Published : 06 Dec 2012, 07:47 PM
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচার চলছে। শুরু থেকেই দলটি অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তির ব্যাপারে দেশে-বিদেশে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গত মাসে খালেদা জিয়া ভারত সফর করার পর থেকেই জামায়াত নতুন মাত্রায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু করেছে। এটি কি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গেই আটকে রাখার কৌশল? বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।
নেতাদের মুক্তির দাবিতে ৪ ডিসেম্বর জামায়াত সারাদেশে হরতাল ডাকে। সেদিন দেশজুড়ে ব্যাপক হাঙ্গামার পাশাপাশি রাজধানীতে অর্বাচীন জামায়াত- কর্মীরা এক কাণ্ড করে বসে। ওরা মার্কিন দূতাবাসের একটি গাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনার পর বিচলিত জামায়াত তড়িঘড়ি একটি বিবৃতি দেয়।দলটির ওয়েবসাইটে ভুল বানানসহ প্রকাশিত বিবৃতিটি তুলে দিচ্ছি- "বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনেরাল ডাঃ মোঃ শাফিকুর রাহমান সংবাদ পত্রের প্রদত্তের জন্য নিম্নলিখিতি বিবৃত প্রদান করেছেনঃ ৪ঠা ডিসেম্বর আনুমানিক সকাল ৮:৪৫ মিনিটে এক দল লোক ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একটি গাড়ির উপর হামলা চালালে গাড়ির ড্রাইভার সামান্য আহত হন এবং গাড়িটিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। অভূতপূর্ব এই দুঃখজনক ঘটনার ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত শেষে এর দায় দায়িত্ব আমরা গ্রহন করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনার জন্য দূতাবাস এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাক্তিদের নিকট আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এর ক্ষতিপূরণ দিতে আমরা প্রস্তুত।"
লক্ষ্যণীয়, বিবৃতিতে দলীয় কর্মীদের নিন্দা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখিত 'অভূতপূর্ব' শব্দটি দিয়ে তারা বোঝাচ্ছে- মার্কিন স্বার্থের উপর জামায়াতের আঘাত করার অতীত কোনো রেকর্ড নেই। দূতাবাসের গাড়িতে সামান্য একটু হামলা করে জামায়াত এত বিচলিত কেন? এদেশে অন্য অনেক দল বা আন্দোলনেকারীরা নানা সময়ে মার্কিনসহ পশ্চিমা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করেছে এমন নজির রয়েছে। এ জন্য কোনো দলকে পশ্চিমাদের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়নি। এ দিক থেকে জামায়াতের বিবৃতিটি 'অভূতপূর্ব।' তবে আমরা জানি, জামায়াতের এ আচরণ মোটেই অভিনব নয়। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
জামায়াত এমন সময়ে এ ক্ষমা চাইল যার ক'দিন আগেই জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দিয়েছে। প্যালেস্টাইনিদের প্রতি এদেশের জনগণের প্রচণ্ড অনুরাগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতসহ এ উপমহাদেশের সব দেশই প্যালেস্টাইনের পক্ষে। প্যালেস্টাইনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা ও জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের বিপক্ষে ভোটের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা এখনো থামেনি। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে মার্কিন দূতাবাসের সামান্য একটি গাড়িতে ঢিল মারার জন্য বিচলিত জামায়াত ক্ষমা চাচ্ছে এ কেমন কথা! মনে রাখা দরকার যে, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই জাতি, বর্ণসহ সব কিছুর উপর মুসলিম উম্মাহর অবস্থান ঘোষণা করে দলটি। তাই জামায়াতের ক্ষমাপ্রার্থনা বুঝিয়ে দেয় যে, তাদের 'উম্মাহ-ধ্বনি' কতটা ফাঁপা। অথচ হরতালে দেশের মানুষের ক্ষতিসাধন তাদের কাছে অনুমোদিত!
দেশের মানুষের জান-মাল-ইজ্জতের ক্ষতিসাধনের অভিযোগেই জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আজ বিচারের মুখোমুখি। এ সব কর্মকাণ্ডের জন্য তারা কখনো ক্ষমা তো চায়নি, বরং কর্মীদের বুঝিয়ে আসছে যে 'ইসলামরক্ষার' জন্য তারা এসব করেছিল। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গোলাম আযম এমন একটি বিবৃতিই দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী বলেছিলেন- 'জন্মসূত্রে কাউকে মুসলমান ভাবা যাবে না।' অর্থাৎ জামায়াতি ছাড়া এ অঞ্চলে আর কোনো মুসলমান নেই! কথাটি তিনি ভিন্নমতের উলেমাদের লক্ষ্য করেই বলেছিলেন। তাই তখন উলেমারাই তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। যে-দলের প্রধান নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা ফ্যাসিস্ট, সে-দলের কর্মীরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসের গাড়িচালক কেন তাদের ফ্যাসিস্ট আক্রমণের শিকার হতে পারে না সেটাই দেখার বিষয়।
ভারতবর্ষ যখন ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার জন্য আন্দোলনে-বিদ্রোহে উত্তাল, তখন মওদুদি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কঠিন সমালোচক ছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন যে, তিনি কংগ্রেস বা মুসলিম লীগকে লর্ড ক্লাইভের চেয়ে আলাদা কিছু ভাবেন না। লক্ষণীয় যে, মওদুদি লর্ড ক্লাইভকে 'ঘৃণিত ব্যক্তি' হিসেবে তুলে ধরেছেন বলেই যে তিনি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ছিলেন তা নয়। তাহলে বাস্তবে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে পাওয়া যেত না কেন? তাছাড়া, সমাজতন্ত্রকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করায় মওদুদি ও তার দল জামায়াত বিভিন্ন সময় জওহরলাল নেহেরু, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও শেখ মুজিবুর রহমানের তীব্র সমালোচনা করেছে। এ বিরোধিতার মূলে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের প্রতি মওদুদি ও তার দলের অকুণ্ঠ সমর্থন। এটা নিয়ে পরে আলোচনা করছি।
জামায়াত চিরকাল সৌদি বাদশাদের মিত্রশক্তি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কোরবানির পশুর চামড়া দান হিসেবে নিয়ে এ দল নানা কর্মসূচি পরিচালনা শুরু করে। পরে তারা সৌদি বাদশাদের দান-খয়রাত পেতে শুরু করে। বাদশাহী মোহরে প্রলুব্ধ জামায়াতকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনৈতিক অঙ্গনে সাফল্য আসুক চাই না-আসুক, এভা্বেই দলটির নেতা ও তাদের স্বজনদের ভাগ্য খুলে যায়। কে না জানে, সৌদি বাদশারাই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের প্রধান পাহারাদার।
তাই সত্তরের দশকে ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর বিপ্লব সফল হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সৌদি বাদশারাও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তিন যুগ ধরে ইরান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এ কারণে হুগো শ্যাভেজের মতো লাতিন সমাজতন্ত্রীদের সঙ্গে জোটও বাঁধছে ইরান। জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজারে লাতিন আমেরিকাও মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে হু-হু করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। এ সময় ভেনিজুয়েলা ও ইরান তেলের বাজার-মূল্য কমাতে এবং মার্কিন আধিপত্য খর্ব করতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়। শুধুমাত্র মার্কিন ডলারের বদলে একাধিক মুদ্রায় তেল কেনাবেচার প্রস্তাব করে। সৌদি বাদশার বিরোধিতায় এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এতে ডলার-সাম্রাজ্য ও মার্কিন-খরবদারি খর্ব করার এক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। পাকিস্তানে জেনারেল জিয়াউল হক ক্ষমতা-দখলের পর তার গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হয়ে ওঠে জামায়াত। সেখানেও ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি-ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা জামায়াত বাস্তবায়ন করে। এভাবে বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে জামায়াত সবসময় মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে কাজ করে গেছে।
ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজে পারাস্যের সংস্কৃতির বিপুল ভূমিকা রয়েছে। তাই এখানকার মুসলিমদের আচার-ব্যবহারসহ ভাষাতেও ফারসি শব্দের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী জেনারেল জিয়ার মাধ্যমে এ ঐতিহ্যের উপর আঘাত হানে। যার ঢেউ বাংলাদেশেও এসে লাগে। ইসলামীকরণের নামে তারা ফারসি শব্দের বদলে আরবি শব্দ প্রচলনের চেষ্টা চালায়। যেমন, খোদা হাফেজের বদলে আল্লাহ হাফেজ। পাকিস্তানি এক লেখক জানিয়েছেন মাত্র ক'বছরে কীভাবে পাকিস্তানিরা খোদা হাফেজ বলা ভুলে যায়। মনে রাখা দরকার যে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জামায়াত পৃথিবীর কোনো ভাষার প্রতি তাদের বিদ্বেষ নেই বলে জানিয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে আরবীকরণের যে কাজটি তারা শুরু করেছে তা কিন্তু ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনীরা ক্ষমতায় আসার পর। তাই শুধু অতীত পারস্য-ঐতিহ্যই নয়, বর্তমান ইসলামী বিপ্লবী রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জামায়াত নামের দলটি বরাবরই ক্ষমতাশালীদের অনুকম্পার কাঙাল। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তারা সামরিক-জান্তার নৈকট্যলাভে মরিয়া ছিল সবসময়। জনবিচ্ছিন্ন সামরিক-জান্তারাও নিজেদের প্রয়োজনে তাদের সুযোগ দিয়েছে। টুইন টাওয়ারে বিমান-হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে' ইরাক ও আফগানিস্তান যেমন ধ্বংস হয়েছে, তেমনই সাধারণভাবে মুসলিম সম্প্রদায় বিভক্তি ও বিতর্কের আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, এ কারণেই ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হলে বাংলাদেশের তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার সমর্থন জানিয়েছিল। অনেকের হয়তো এটাও মনে আছে যে, যুদ্ধ শুরুর আগে ইরাকের সাদ্দাম-সরকার যে সংবাদ সম্মেলন করে সেখানে বাংলাদেশকে শত্রু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। তখনকার চারদলীয় সরকারের মন্ত্রী জামায়াত নেতারা এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন। এসব নেতাদের মুক্তিকেই ইসলাম-রক্ষার উপায় ভেবেই হয়তো কোনো তরুণ সেদিন রাস্তায় ইট ছুঁড়েছে!
ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের ধ্বনি দিয়ে সোভিয়েত-বিরোধী আফগান যুদ্ধে জামায়াত মার্কিনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেও, মার্কিনের 'সন্ত্রাসবিরোধী' যুদ্ধে তারা অদৃশ্য কেন? পাকিস্তানে ইসলাম-পসন্দ দলগুলোর দাঙ্গাহাঙ্গামাকে গণমাধ্যমে বড় করে দেখানোর ফলে সাধারণভাবে সেদেশের জনগণের মনস্তস্ত্ব সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয় না। ২০০২ সালের আগের কোনো নির্বাচনে জামায়াত তো নয়ই, সম্মিলিতভাবে ইসলামী দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট ৩ বা ৪ শতাংশের বেশি ছিল না। এমনকী একসময়কার ক্ষমতাসীন একনায়ক জিয়া ও জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে দেখা গেছে। মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে হামলা চালানোয় এবং পাকিস্তানের ইসলামী দলগুলো এর বিরোধিতা করায়, ২০০২ সালের নির্বাচনে ইসলাম-পসন্দ দলগুলোর সম্মিলিত ভোট ১১ শতাংশ ছুঁতে পারে এবং প্রথমবারের মতো নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ারে সরকার গঠন করে। (যদিও বাংলাদেশে সরকারি ক্ষমতায় থেকে জামায়াত সে ধ্বনিও দেয়নি।) তবে তাদের সাময়িক এ উত্থান ২০০৮ এ ফুরিয়ে যায়। ইসলামী দলগুলোকে প্রত্যাখান করে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টিকে (এনএপি) জনগণ ক্ষমতায় আনে। ইসলামি-ধ্বনিবাজ দলগুলোর সম্মিলিত ভোট ২ শতাংশে নেমে আসে। বোঝা যায় ব্রিটিশ আমলে মদিনা সনদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র-পরিচালনার পক্ষপাতী উলেমাদের বিতর্কিত করতে মওদুদির 'জন্মসূত্রে কাউকে মুসলমান ভাবা যাবে না' প্রচারণায় পাকিস্তানিরাও বিভ্রান্ত হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জামায়াতকে রাজনৈতিক দল ও সামাজিক স্বার্থগোষ্ঠী (প্রেসার গ্রুপ) হওয়ার মধ্যে দোল খেতে দেখেন। '৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সমাজতন্ত্রের ধ্বনি দেওয়া মুজিব ও ভুট্টোর কাছে ন্যাক্কারজনকভাবে পরাজিত মওদুদি জামায়াতকে একটি সামাজিক গোষ্ঠী (কমিউনিটি) হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করেন বলেও কোনো-কোনো বিশ্লেষক মনে করেন। এ ব্যর্থতার জন্য মওদুদির ভ্রান্ত সাংগঠনিক নীতির কথা বলেন তারা। তবে ভেবে দেখা দরকার যে, হালুয়া-রুটিতে প্রলুব্ধ জামায়াতের সুবিধাভোগীদের মার্কিন ও সৌদি থেকে শুরু করে সামরিক-জান্তাদের খেদমতে নিয়োজিত থাকাও তাদের ব্যর্থতার কারণ কিনা।
ব্যক্তিগত পার্থিব সুখ-শান্তি অর্জনে জামায়াত নেতৃত্ব এত মরিয়া যে তাদের একাত্তরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আদালতে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আঞ্চলিক স্বার্থের কারণে পাকিস্তানের জামায়াত একাত্তরে অস্ত্র ধরার কথা বলে থাকে। সে সময় বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে অভিন্ন সংগঠন জামায়াত যে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তা প্রমাণের জন্য আর কোনো তথ্যের দরকার হয় না।
ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক, আদর্শের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার বহু নজির বিশ্বে রয়েছে। কিন্তু গোলাম আজম 'একাত্তরে যা করেছি ঠিক করেছি' বললেও যুদ্ধের সময় ঘটা হত্যা-নির্যাতনের দায়িত্ব তারা নিতে নারাজ। এটি তাদের স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়।
ফলে 'বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ' বুলি শিখিয়ে কোমলমতি কর্মীদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া এ নেতারা নিজেরাই তা বিশ্বাস করেন না। বয়সের ভারে আজ বা কাল যারা মারা যেতে পারেন তারা পর্যন্ত বেহেশতে না গিয়ে আরো ক'দিন বাঁচার জন্য মরিয়া। তাই ধর্মের প্রতি প্রেমের কারণে এসব নেতাদের বেহেশতলাভের মিথ্যা আশ্বাসে ভুলে কোমলমতি যে ছেলেরা শহীদানের পথ বেছে নেয়- তারা জানেই না তাদের নেতাদের আসল চেহারা কী!
মুজতবা হাকিম প্লেটো:সাংবাদিক।