ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাবার তারিখ ঘোষণা করেছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন। কিন্তু তারা ১৯৪৭ সালেই ভারত ছেড়ে গেল কেন?
Published : 21 Dec 2022, 05:23 PM
চলে গেল অভ্রভেদী ১৬ ডিসেম্বর– আবারও আত্মানুসন্ধান। মুক্তিযুদ্ধের আগুনের ভেতর দিয়ে হেঁটে আসা আমাদের প্রজন্ম বেঁচে থাকতেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়ে গেছে, বিক্রিত হয়ে গেছে। অনেক দেশেই এটা হয়েছে। পাকিস্তানি জাতটাকে স্কুল সিলেবাস থেকে মিডিয়া সর্বত্রই একাত্তরের ডাহা মিথ্যে ইতিহাস গেলানো হয়েছে ও হচ্ছে। এটাও মোটামুটি তেমনই। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেস তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবার ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। কয়েক দশক আগে গবেষকেরা যা সামনে এনেছিলেন, সেটাই তুলে ধরছি মোটা দাগে।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা ও ক্রমান্বয়ে ভারত দখল করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশরা অখণ্ড স্বাধীন ভারতের পরিকল্পনা (ক্যাবিনেট মিশন) পেশ করে, যা ওই বছরের ২৪ মে কংগ্রেস ও ২৫ জুন মুসলিম লীগ মেনে নেয়। অর্থাৎ অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা অবধারিত। কিন্তু ১০ জুলাই বোম্বে রেলওয়ে স্টেশনে নেহেরু সাংবাদিকদেরকে বলেন কংগ্রেস ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে রাজনৈতিক দল হিসেবে কিন্তু তারা গিয়ে বসবেন পার্লামেন্টে যা সার্বভৌম। এতে জিন্নাহ ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যাবিনেট মিশন বর্জন করে পাকিস্তান প্রস্তাবে ফিরে আসেন কারণ তার মতে পার্লামেন্টে মেজরিটি দল হিসেবে কংগ্রেস ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেবে।
১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি ঘোষণা করেন ব্রিটিশ সরকার পরের বছর ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন ভারতকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যাবে। ওই মোতাবেক সব দলে প্রস্তুতি চলতে থাকে।
কিন্তু তারা ১৯৪৭ সালের অগাস্টে পাকিস্তান এবং ভারতকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যায়।
কেন? এমন কি ঘটল যাতে ‘প্রবল পরাক্রান্ত অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর’-এর হঠাৎ লোটাকম্বল নিয়ে দৌড়?
কারণ আছে। সমূহ কারণ আছে ওই ঐতিহাসিক ডিগবাজির যা ১৯৫৬ সালে জানিয়েছেন আর কেউ নন ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
অবসর গ্রহণের পর মি. অ্যাটলি ১৯৫৬ সালে কলকাতা সফরে এলে পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর বিচারপতি ফণিভূষণ চক্রবর্তী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন কংগ্রেসের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তো ১৯৪৭ সালের কয়েক বছর আগেই স্তিমিত, তারপর আর তেমন কোনো আন্দোলনের চাপ ছিল না। তাছাড়া মি. অ্যাটলি নিজেই তো ভারত ছেড়ে যাবার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন ১৯৪৮ সালের জুন। কিন্তু তারা ১৯৪৭ সালেই ভারত ছেড়ে গেলেন কেন? জবাবে মি. অ্যাটলি বলেছিলেন, সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী এবং ভারতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিদ্রোহ। স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের অবদান কতখানি সে প্রশ্নের জবাবে তিনি “তাচ্ছিল্যের হাসিতে ঠোঁট বাঁকাইয়া বলিলেন ‘মিনিম্যাল’।”
অর্থাৎ ‘ইট্টুখানি’!
হোয়াট? স্বাধীনতা অর্জনে সুবিশাল কংগ্রেসের প্রভাব ‘ইট্টুখানি’? এবং তা বলছেন ওই সময়ের সর্বোচ্চ ব্রিটিশ নেতা! তাহলে তো ছোট দল মুসলিম লীগের প্রভাব নিশ্চয় আরও ‘ইট্টুখানি’! তাহলে পাক-ভারতের স্বাধীনতাটা আনল কে? তাহলে এতদিন আমরা কী ঘোড়ার ডিম ইতিহাস পড়লাম? ঘটনা কী?
১৯৪৫ সাল। নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারত স্বাধীন করার জন্য জাপানের সাহায্যে বিপুল বিক্রমে দূরপ্রাচ্য থেকে যুদ্ধ করে বিভিন্ন দেশ জয় করতে করতে ভারতের দোরগোড়ায় এসেছিল। কিন্তু জাপান পরাজিত হবার পরে রসদের অভাবে তারা ব্রিটিশ সৈন্যদলের কাছে আত্মসমর্পন করেছে। নেতাজী কোথাও নেই। অনেকে বলেন তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, অনেকে বলেন তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনে গেছেন। ফৌজের প্রায় পঁচিশ হাজার বন্দী সৈন্যদের পাহারায় আছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য। বন্দী ও প্রহরীরা পরস্পরের সাথে কথা বলছে নিজেদের ভাষায়।
প্রহরীরা রুদ্ধশ্বাসে শুনছে যেন রূপকথার গল্প। শুনছে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য নেতাজী ও ফৌজের সৈন্যদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টার গল্প। এদেরই গর্বিত পদভরে টলমল করেছে বার্মা, থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, ইম্ফল, কোহিমা। অথচ ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদেরকে বলা হয়েছিল জাপান ভারত আক্রমণ করেছে, তাই তারা আজাদ হিন্দ ফৌজকে জাপানি বাহিনী মনে করে যুদ্ধ করে তাদেরকে বন্দী করেছে। আহা ! তারা যদি জানত আক্রমণকারীরা জাপানি নয় তারা নেতাজীর কমান্ডে মুক্তিযোদ্ধা আজাদ হিন্দ ফৌজ তাহলে তখনই তারা বিদ্রোহ করে ব্রিটিশকে কচুকাটা করে ভারতবর্ষ স্বাধীন করে ফেলত।
বন্দীরা বলে যায় তাদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনী, নেতাজীর কাহিনী, জলে-জঙ্গলে-পাহাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দিল্লী চলো’-এর মরণপণ যুদ্ধের কথা। প্রহরীরা গালে হাত দিয়ে মোহাচ্ছন্ন হয়ে শুনতে থাকে। ধীরে ধীরে বন্দীদের বুক থেকে প্রহরীদের বুকে চক্রবৃদ্ধিহারে সংক্রমিত হয় দেশপ্রেম– এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, চার থেকে ষোলো, ষোলো থেকে দুইশ ছাপ্পান্নো……. লক্ষ প্রহরীর বুকে প্রাগৈতিহাসিক বিশাল প্রাণীর মতো রক্তচোখে উঠে দাঁড়াল শতাব্দীর ক্ষুধিত দেশপ্রেম। ব্যারাকগুলোতে শুরু হলো:
– চা বানাও।
– বানাব না।
– জুতো পালিশ করো।
– করব না।
– বন্দুক সাফ করো।
– করব না।
আতংকে আঁতকে উঠল ব্রিটিশরা। সেনাবাহিনীতে চেইন অফ কমান্ড ভেঙে পড়ছে! প্রতিটি সৈন্যদল টিকেই থাকে তার চেইন অফ কমান্ডের ওপর, কোনো সৈন্য তার বসের হুকুম মানবে না এ তো কল্পনাই করা যায় না ! কবি টেনিসন লিখেছেন:
Theirs not to make reply,
Theirs not to reason why,
Theirs but to do and die…
তাদের অধিকার নেই তর্ক করার, তাদের অধিকার নেই প্রশ্ন করার, তারা শুধু আদেশ পালন করবে ও মরবে।
ভারতে তখন চল্লিশ হাজার ব্রিটিশ সৈন্যের দিকে রক্তচোখে তাকিয়ে আছে পঁচিশ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য। এই সাদারা সাগরের ওপার থেকে এসে প্রায় দুইশ বছর পায়ের নীচে পিষেছে তাদের মাতৃভূমিকে– খুন করেছে, ফাঁসি দিয়েছে অগণিত ভারতীয়কে। সেই পঁচিশ লক্ষ ভারতীয় সৈন্যের কেউ একজন ভুল করে হলেও একটা গুলি ছুঁড়লেই চেইন রিয়্যাকশনে তৎক্ষণাৎ ব্রিটিশদের ওপরে গর্জে উঠবে লক্ষ বন্দুক। এবং তা ভারতে সীমাবদ্ধ থাকবে না– ওই দাবানল মুহূর্তে ছড়িয়ে যাবে এশিয়া-আফ্রিকায় প্রতিটি ব্রিটিশ উপনিবেশে। তা দেখে বসে থাকবে না ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশসহ অন্য উপনিবেশগুলোর শতাব্দী ধরে লাঞ্ছিত মানুষগুলোও। প্রতিটি উপনিবেশে পোকামাকড়ের মতো মারা পড়বে লক্ষ লক্ষ ইউরোপীয় ‘প্রভু’রা, লণ্ডভণ্ড ও রক্তাক্ত হয়ে যাবে এশিয়া-আফ্রিকা।
কল্পনা নয়, হিসেবের কড়ি। ওই হিসেব করার বুদ্ধি ব্রিটিশরা রাখে। উদ্বিগ্ন হলো লণ্ডনের মন্ত্রীসভা– উদ্বিগ্ন হলেন হার এক্সেলেন্সি কুইন।
এই মারাত্মক স্পর্শকাতর সময়ে ৫ নভেম্বর ১৯৪৫ দিল্লির লালকেল্লায় ‘বিচার’ শুরু হলো আজাদ হিন্দ ফৌজের মেজর জেনারেল শাহনেওয়াজ খান, কর্নেল সায়গল আর মেজর ধীলনের। সাথে সাথে আত্মকলহে শতভাগে বিভক্ত ছত্রিশ কোটি ভারতবাসী আমাদের একাত্তরের মতো দেশপ্রেমের বিনিসুতোর মালায় বাঁধা পড়ে গেল। আসমুদ্র হিমাচলে বিস্ফোরিত হলো জনতার ভৈরব গর্জন– ‘বিচার বন্ধ কর’। বাংলা-বোম্বে-এলাহাবাদ-বেনারস-করাচী-পাটনা-রাওয়ালপিন্ডি সর্বত্র বিস্ফোরণ, এক কলকাতাতেই নিহত ৩২ আহত ২০০ জন– ব্রিটিশ পক্ষেও নিহত ১ আহত ১৮৮।
ভাতের হাড়ির মতো টগবগ করে ফুটছে ভারতবর্ষ। অন্তরীক্ষে সাফল্যের হাসি হাসছেন নেতাজী; অদৃশ্য থেকে তিনি তার শালপ্রাংশু সহস্রবাহুতে প্রচণ্ড চেপে ধরেছেন ব্রিটিশের গলা।
“কণ্ঠ পাকড়ি ধরিল আঁকড়ি দুইজনা দুইজনে”।
কোথায় পড়ে রইলেন জিন্নাহ-নেহেরু-গান্ধী, কোথায় পড়ে রইল কংগ্রেস-মুসলিম লীগ। তাদেরকে ছাড়িয়ে আকাশচুম্বী হয়ে উঠল নেতাজী ও ফৌজের মহিমা, তারাই হয়ে উঠলেন স্বাধীনতার সর্বোচ্চ প্রতীক। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা ড. পট্টভি সীতারামাইয়া লিখেছেন, “আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীরা আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মেঘাবৃত করিয়া ফেলিয়াছে। মনে হইতেছে যেন তাহারা গোটা কংগ্রেসকেই সূর্যগ্রহণের মতো ঢাকিয়া দিয়াছে।”
ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল টুকার লিখলেন, “ভবিষ্যৎ অত্যন্ত বিপদজনক। আজাদ হিন্দ ফৌজ আমাদের সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করিবার হুমকি হইয়া উঠিয়াছে।”
ইতিহাসবিদ হিউ টয় লিখলেন, “হিন্দ ফৌজকে কেন্দ্র করিয়া যে গণদাবী মাথা তুলিয়া দাঁড়াইল ভারতীয় সেনাবাহিনীও তাহার প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া পড়িল… তাহাদের ভিতর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ হইল যাহা আগে ছিল না।”
ভাষ্যকার ফিলিপ মেসন লিখলেন, “পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, জাতি আজাদ হিন্দ ফৌজকে স্বাধীনতার বীর যোদ্ধা হিসেবে অভিনন্দিত করে ফৌজের ‘পতাকা দিবস’ পালন করেছে।”
ঘটনা অজস্র, সংক্ষেপ করি।
১) ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় নৌ-সেনারা ৭৮টি যুদ্ধজাহাজে ব্রিটিশ অফিসারদেরকে বন্দী করে নেতাজীর বিশাল ছবি টাঙিয়ে কানফাটা ভোঁ ভোঁ হর্ন বাজিয়ে বিদ্রোহে ফেটে পড়ল। বিভিন্ন বন্দরে অসহায় দাঁড়ানো ব্রিটিশ সৈন্য ও সরকারের চোখের সামনে দিয়েই লক্ষ জনতা মাছধরা নৌকো সাম্পান যা কিছু ছিল তাই দিয়ে বিদ্রোহী জাহাজগুলোতে খাবার ও পানি পৌঁছে দিল।
২) আদালত মেজর জেনারেল শাহনেওয়াজ খান, কর্নেল সায়গল আর মেজর ধীলনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিলে ভারতীয় বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ক্লড অকিনলেক ব্রিটিশ সরকারকে লিখলেন (পরে সেগুলো প্রকাশ পেয়েছে), “(এই) শাস্তিকে কার্যে পরিণত করিবার চেষ্টা করিলে সেনাবিদ্রোহ অবধারিত”।
৩) এবং তিনি তার ‘বিশেষ ক্ষমতাবলে’ আদালতের রায় বাতিল করে সকলকে মুক্তি দিলেন ১৯৪৬ সালের ৪ জানুয়ারি। বুদ্ধিমান ব্রিটিশরা এরপর ফৌজের আর কোনো সৈন্যের বিচার করার সাহস করেনি কারণ ততদিনে তারা বাতাস টের পেয়ে গেছে।
৪) ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের ভারতীয় পাইলটরা ফৌজের সমর্থনে কর্মবিরতি হরতাল পালন করলেন ও মামলার জন্য প্রকাশ্যে চাঁদা তুললেন।
৫) বড়লাট লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ সরকারকে লিখলেন, “ভারতীয় সৈন্যদের দ্বারা দেশবাসীকে দমন করার চেষ্টা করিলে বিস্ফোরণ অনিবার্য্য”।
৬) ভারত জুড়ে তখন আর্মি ব্যারাকগুলোতে ভারতীয় সৈন্যদের আদেশ অমান্য ও অসন্তোষের ধোঁয়া।
ব্রিটিশরা একদিকে খুব চাতুর্য্য ও সাফল্যের সাথে লীগ-কংগ্রেসের নেতাদেরকে সাথে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল ও অন্যদিকে পাততাড়ি গোটানোর আয়োজন করছিল। নেতারা জাতিকে বোঝালেন, যে স্বাধীনতার জন্য এত আত্মত্যাগ এত সংঘর্ষ এত মৃত্যু, সেই স্বাধীনতা একেবারে সুনিশ্চিত ও দ্বারপ্রান্তে, এখন আর হিংসা খুনোখুনির দরকার নেই। এতে কাজ হলো। নেতারা নৌ-বিদ্রোহীদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলেন, বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করল।
গণমানস শান্ত করতে ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেছিল তারা ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যাবে পরের বছর ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন। তারা হয়তো ভেবেছিল স্বাধীনতা দেওয়ার জটিল আয়োজন সম্পন্ন করতে ওরকম সময় লাগবে। কিন্তু যেহেতু তার অনেক আগেই তা হয়ে গেল, সম্ভবত তাই তারা আর ঝুঁকির মধ্যে না থেকে ১৯৪৭ সালের অগাস্টেই চলে গেছে। গবেষক ধনঞ্জয় ভাট, অনিন্দ্য রায় বর্মন, খ্যাতনামা লেখক ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রফুল্ল গোরাদিয়াসহ অনেক গবেষক, বিশেষ করে অর্ধেন্দু বোস ও মেজর জেনারেল গগনদীপ বকশী (অব) এ বিষয়ে অজস্র লিখেছেন, সেগুলোতে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনে লীগ-কংগ্রেসের অবদান রয়েছে। কিন্তু তথ্য-বিশ্লেষণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে এতে নেতাজী ও তার আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদানই সর্বোচ্চ।
তথ্যসূত্র:
১। প্রধান সূত্র: "আমি সুভাষ বলছি" - শৈলেশ দে, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০১ - ৪৪৬।
২। “British Archives, Secret Letters Reveal Netaji, not Gandhi gave us freedom” বা এ ধরণের শব্দাবলী ইন্টারনেটে সার্চ করলে এর সমর্থনে অজস্র তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে।