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাংবাদিক হাসান মামুনকে পছন্দ করতেন। মামুন অবশ্য শুরু থেকেই মৃদুভাষণের সঙ্গেই ছিলেন।
দেশের প্রায় সব বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ-শিক্ষাবিদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত আলাপ-পরিচয় ও সুসম্পর্ক ছিল। তিনি বিশিষ্টজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তার কোনো বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে কেউ যদি ভালো যুক্তি তুলে ধরতেন তাহলে তিনি তা খুশি মনে মেনে নিতেন। তথ্য-উপাত্ত ছাড়া তার বক্তব্যের ঢালাও সমালোচনা করলে তিনি ক্ষুব্ধ হতেন। রেহমান সোবহান, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতো প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ছাড়াও যাদের প্রশংসা করতেন তাদের মধ্যে ড. মইনুল হোসেন, অধ্যাপক আবদুল বায়েস, ড. আতিউর রহমান, বিনায়ক সেন, মুস্তাফিজুর রহমানের নাম মনে পড়ছে। অধ্যাপক আবুল বারকাতের স্পষ্ট বক্তব্য পছন্দ করতেন কিবরিয়া সাহেব। ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. হারুন-অর-রশীদের প্রশংসা তার মুখে শুনেছি।
মৃদুভাষণকে একটি মানসম্পন্ন ও পাঠকপ্রিয় কাগজ করার পরিকল্পনা তার ছিলো। কিন্তু সাম্প্রদায়িক অপশক্তি গ্রেনেড হামলা করে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি তাকে নির্মমভাবে হত্যা করায় তিনি মৃদুভাষণ নিয়ে তার স্বপ্নের সফল রূপায়ণ ঘটাতে পারেননি।
রাজনীতির দু'জন মানুষ সম্পর্কে কিবরিয়া সাহেবের মনোভাব তুলে ধরে লেখাটি শেষ করবো। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিতাড়িত হয়ে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা নামে নতুন দল করায় অনেকের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হলেও কিবরিয়া সাহেব তার ব্যাপারে খুব উৎসাহ দেখাননি। বলেছিলেন, ডা. বদরুদ্দোজাকে নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। তিনি কোনো দৃঢ়চেতা মানুষ নন। তার মধ্যে সুবিধাবাদিতা আছে। চিকিৎসক হিসেবে তিনি যতো ভালো, রাজনীতিবিদ হিসেবে ততোটা নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে 'সাবাস বাংলাদেশ' নামে তিনি যে টেলিচিত্র নির্মাণ করেছিলেন সেটা তার অবস্থানের সঙ্গে বেমানান ছিল। তার রাজনৈতিক বিশ্বাস বিএনপি পরিমণ্ডলের বাইরে নয়। কোনো আদর্শগত বিরোধের কারণে তিনি বিএনপি ছেড়েছেন বলে মনে হয় না। তিনি কিছু নাটকীয়তা করবেন, কিন্তু বিএনপির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবেন না। তিনি যদি সত্যিকার অর্থে নতুনযাত্রা করতে চান তাহলে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ডা. চৌধুরী শেষ পর্যন্ত হয়তো বিএনপির বি-টিমের ভূমিকাই পালন করবেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধ থাকলেও তার রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে একমত হতে পারতেন না কিবরিয়া সাহেব। ড. কামাল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া, তার বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের একজন। তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচার করেছেন বলে কিবরিয়া সাহেব মনে করতেন। যদি আওয়ামী লীগ করা তার পক্ষে সম্ভব না-ও হতো তাহলেও তার উচিত ছিলো হয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা অথবা প্রকৃতপক্ষেই জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করা। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগকে বিব্রত করতে মাঠে নেমে নিজের সুনামের সঙ্গেই অবিচার করেছেন। তিনি জ্ঞানী মানুষ, কিন্তু কখনো কখনো তার ভূমিকা মেঠো রাজনৈতিক কর্মীদের চাইতে হাস্যকর ঠেকেছে।
প্রসঙ্গত তাজউদ্দিন আহমদের কথা উল্লেখ করে কিবরিয়া সাহেব বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে তিনি পারতেন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে। তার সেই যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ছিল। তাজউদ্দিন সাহেব সেসময় আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করলে আওয়ামী লীগের জন্য তা হতো বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিন আহমেদ ওই পথে যাননি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিব্রত করতে চাননি। কারণ তিনি রাজনীতিটা পরিষ্কার বুঝতেন। বঙ্গবন্ধুর সরকারকে দুর্বল করা যে প্রকারান্তরে বাংলাদেশকেই দুর্বল করা, বাংলাদেশবিরোধীদের উৎসাহিত করা- এটা তাজউদ্দিন সাহেব জানতেন এবং বুঝতেন। অথচ আওয়ামী লীগের তৈরি হয়েও কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের খুশি করেছেন। সেদিক থেকে খোন্দকার মোশতাকের ভূমিকা আর কামাল হোসেনের ভূমিকার মধ্যে শেষ বিচারে পার্থক্য টানা কঠিন হবে।
শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যার পর ১৪ বছর কেটে গেছে। ঘাতকরা চিহ্নিত হয়নি, খুনিদের বিচার ও শাস্তি হয়নি। দেশের জন্য যিনি ছিলেন নিবেদিত তাকে হত্যা করে যে শূন্যতা তৈরি করা হয়েছে তা সহজে পূরণ হবে না। আমাদের রাজনীতিতে যে মেধার শূন্যতা তা কাটানোর কোনো আগ্রহ কারো দেখা যায় না।
কিবরিয়া সাহেবকে হত্যার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শামসুর রাহমান যে কবিতাটি লিখেছিলেন তার কিছু অংশ উদ্ধৃত করেই লেখাটি শেষ করছি।
'তোমার কবর থেকে উঠে আসে স্বদেশের মৃত্তিকায়
দাঁড়িয়ে প্রশান্ত কণ্ঠস্বরে
সুস্পষ্ট সওয়াল করো এদেশের অনন্য সন্তান,
বলো, বলে দাও আজ কী ছিলো আমার অপরাধ?
এখন স্বীকার করি গোধূলি বেলায়
আমি ঘোর অপরাধী! স্বদেশকে শর্তহীন এক
মজনুর মতো দিনরাত্রি শুধু ভালোবেসে যাওয়া
অপরাধ সেই অস্ত্রবাহী ঘাতক এবং তার কর্তার নিকট'।
শামসুল কিবরিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা।