নিজের কষ্টের কাউন্সিলর নিজেকেই হতে হবে, উঠে দাঁড়াতে হবে, চলতে হবে। প্রিয় খাবারটা নিজেকেই নিয়ে খেতে হবে।
Published : 13 Feb 2024, 04:55 PM
২০১৫ সালে আমি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। তখন আমি ইউএসএইডের অর্থায়নে পরিচালিত এফএইচআই ৩৬০-এ চাকুরিরত ছিলাম। জীবন তখন ব্যস্ততার চরম তুঙ্গে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম ব্রেস্টের একটা মেমোগ্রাফি করাব। কিন্তু আলসেমির কারণে করা হয়ে ওঠেনি। বেশ কিছুদিন ধরে আমি আমার বাম ব্রেস্টে ব্যথা অনুভব করছিলাম এবং আস্তে আস্তে ব্যথাটা বেড়েই যাচ্ছিল। আমি ভাবলাম এটা পিরিয়ডের কারণে হতে পারে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে হঠাৎ আমি নিজেই হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম বাম ব্রেস্টের নিচের দিকে একটা ছোট্ট গোল চাকার মতো কিছু রয়েছে। এটা ২০১৫ সালের জুন মাস। আমি আমার হাজবেন্ডকে সঙ্গে সঙ্গে জানালাম। ও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে বলল, “ডাক্তার দেখাতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।” আমি ওকেই একজন ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুঁজে বের করার দায়িত্বটা দিয়ে দিলাম। ওর ওপর নির্ভর করে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এটা মনে হয় তেমন কিছু না, এমন ভাবনা থেকে একটু অবহেলাও করলাম বোধ হয়।
এরই মাঝে দুই মাস চলে গেল। আমলে না নিলেও মনের মধ্যে একটা চিন্তা তোলপাড় করছিল। আমি সময় পেয়ে নিজেই খোঁজ করলাম। ডা. তাসমিয়া তাহমিদকে বেছে নিলাম দেখাবার জন্য।
ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারের ডিফাম হসপিটালে ডা. তাসমিয়া তাহমিদের চেম্বার ছিল। আমি ফোনে যোগাযোগ করে সিরিয়াল নিলাম এবং সেদিন আমার হাজবেন্ডের সময় ছিল না বলে একাই চলে গেলাম। সময়টা ৮ অগাস্ট, ২০১৫।
তাসমিয়া আপা লন্ডনে থাকেন। ওখানে আপা ব্রেস্টেরই চিকিৎসক। প্রতি মাসে একবার আসতেন। তিনি সাধারণত রোগীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন আর দেশে এসে অপারেশন করেন।
আমার আল্ট্রাসাউন্ড, মেমোগ্রাফি ও এফএনএফসি রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার আপার সঙ্গে কথা বলি স্কাইপে। আপা বললেন এখানো বেশ ছোট (আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টে ক্যান্সার ছিল ১.২৫) এবং এখনই অপারেশন করতে হবে। আমি কেন যেন একটুও ঘাবড়ালাম না। কেন যেন মন থেকে একটা সাহস জোর দিচ্ছে এবং জানান দিচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার হাজবেন্ড ভেতরে ভেতরে ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে খুব সাহস দিচ্ছে ''কিছুই হবে না, পান্না। তুমি একদম ভালো হয়ে যাবে।” ওর কথার মধ্যে ছিল গভীর ভালোবাসা, ভীতি আর বিশ্বাস। আমরা বাড়ি এসে আমাদের আত্মীয়, পরিচিত ডাক্তার কলিগদের সঙ্গে কথা বলি এবং অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেই।
ডা. তাসমিয়া আপা জানান তিনি ২৪ অগাস্ট দেশে আসবেন। আমি পরের দিন ২৫ অগাস্ট, ২০১৫ অপারেশন করি। অপারেশনটা খুবই ভালো হয়েছিল। তারপর টিউমার বয়োপসি করতে দেওয়া হয়। ডিফাম থেকে ইন্ডিয়াতে পাঠায় বয়োপসির জন্য। ১৫ দিন পরে রিপোর্ট আসে এবং রিপোর্টে আসে স্টেজ ২.১। আমি যথারীতি অপারেশনের ৮ দিন পর থেকে স্বাভাবিক কাজ এবং অফিস শুরু করি।
ডা. তাসমিয়া আপার সাজেশন মতো লন্ডনেরই একজন অনকোলজিস্টের সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট করা হয় এবং ভিডিও কলে চিকিৎসার বিস্তারিত ধাপ নিয়ে আলোচনা করি। উনি ভীষণভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বলেন কিছুই হবে না তোমার। একদম সেরে উঠবে। কারণ হিসেবে আমার বয়স কম হওয়ার কথা বললেন। তাছাড়া ক্যান্সার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়েছে। তার মতে চারটি কেমো লাগবে আর রেডিও থেরাপি নাও লাগতে পারে। ডাক্তার জানান, অপারেশনের তিন সপ্তাহের মধ্যে কেমো শুরু করতে হবে।
কেমো নিয়ে আমার ভীষণ ভীতি ছিল কারণ আমার শাশুড়ি ২০০৫ সালে ব্লাড ক্যান্সারে মারা যান। উনার একদম শেষপর্যায়ে ধরা পড়েছিল এবং চিকিৎসা চলাকালীন ১৫ দিনের মধ্যে চলে যান। তখনই বুঝেছিলাম শাশুড়ির চিকিৎসা সঠিক হয়নি। এ জন্য এখানে চিকিৎসা নিয়ে খুব ভীতি থেকে আমরা ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিলাম।
তিনটি সপ্তাহ ধরে আমি আর আমার হাজবেন্ড পাগলের মতো ছুটেছি চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জানতে। একজন ভালো চিকিৎসক খুঁজেছি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যেন সঠিক চিকিৎসার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি। দেশে আমরা স্কয়ার, ল্যাবএইড, পপুলার এবং ইউনাইটেড হসপিটালের বিশিষ্ট অনকোলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের সবার পরামর্শ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি একই ছিল। ইউনাইটেডে একদিন আমার এক কলিগের সঙ্গে দেখা হলো, তার মেয়ের লাঙ ক্যান্সার, কেমোথেরাপি চলছে। তিনি একজন ডাক্তার এবং আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপা আমাকে ল্যাবএইডে ডা. মোফাজ্জল সাহেবের আন্ডারে চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দেন।
বাইরে যাব কিন্তু চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য, চিকিৎসা ব্যায় কেমন হতে পারে এসব জানতে পারছি না। আবার হাতে যে সময় ছিল তাতে পাসপোর্ট রিনিউ, ভিসা, ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট— এত চিন্তা করে উঠতে পারছি না। তার ওপর আমার ছেলের জেএসসি পরীক্ষা। কেউ পরামর্শ দিল কেমোতে না যেয়ে বিশুদ্ধ খাবার আর থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে। ওখানেও গেলাম। তবে সেই চিকিৎসায় মন সায় দিল না।
টাটা ইন্ডিয়াতেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সঠিক তথ্য দেওয়ার মতো কাউকে পেলাম না। এ সময়টা এত কঠিন তা আজও মনে পড়লে শিহরিত হই। দুজন ঘুরেছি, কেউ কারও দিকে তাকাতে পারিনি। কী সিদ্ধান্ত নেব? কোন ডাক্তারের আওতায় কেমো শুরু করব? কত টাকা লাগবে? এর মধ্যে আমার স্বামীর চাকরির প্রোজেক্টও শেষ হয়ে যায়। ছেলেটারও জেএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আমার সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে কিছু মিলাতে পারছি না। এ সময় একটাই ভাবনা যত বিপদই আসুক না কেন মনের জোর ধরে রাখতে হবে।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বললাম, সকালে উঠে যার কাছে যেতে মন চায় সেখানেই যাব। তৃতীয় সপ্তাহের শেষের দিনে আমরা ল্যাবএইড হসপিটালে ডা. মোফাজ্জলের কাছে প্রথম কেমো শুরু করি।
আমার লেগেছিল চারটা + চারটা, ২ সার্কেলে মোট ৮টা কেমো। প্রতিটা কেমোথেরাপির তৃতীয় দিনে নাভিতে একটা ইনজেকশন। কেমো পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল প্রচণ্ড অ্যাসিডিটি, সব খাবার বিষের মতো, শরীর নিথর হয়ে আসা। তবে ডাক্তার যেভাবেই হোক খেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি এটা মেনে নিয়েছিলাম খুব শক্তভাবে। আমার একটাই চিন্তা ছিল ভেঙ্গে পড়া যাবে না।
তার ফলে আমি বেশিরভাগ সময়ে মোটামুটি সুস্থই থেকেছি, বিশেষ কোনো অসুবিধা হয়নি। আল্লাহর রহমতে ভালোই ছিলাম। কোমোর পাশাপাশি ১৯টা রেডিওথেরাপি নিয়েছি ডেলটা হসপিটালে। ডা. আমাকে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছিলেন কেমোথেরাপি পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। শারীরিক পরিবর্তন বলা সহজ কিন্তু মেনে নেওয়া অত সহজ না। যে চুল ছিল আমার প্রিয় সেটা আমারই চোখের সামনে গোছা ধরে পড়ে গেল, চোখের পাপড়ি, ভ্রু, হাত-পা সব যেন হারিয়ে গেল। নিজের কাছে নিজেই অচেনা। তারপর আবার নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। চুল নেই তো কি হয়েছে? আবার গজাবে।
আমি আমার এ জার্নিটা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি কারণ ক্যান্সার মানেই মানুষ মনে করে শেষ। তারা এমনভাবে আমাকে উপস্থাপন করবে যেন আমার চেয়ে সে কষ্ট পাচ্ছে বেশি। আর আমি এটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম। মৃত্যু যেদিন লেখা আছে সেদিনই হবে। আমাদের তো অনেক অসুখই হয় তখন যেভাবে নেই, এটাও তাই নিয়েছিলাম। তাই তো কোনোদিন কান্না পায় নাই, ঘর গৃহস্থালি সামলেছি, সব কাজই করেছি। কেমোথেরাপির সিডিউলটা এমনভাবে করছিলাম যেন কেমো দিয়ে শুক্র-শনি অফিস বন্ধ তাহলে ছুটি নিতে না হয়।
প্রতিটা কেমোর দিনে আমাকে সযত্নে নিয়ে গেছে যুবরাজ আর আমার তিন বোন পাশে থেকেছেন যতক্ষণ কেমো চলত।
কেমো নিয়ে পরের দিন বরিশাল ফিল্ড ভিজিট করেছি। ফিরে এসে আবার পরের দিন কেমো দিতে চলে গিয়েছি। আমার মনে হয় মানুষের অসুখ থাকে মনে।
এরমধ্যে আমাদের প্রজেক্ট শেষ হয়ে যাবে তাই আমি আবার নতুন প্রজেক্টে আবেদন করলাম। ইন্টারভিউয়ের চিঠি এলো। একটু চিন্তায় পড়লাম কেমো দিয়ে কীভাবে কথা বলব। দোয়া করছি, আল্লাহ ইন্টারভিউ ডেটটা যেন কেমোর ৭/৮ দিন পরে হয়। আমার দোয়া কবুল হয়েছিল।
আমি ভালোভাবে ইন্টারভিউ দিয়ে এক বছরের জন্য আবার চাকরিতে যোগদান করলাম। এটা ছিল আরও চ্যালেঞ্জিং জব। নিউট্রিশন প্রজেক্ট যেটায় সারা বাংলাদেশে নবজাতক শিশুদের ফুডপ্লেট তৈরি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ১৬ ব্যাচকে ট্রেনিং দেওয়া। ট্রেনিং ছিল যশোর আর খুলনায়। তখন আমার রেডিওথেরাপি চলছিল। আমি ট্রেনিং শেষ করে প্লেনে করে ঢাকায় আসতাম। আমার হাজব্যান্ড আমাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ডেলটায় গিয়ে রাত ৮:৩০ মিনিটে রেডিওথেরাপি নিয়ে বাসায় যেত। ১৯টা রেডিওথেরাপি চলাকালীন আমি হসপিটাল থেকে সরাসরি অফিসে চলে গেছি।
তবে এ সময়টাতে কাউন্সিলিং খুব জরুরি। এ সময় রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়ে। তাই এ সময় মানসিক শক্তি প্রচণ্ড প্রয়োজন। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে আমি অফিস, বাড়ির রান্না, ঘরের কাজ সবই সামলেছি। পুরো চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। ও আমার কাউন্সিলর। ও তো বেশি ভেঙ্গে পড়েছিল কিন্তু আমার সামনে খুব সাহসী। সবসময় ছিলেন তিন বোন আর শ্বশুর আমার পাশে ছিলেন।
সবকিছু ঠিকঠাক শেষ হয়ে ফলোআপ শুরু করার দেড় বছর পর আবার লিভার এবং গলার লিম্ফনোড ধরা পড়ে। এবার ডাক্তার সাহেব উল্টো-পাল্টা করে বসেন। একবার কেমোথেরাপি চালু করে একটা দিয়ে আবার মুখে দিতে শুরু করেন। কারণ তখন তিনি অঙ্ক মেলাতে পরছেন না। মুখে কেমোর দাম পড়ছে ৪৫০০০/= টাকা ২১ দিনের। এটা কতটা দিতে হবে সেটাও অনিশ্চিত।
তারপর এবার আমার অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে পড়ছে। এবারের চিকিৎসা শরীর যেন মেনে নিতে পারছে না। আমার মায়ের পরিবার চাচ্ছে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যেতে কিন্তু আমার হাজব্যান্ড ভয় পাচ্ছেন। তখন আমার মা আমার বড়বোনকে বলেন আর যেন দেরি না করি ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। আমিও যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। তারপর ২০১৯ সালে আমার বোনকে নিয়ে চলে যাই মুম্বাই সুশ্রুত হাসপাতালে ডা. শুরেস আদভানির কাছে।
ডা. আদভানির প্রথম কথা ছিল "মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে।" তিনি আমার রিপোর্ট রিভিউ করে আরও কিছু পরীক্ষা করিয়ে বললেন আমার একটা ওভারিই ছিল সেটা ফেলে দিয়ে তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেতে। আমি দেশে এসে অপারেশন করে ওষুধ খাওয়া শুরু করি আর বছরে একবার আমি ফলোআপে যাই। এখন পর্যন্ত আল্লাহ রহমত করেছেন আমি ভালো আছি।
এ বিষয়ে আমার এতটুকু শিক্ষা হলো যে আমাদের দেশের চিকিৎকরা ফর্মুলা অনুযায়ী চিকিৎসা দেন এবং কোনো জটিল অবস্থা হলে যখন রিপোর্টের অ্যানালিসিস করতে পারেন না তখন আবোল-তাবোল চিকিৎসা দেন। সে ক্ষেত্রে রিপোর্টের অ্যানালিসিস করতেও সময় দিতে চান না।
শারীরিক সমস্যার চেয়ে বড় সমস্যা হলো সামাজিক সমস্যা। কেমোথেরাপি চলাকালীন একজন রোগীর বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয় তা সে রোগী নিজেই মেনে নিতে পারে না। তারপর যদি তাকে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে সে কেন হিজাব পরে, চোখের ভ্রু কই, হাতের নখ কালো কেন, কেন এখনো বেঁচে আছে ইত্যাদি মর্মন্তুদ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তখন বেঁচে থাকা দুঃসহ হয়ে পড়ে।
পরিবার অসুস্থ ভেবে পারিবারিক যে কোনো কাজে তার পরামর্শ নেওয়া স্থগিত করেন। শারীরিক ও মানসিক শক্তি ফিরে এলেও সমাজের এবং কাজে মানুষের স্বীকৃতি পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে।
ক্যান্সারের একটা লম্বা চিকিৎসা তারপর বেঁচে উঠে সার্ভাইভার হয়ে জীবন কাটানো এত সহজ নয়। সব কাজ চলছে কিন্তু কথায় কথায় ‘ও অসুস্থ’ এ শব্দটা যেন জাতীয় সংগীতের মতো বাজতে থাকে।
এ জীবনটার অনেক কিছুই পাল্টে গেল। মতাদর্শ পরিবর্তন হলো। মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরি। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকার মতো শক্তি থাকা প্রয়োজন। জীবন মানে খুবই অল্প এবং অস্থায়ী একটা সময়। একটু সুখ পাওয়ার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
নিজের কষ্টের কাউন্সিলর নিজেকেই হতে হবে, উঠে দাঁড়াতে হবে চলতে হবে। প্রিয় খাবারটা নিজেকেই নিয়ে খেতে হবে।
এখন আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। আমার একটা বুটিকসের শো-রুম চালাই। এটা আমার আপন ভূবন। জীবনে যা কিছুই ঘটুক সবকিছুর পেছনেই একটা কারণ অবশ্যই আছে। তাই বিপদ আসলে ভেঙে না পড়ে সেখান থেকে উৎরানোর জন্য সর্বোচ্চ যা করতে পারি সেটা করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের পরিচয়।
লেখক: উদ্যোক্তা ও ক্যান্সার লড়াকুদের সংগঠক
(সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশনের ‘এখানে থেমো না’ বইয়ে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে)