আমরা যদি পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষা করতে না পারি, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে না পারি, সামাজিক সবচেয়ে বড় উৎসবটি সাধারণ গ্রামীণ মানুষের কাছে উৎসবের বদলে বিলাসিতা এবং দিনটিতে নিজেদের গুটিয়ে রাখার, আড়ালে রাখার সংস্কৃতিতে রূপ লাভ করবে।
Published : 13 Apr 2024, 07:38 PM
সাংগ্রাইং আসার আগ থেকেই গ্রামে গ্রামে ছড়ায় ছড়ায় নারীদের বড়-ভারী কাপড় ধোয়ার হিড়িক পড়ে যেতে দেখতাম একদা। পাহাড়ে বড় সামাজিক উৎসব ‘বিজু’, ‘সাংগ্রাইং’, ‘বিষু’, ‘বৈসু’, ‘বিহু’, ‘সাংলান’, ‘সাংক্রাই’, ‘চাংক্রান’। জাতিগোষ্ঠী ভেদে উৎসবের নামও ভিন্ন ভিন্ন। তবে উৎসব পালনে সাদৃশ্য অনেক।
মার্চ মাসের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই শীতকালে ব্যবহার করা কাপড় তুলে রাখার জন্য ধুয়ে শুকানোর কাজ চলে। বড়-মোটা কাপড় ধুতে ছড়ায় গিয়ে সাবান মেখে কাঠের লাঠি দিয়ে বাড়ি দিতে দিতে কাপড় কাচতে দেখা যায়। গ্রামে ঘুরতে গেলে ছড়ায় কাপড় কাচার এমন দৃশ্য উৎসবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গ্রামের নারীরা নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করে ছোট ছোট দলে কাপড় কাচতে নামে।
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক সমাজে এখন বয়স্কদের যত্ন নিয়ে উঠানে বসিয়ে স্নান করানোর সংস্কৃতিও হারিয়ে যাচ্ছে। চাকরা নিজের তৈরি ‘বুংবাইক’ বাজিয়ে গ্রামের বয়স্কদের স্নান করাতে পছন্দ করে। পাহাড়ে পানির অভাবে এই সামাজিক মূল্যবোধটির দ্রুত বিলুপ্তি ঘটবে।
গত কয়েক বছরে পাহাড়ের পানির উৎসসমূহের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। ক্ষতিটা আরও আগেই শুরু হয়েছে, আমরা তীব্র সংকট অনুভব করছি এখন। রুমা ও থানছি উপজেলা সদরে এক সময় উঁচু পাহাড়ের ছড়ার পানি পাইপ দিয়ে সরবরাহ করা হতো। এখন মাঝেমধ্যে উল্টো সেই সব উঁচু পাহাড়ে, ট্রাকে করে পানি নিয়ে গিয়ে বিলি বিতরণ করতে দেখা যায়। যে জনপদে পানীয় জলের জন্য হাহাকার, সেখানে উৎসবকে ঘিরে কাপড় কাচার সংস্কৃতি রক্ষা করা, হাজারো পাড়ার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঝিরি-ঝরনা-ছড়া শুকিয়ে আসছে, নদীর জলে ফুল উৎসর্গ করার উৎসও সংকুচিত হয়ে আসছে। পানি নিয়ে ‘জলকেলি’ তো নাগরিক প্রদর্শনীতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এটা আমার একার স্মৃতি নয়। পাহাড়ের নবীন-প্রবীণ আরও অনেক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনযাপন তো বটেই, উৎসবকে কেমন করে বদলে দিচ্ছে। পাহাড়ে জুম চাষ কমেছে, পাহাড়ও তো উজাড় হচ্ছে বহুমাত্রিক উন্নয়নের নামে। উন্নয়নকর্মী ইলা রাণী চৌধুরী বলছিলেন, “দাদুদের দেখেছি, সাংগ্রাইংয়ের দিনে গ্রামবাসীদের চাল দান করতেন। পাচন রান্নাকে ঘিরে নারীরা দল বেঁধে তরিতরকারি খুঁজতে বন-জঙ্গলে যেতেন, সেটি আর দেখা যায় না। সাংগ্রাইং উৎসবকে ঘিরে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ বাজার থেকেই সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কারণ জঙ্গল নেই, নারীদের নিরাপত্তা নেই, তাই আগের সেই আনন্দ নিয়ে পাচন রান্নার উপকরণ সংগ্রহের হিড়িকও নেই।“
লিসা চাকমা বলছিলেন হাল-আমলে উৎসব-আয়োজনের মূলবার্তাটি বদলে গিয়ে কেমন করে প্রতিযোগিতাসর্বস্ব হয়ে পড়ছে। লিসাও একজন উন্নয়নকর্মী। গল্পচ্ছলে জানালেন, শহুরে সমাজে উৎসবকে ঘিরে এক ধরনের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। কে কতো উপকরণ দিতে পারল, কে কত দামি উপকরণ দিতে পারল, অনেকে সেই খোঁজ-খবর রাখেন। গ্রামেও বননির্ভর উপকরণ নিয়ে রান্না, খাওয়া-দাওয়া হয় না। বাজারনির্ভর উৎসবে রূপ নিয়েছে প্রকৃতি বন্দনার এই আয়োজন। প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়াতে গেলে ডাবের বদলে কোমল পানীয় পরিবেশন করা হয় আজকাল। এ্যানী চাকমার আক্ষেপ, জুমনির্ভর পাহাড়ের উৎসবটিতে দিনদিন শহরের প্রক্রিয়াজাত খাবারে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হলো, পাহাড়ে সেই ঘন বন নেই, জুম চাষও তেমন হয় না। হলেও উৎপাদন আগের মতো নয়। জুম ফলাতে সার, কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়, যেটি আগে হতো না।
অধিকারকর্মী নুকু চাকমার সঙ্গে আবহাওয়ার বদলের যাওয়ার কথা এল। বললেন, “ছেলেবেলায় মা-বাবারা বিজু এলে ভোরে শিশুদের স্নান করাতে নানা লোভনীয় বাহানা দেখিয়ে নদীতে, ছড়ায় পাঠাতেন। ছেলেবেলায় বিজুর সময়েও শীতের আমেজ থেকে যেত। এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বিজুর দিনগুলোতে শিশুদের স্নান করে নতুন কাপড় পরতে মা-বাবাকে বলতে হয় না।গরমে পাহাড় তেঁতে থাকে তখন। ”
অমল বিকাশ ত্রিপুরা বলছিলেন, হারি বৈসুর আগের দিন দলবেঁধে বনে শাক-সবজি খুঁজতে যেতেন, এখন বৈসুর আগে সবাইকে বাজারেই ড়িড় জমতে দেখা যায়।
ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ক্য সা চিং। ছেলেবেলার সাংগ্রাইং উৎসব নিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, “বান্দরবান সদরের বর্তমান মাস্টার মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় অশ্বত্থ গাছ ছিল। সেখানে হাতের তৈরি ‘মুংডি’ বিক্রি হতো। পাহাড়ের নানান তরিতরকারিও পাওয়া যেত। এখন বান্দরবানে হাতের তৈরি মুংডির বিপরীতে প্যাকেটজাত এবং আমদানি করা মুংডিতে ছেয়ে গেছে। পাশাপাশি সাংগ্রাইং পালনের অংশ হিসেবে বান্দরবান সদরে ৭টি স্থানে বিশেষত বড় বড় গাছের নিচে বিভিন্ন পূজা-পার্বণ চলত। এখন সেই প্রকৃতি পূজা শহরে কতটুকু টিকে রয়েছে জানি না।”
আমরা আজ-কাল শহরে দেখছি নাগরিক একধরনের আয়োজন। ছেলেবেলায় আমি দেখেছি ভোর হলেই কৃষক পরিবারের লোকজন প্রতিটি বাড়ির উঠানে ধান ছিটাতে আসত। গৃহপালিত হাঁস-মুরগীগুলো সেদিনের মতো খেয়ে শেষ করতে পারত না। এখন সে সংস্কৃতি আর দেখা যায় না। মানুষের ঘরে ধান কমতে শুরু করেছে। জুম চাষ, ধান চাষ করলেও উৎসবকে ঘিরে ১০-৩০ কেজি ধান ছিটানোর চাষি কমেছে। এছাড়া গ্রামের শিশুরা ভোর হতে না হতেই ফুল সংগ্রহে বের হতো। বাড়ির উঠানে উঠানে নানান ফুল থাকত। পাড়ার এ মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত বারোমাসি নানান ফুল গাছে যেমন; কাঠ গোলাপ, শিউলি, টগর, কামিনী, জবা, রক্ত কাঞ্চন, করবী, নয়নতারা ভরে থাকত। ফুল গাছগুলো গ্রামের মেঠো পথের ধারে থাকত বলে, ফুল গাছগুলো গ্রামের ছেলেমেয়েদের খেলাধূলার স্থান হিসেবে গণ্য হতো এবং ফুলগুলো প্রয়োজনে সকলে সংগ্রহ করতে পারত। এখন গ্রামে গেলে এমন বড় ফুল গাছের আর দেখা মেলে না। প্রাকৃতিক ও স্থানীয় ফুল গাছের বদলে বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট দেশি-বিদেশি প্রজাতির ফুলের চারা স্থান পেয়েছে। ফলে শিশু-তরুণদের মাঝে উৎসবকে ঘিরে ফুল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে ‘ফুল চুরি’ করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে ব্যাপক ফুলের ব্যবহার পাওয়া যায়। বিহারে, প্রাকৃতিক পানির উৎসে ও বৃহৎ বৃক্ষের তলায় ফুল পূজা করতে, ঘর সাজাতে, পশু-পাখিদের সাজাতে সর্বত্রই ফুলের ব্যবহার দেখা যায়। আগের দিনে তরুণরা বুনো ফুল ব্যবহার করতে বন থেকে ‘বিজু ফুল’, ‘সাংগ্রাইং পাঁই’ সংগ্রহে বের হতো। এখন বনে ‘বিজু ফুল’ খুব একটা দেখা যায় না। ফলে পাহাড়ের বন-পরিবেশ প্রকৃতি কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সে থেকে বুঝার চেষ্টা করতে পারি।
বৈসু, সাংগ্রাইংসহ সকল উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জুম। সাংগ্রাইং কিংবা বিজুর প্রধান আকর্ষণই হলো পাচন। আর এই পাচন তৈরিতে জুমের ফল-মূল, শাক-সবজির ব্যবহারই মুখ্য। এই পাচন খাওয়ার জন্য পাহাড়িরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। এখন সে পাচনের উপকরণ হিসেবে বাজারের সাধারণ তরিতরকারি ঢুকে পড়েছে। কেননা পাহাড়বাসীরা নানান প্রক্রিয়ায় বন, বসতি হারিয়েছে, জুম চাষও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, একমাত্র সৌখিন আর নিতান্তই যাদের কোন বিকল্প নেই তারাই জুম চাষি। জুমের উৎপাদিত ফসলের তুলনায়, চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে বেশ, যদিও এই দাম চাষিদের কপালে জুটে না। জুমের ফসল অধিক হারে শহরে রপ্তানি হওয়ায় স্থানীয় সাধারণ পরিবারের জন্য জুমের ফসল কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সাংগ্রাইংতে শুধু পাচন নয়, অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় মজাদার খাবার তৈরিতেও জুমের শস্য দানার জুড়ি নেই। কিন্তু অনেক মজাদার খাবার আর তৈরি হতে দেখা যায় না। শস্যগুলো জুমে আর তেমন ফলানো হয় না বলে সেই সব মজাদার খাবারও তরুণদের কাছে এক প্রকার অপরিচিত। যেমন জুমে ‘প্রং’, ‘গ্যি-ই’ আর চাষ হয় না বললেই চলে। ফলে ‘প্রং’ আর ‘গ্যি-ই’ [মারমা নামে] দিয়ে খাবার তৈরি হতে দেখা যায় না।
পাহাড়ের উৎসবে জুমের ফসল, প্রাকৃতিক ফুলের পাশাপাশি পানি ও প্রাকৃতিক পানির উৎসে গিয়ে নিজেদের রীতি-প্রথা চর্চাও লক্ষ্যণীয়। পানির ছোট-বড় উৎসে গিয়ে পাড়াবাসী, তরুণরা নানান বুনো ফুল আর খাবার দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চল রয়েছে। ইদানিং পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়ায় অনেকে বড় বড় নদীতে একই সঙ্গে সমাগম হতে গিয়ে উৎসবে রূপ পেয়েছে। অনেকের মুখে-সাহিত্যে ‘ফুল ভাসানো’ শব্দদ্বয় ব্যবহার হচ্ছে। তবে কর্মটিকে ঠিক ‘ফুল ভাসানো’ শব্দ দিয়ে আদি মূল্যবোধকে ছোট করে দেখা হয়েছে বলে মনে করি। পাহাড়িদের বেঁচে থাকার মূলে পাহাড়, প্রকৃতি, পানির যে অবদান সেটিকে স্মরণ করে ফুলের অঞ্জলি দেয়া হতো। প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ এটি। প্রকৃতিকে যে যার অবস্থান থেকে ভালোবাসা প্রকাশের একটি সুন্দরতম চেষ্টাটিকে ‘ফুল ভাসানো’ নাম দিয়ে আদিবাসীদের একটি মহামূল্যবান মূল্যবোধকে তুচ্ছ করা হয়।
ছেলেবেলায় গ্রামে গ্রামে খেলাধুলায় [‘গ্যাং’, ‘দ:’, ‘কাংছি’, ‘গদু’, ‘পেইং’, ‘খোঙ্যাং’] থাকতো প্রাকৃতিক সব উপকরণের ব্যবহার যেমন, কাঠের টুকরো, পাথর, বুনো ফল [ঘিলা] ইত্যাদি। খেলাধুলা বসত বড় বড় বৃক্ষের তলায়। এখন এই সব খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র আর উপযুক্ত স্থান পাওয়া যায় না। ফলে খেলাধুলায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন মাইক বাজিয়ে, সামিয়ানা টাঙিয়ে শব্দ দূষণ না করলেই যেন উৎসব জমে না। অধিকাংশ এলাকায় খেলাধুলার নামে যা চলে, তা এক অর্থে জুয়া খেলাই বলা চলে। যেমন: এটা করতে পারলে, এত টাকা পাবেন। এগুলো জুয়া ছাড়া কিছুই নয়। এসব খেলায় যার টাকা আছে, সেই অংশগ্রহণ করে। সাংগ্রাইং উৎসবে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমান অংশগ্রহণ আর আনন্দ করার আদি মূল্যবোধ অনেক আগেই উধাও হয়েছে।
জেলা শহরের শিক্ষিত মারমারা টাকা পয়সা খরচ করে [পাহাড়ে চলমান পানির খরাকে দূরে ঠেলে দিয়ে] ট্রাকে পানি সংগ্রহ করে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠবেন। স্থানীয় নেতারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে, প্রভাব দেখাতে, অর্থ ব্যয় করে বড় থেকে আরো বড় মঞ্চ সাজিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন। পাহাড়ের মারমারা এমন দিনগুলোতে কে কত ‘বড় অতিথি’ এনে দেখাতে পারেন, সেই প্রতিযোগিতাও চালাবেন। মারমাদের ‘পানি ছিটানোর উৎসব’ আয়োজনে পাহাড়ের পানির জন্য চারিদিকে যে হাহাকার বিদ্যমান সব মিথ্যে প্রমাণিত হবে। শহরের মারমারা যখন হাজারে হাজারে গ্যালন পানি ছিটিয়ে বেড়াবেন, তখন দূর গ্রামের নারীরা এক কলসি পানি পেতে ৩-৪ঘন্টা ব্যয় করবেন। তবে তারাও সাংগ্রাইং দিনে ফুল দিয়ে মৃত প্রায় ছড়ায়, কূয়ায় গিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। যে সব পাড়ার সামনে ছড়াগুলো মরে ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে, তারাও মৃত ছড়ায় গিয়ে রীতি ধরে রেখে কৃতজ্ঞতা জানাবেন।
পরিবেশ, প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমরা আমাদের চিরচেনা প্রকৃতি নির্ভর আচার-প্রথাগুলো দ্রুত হারিয়ে ফেলছি। চাকচিক্য, অর্থ আর সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা জুয়া খেলা, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের প্রভাব দেখাতে এলাকা ভেদে শব্দ দূষণ, অধিক লোক জড়ো করে লোক দেখানো আয়োজনের মধ্য দিয়েই বিজু, সাংগ্রাইং উৎসব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পাহাড়ের তরুণরা বুঝে না বুঝে সেই তালে গা ভাসিয়ে নিজেদের প্রথা-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আদিবাসী মূল্যবোধ থেকে দিনকে দিন ছিটকে পড়ছে। অনেক তরুণদের কাছে প্রকৃতি নির্ভর, অর্থ-খরচবিহীন, নিজেদের মাঝে আনন্দ খোঁজার উৎসবটিকে ‘আদিম প্রথা-বিশ্বাস’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসবটি ছিল প্রকৃতি নির্ভর, জুম নির্ভর উপকরণ দিয়ে মজার রান্না পাচন পরিবেশন, জুমের শস্য দিয়ে নানান রকমের মিষ্টি খাবার তৈরি, বড় গাছের ছায়ায় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আর উপকরণ সব ছিল পরিবেশবান্ধব ও প্রকৃতি থেকে পাওয়া।
পাহাড়ে মনুষ্যসৃষ্ট উন্নয়ন প্রাকৃতিক পরিবেশের বিনাশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দাদুদের সময়ে পালিত প্রকৃতি নির্ভর উৎসবের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষ এখন উৎসবের নানান উপকরণ, উপাদানের অভাবে উৎসবে সামিল হওয়া থেকে নীরবে বিরত থাকছে। আমরা যদি পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষা করতে না পারি, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে না পারি, সামাজিক সবচেয়ে বড় উৎসবটি সাধারণ গ্রামীণ মানুষের কাছে উৎসবের বদলে বিলাসিতা এবং দিনটিতে নিজেদের গুটিয়ে রাখার, আড়ালে রাখার সংস্কৃতিতে রূপ লাভ করবে।