Published : 29 Jul 2020, 04:51 PM
পহেলা জুলাই ২০২০ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে, মারা গেছে পাঁচ লাখেরও বেশি। এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যত বেশি সম্ভব পরীক্ষা করা, আক্রান্তকে আইসোলেশনে চলে যাওয়া, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের পরীক্ষা করে আইসোলেশনের ওপর জোর দিয়েছেন। ৮ মার্চ প্রথম শনাক্তের পর প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১০৪ জনঘনত্ব নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশেও এখন আক্রান্তের এবং মৃত্যুর সংখ্যায় দ্রুত প্রসার ঘটছে। জুলাইয়ের এক তারিখ পর্যন্ত মোট নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ এবং সরকারি তথ্য অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা ১,৮৮৮ জন। এই পরিসংখ্যানের সাথে জেলাভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের এটা জানান দেয় যে, এটা সারাদেশে বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তকে চিহ্নিত করা এবং পরবর্তীতে তার সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রথম এবং একমাত্র পদক্ষেপ হচ্ছে পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া। তদুপরি, অন্যদের আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা রুখতে এবং সর্বোপরি এলাকা পর্যায়ে এর বিস্তার এবং সংক্রমণ থামাতে যথাসম্ভব পরীক্ষা করার বিকল্প নেই। কার্যকরী পরীক্ষাব্যবস্থাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের ভাইরাস বিস্তারের ধরন ও বিস্তার বুঝে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করেছে। করোনাভাইরাস আক্রান্তের পরীক্ষা করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য গাইডলাইনে বর্ণিত যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তার তালিকা দিয়ে নিজ নিজ দেশের গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। যে সকল লক্ষণ ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সাধারণত প্রকাশ পায় তার মধ্যে রয়েছে জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, বমি বমি ভাব, গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া বা ডায়রিয়া। বাংলাদেশও করোনাভাইরাস নিয়ে বেশকিছু গাইডলাইন তৈরি করেছে যেগুলো করোনাভাইরাস সম্পর্কিত অন্যান্য হালনাগাত সরকারি তথ্য করোনা ইনফো'র ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পরে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া বা না হওয়া। তাছাড়াও কিছু লক্ষণ যেমন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে আক্রান্তের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু এই ভাইরাসের সংক্রমণ এবং বিস্তার থামাতে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেমন কারো থেকে ন্যূনতম ৬ ফুট (২ মিটার) দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাঁশির সময় রুমাল বা হাতের কবজি দিয়ে ঢেকে দেওয়া, এবং তারপর রুমালকে সঠিক স্থানে ফেলা ও হাত ধোয়া, বাইরে গেলে নাখ ও মুখ ঢেকে যাওয়া, চোখ, হাত ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া বা নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে ন্যূনতম ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া। এটা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং জনবহুল দেশে কোভিড-১৯ এর বিস্তারের স্থান এবং ধরন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথাসম্ভব দ্রুত পরীক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে, আক্রন্তদের যদি যথাসম্ভব পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে চিহ্নিত করা না যায় তাহলে তাদের মাধ্যমে এলাকার অন্যদের মাঝেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এ পর্যায়ে যে প্রশ্নটি মনে আসে তা হলো, পুরো দেশের বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে বসবাসকারী জনসংখ্যাকে দ্রুততার সাথে পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসার সক্ষমতা আমাদের আছে কি না? তারপরেও এটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে যে, সবাইকে সেবার আওতায় আনতে করোনাভাইরাস পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আনুপাতিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে কি না। সরকারের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, নিচের ম্যাপে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি ঢাকা বা তার আশেপাশের জেলাগুলোতে অবস্থিত, সংখ্যা হিসেবে বললে মোট ৬৮টা পরীক্ষাকেন্দ্রের ৩৬টা শুধু ঢাকা জেলায় অবস্থিত। ঢাকার সাথে সাথে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য জেলাগুলোতে যেমন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, যশোর, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ইত্যাদি এলাকায়ও বাড়ছে। উল্লেখ্য যে, আগামীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সারাদেশে মোট ৬৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র যথেষ্ট নয়। নিচের টেবিলে দেখানো হয়েছে মোট ১৫ কোটি (বিবিএস ২০১১) লোকের জন্য রয়েছে মোট ৬৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র অর্থাৎ দেশের সব মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনতে প্রতিটা কেন্দ্রকে গড়ে ২২ লক্ষ লোকের পরীক্ষা করতে হবে। হালনাগাদ তথ্য (১ জুলাই ২০২০) অনুসারে, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের মোট সংখ্যার ১৯.৪৭ ভাগ লোকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অধিকন্তু নিচের টেবিলে দেখানো তথ্যমতে বরিশাল বিভাগের ৮০ লাখ লোকের জন্য সাকুল্যে একটা মাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র আছে যা দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ পরীক্ষা করতে পারে। ৩০ জুনের তথ্যমতে বরিশালের সাথে রংপুর এবং সিলেট বিভাগেও দিনে সাকুল্যে ৫০০ এর কম পরীক্ষা করতে পারে যদিও-বা ঢাকা বিভাগ দিনে ১০ হাজারের বেশি এবং চট্টগ্রাম বিভাগ দিনে ২ হাজারের বেশি পরীক্ষা করে থাকে। বিবিএস ২০১১-এর তথ্যমতে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং রাজশাহী বিভাগে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজারেও বেশি লোক বসবাস করে এবং বিশাল এই জনসংখ্যার জন্য প্রতিদিন এই সীমিত সংখ্যক করোনাভাইরাস পরীক্ষা অপ্রতুল।
টেবিল ১, ২০১১ সালের বিবিএস অনুসারে বিভাগ অনুযায়ী মোট আয়তন, জনসংখ্যা, জনঘনত্ব এবং ৩০শে জুলাই ২০২০ এর তথ্যমতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কেন্দ্রের সংখ্যা এবং পরীক্ষার সংখ্যা।
বিভাগ | আয়তন | ২০১১ সাল বিবিএস অনুসারে | মোট পরীক্ষাকেন্দ্র | ৩০ জুন তারিখে পরীক্ষার সংখ্যা | ৩০ জুন তারিখ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা | পরীক্ষার সংখ্যা (লাখে) | |
জনসংখ্যা | প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা | ||||||
বরিশাল | ১৩২২৫ | ৮৩২৫৬৬৬ | ৬১৩ | ১ | ২৩৪ | ১০৯০০ | ১৩১ |
চট্টগ্রাম | ৩৩৯০৯ | ২৮৪২৩০১৯ | ৮৩১ | ১১ | ২৯১৭ | ৮৪২৮১ | ২৮৯ |
ঢাকা | ২০৫৯৪ | ৩৬৪৩৩৫০৫ | ১৭৫১ | ৪২ | ১১৮৫০ | ৫৩১৪৮৮ | ১৪৫৯ |
খুলনা | ২২২৮৪ | ১৫৬৮৭৭৫৯ | ৬৯৯ | ৩ | ৭৩৫ | ২৯৭৮১ | ১৯০ |
ময়মনসিংহ | ১০৫৮৪ | ১১৩৭০০০০ | ১০৭৪ | ২ | ৯৯৮ | ৩৩৪২৬ | ২৯৪ |
রাজশাহী | ১৮১৫৩ | ১৮৪৮৪৮৫৮ | ১০০৭ | ৫ | ৮৪৬ | ৩১৬৯৪ | ১৭১ |
রংপুর | ১৬১৮৫ | ১৫৭৮৭৭৫৮ | ৯৬০ | ২ | ৩৭৬ | ২৪৫৪০ | ১৫৫ |
সিলেট | ১২৬৩৫ | ৯৯১০২১৯ | ৭৭৯ | ২ | ৪৭০ | ২০৩৫০ | ২০৮ |
মোট | ১৪৭৫৬৯ | ১৪৯৭৭২৩৬৪ | ৯৬৪ | ৬৮ | ১৮৪২৬ | ৭৬৬৪৬০ | ৫২৮ |
কেন আমাদের ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে বিস্তৃতভাবে পরীক্ষা করা দরকার?
ভৌগলিকভাবে কোথায় সংক্রমণ ঘটেছে বা ঘটেনি সেটা জানার জন্য ভৌগলিকভাবেই পরীক্ষা করা জরুরি, তারপরেই কেবল সংশ্লিষ্টরা অঞ্চলভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রধান দুটি সম্পদ জনবল এবং অর্থ বরাদ্দ কোথায় কি পরিমাণ দেওয়া লাগবে সে সিদ্ধান্তও পরীক্ষার ফলাফলের ওপরে নির্ভর করে। সংক্রমণ কোন এলাকায় ঘটেছে বা কি পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে তা না জানা গেলে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণের যে সকল পদ্ধতি যেমন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা, লকডাউন বা অন্যান্য সিদ্ধান্তই নেওয়া সম্ভব হবে না। ঢাকার জনঘনত্ব, পরিবেশ, মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় ঢাকাতে অবশ্যই অন্য একটা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার কথা, তারপরেও পরীক্ষার মাধমেই কেবল তা নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি করোনাভাইরাস পরীক্ষা আমাদের সময় বাঁচাতে এবং অঞ্চলভিত্তিক হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বরাদ্দে সাহায্য করে। তদুপরি কোন অঞ্চলে যদি সংক্রমণ কম হয়ে থাকে সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় জনবল এবং সরঞ্জামাদি অন্য অঞ্চলে নেওয়া যেতে পারে যেখানে সংক্রমণের হারও বেশি এবং একইসাথে এই সকল জিনিসের অভাব রয়েছে। এর বাইরেও যে সকল অঞ্চলে পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমণের হার বেশি পাওয়া যাবে সেখানে জনসমাগম, চলাচল বা শারীরিক দূরত্ব মানার জন্য আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা যেতে পারে। অবশেষে এলাকাভিত্তিক সংক্রমণ এড়ানোর জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বশর্ত হচ্ছে পরীক্ষার হালনাগাদ তথ্য এবং তার বিশ্লেষণ।
পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো বিকেন্দ্রিকরণের জন্য কিছু সুপারিশ
দক্ষিণ কোরিয়ার করোনাভাইরাস মোকাবিলার উদাহরণ থেকে বলা যায়, বেশি পরিমাণ পরীক্ষা এবং ভৌগলিকাভাবে আক্রান্ত এলাকাকে আলাদা করতে পারলে এলাকাভিত্তিক সংক্রমণ থামানো যেতে পারে। যাইহোক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগত পার্থক্যের বাইরেও দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ অনুযায়ী কাজ করা বাংলাদেশের জন্য দুইটি কারণে কঠিন হতে পারে। প্রথমত, এখানে যে পরিমাণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন সে অনুসারে পরীক্ষার কিট এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা। দ্বিতীয়ত, মহামারী অভিজ্ঞতা নীতিনির্ধারকদের জন্য নতুন হওয়ায় তাদের সিদ্ধান্তগুলো ঘনঘন পরিবর্তন হয় এবং দেশব্যাপী দ্রুততার সাথে পরীক্ষাকেন্দ্র খোলা। পরিস্থিতি পরিবর্তনে কিছু প্রয়োজনীয় কৌশল দেশের বিভিন্নপ্রান্তে থাকা বর্তমান পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশব্যাপী আরও বেশি মানুষকে পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পারে। এর জন্য সরকার নতুন কিছু কৌশল গ্রহণ করতে পারে। যেমন,
১. আইনি এবং ব্যবসায়িক বাঁধা উপেক্ষা করে জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব বিবেচনা করে দেশের সব এলাকায় পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা এবং আগে থেকেই চালু কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২. যেখানে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি সেখানকার লোকজনকে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের মধ্যে নিয়ে আসা, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. বেশি আক্রান্ত এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেন সেখানে আক্রান্ত সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়।
৪. যেখান প্রদুর্ভাব বেশি সেসব এলাকায় জরিপ, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহিত করা এবং নাগরিকদের নিকটবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য মোবাইল ফোনের কার্যকরী ব্যবহার করে।
৫. অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণে সরকার সারা দেশের স্কুল, কলেজ বা অনুরূপ সেবামূলক অবকাঠামো যা বর্তমানে বন্ধ আছে তা সাময়িকভাবে হাসপাতাল, পরীক্ষাকেন্দ্র বা কোয়ারেন্টাইন সুবিধায় রূপান্তরিত করতে পারে।
৬. পরিক্ষাকেন্দ্রগুলোর সেবা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া যেন লোকদের পরীক্ষা করানোর জন্য দূরের শহরে যাওয়া না লাগে। কারণ এভাবেই অনেক সময় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে এবং বাইরের এলাকায় সংক্রমণ ছড়ায়।
৭. দ্রুততার সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সুরক্ষাসামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণে সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া।
৮. পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যেন এক কেন্দ্র অন্য কেন্দ্রের প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে পারে।
৯. পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর তথ্যাবলী নিয়মিত হালনাগাদ করা। এসব তথ্য কোথায় কি ধরনের অভাব তা বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। তাছাড়া স্থানীয় সরকারও এসব তথ্য ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক সংক্রমণ দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
১০. পরিক্ষাকেন্দ্রগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করা যেতে পারে। তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন তাদের মাধ্যমে আবার সংক্রমণ না ঘটে হীতে বিপরীত হয়।
১১. স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি জেলাতে ভৌগলিকভাবে (অর্থাৎ জেলা সদরে) করোনাভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা। এটি সবচেয়ে সংক্রমিত জেলা বোঝার বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং সেই জেলার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কৌশল ঠিক করতে সহায়তা করবে।
তদুপরি, নীতিনির্ধারক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি কাজ করা উচিত এবং স্থানীয় নাগরিকদের জন্য সর্বশেষ তথ্য জানাতে একটি শক্তিশালী সহযোগিতা নেটওয়ার্ক তৈরি করা উচিত যাতে লোকেরা তাদের অঞ্চল সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হয় এবং অবিলম্বে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। অধিকন্তু, আমরা সুপারিশ করছি যে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং সংখ্যা অনুযায়ী এবং অঞ্চলগুলির দূরত্ব বিবেচনা করে আরও পরীক্ষার সুবিধা চালু করা উচিত। পরিশেষে, এই মহামারী থেকে নিজের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সমন্বিতভাবেই এই দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।