Published : 13 Mar 2022, 08:09 PM
সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড আসা–যাওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পারাপার ঘাট হলো গুপ্তছড়া–কুমিরা ঘাট। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া যাতায়াত করতে সময় লাগে কম বেশি ২৫ মিনিট। সন্দ্বীপ চ্যানেলের দুই পাড় থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের দিকে ছুটে চলা দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার অনুপোযুগী জেটি বা ব্রিজের রয়েছে। কুমিরা থেকে একেবারে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছালে সমুদ্রের মাঝখানে ভ্রমণ স্পৃহা জন্মাতে পারে সকলের। তবে গুপ্তছড়া– কুমিরা ঘাট থেকে জন প্রতি ২৫০ টাকা স্পিডবোট ভাড়ায় ২৫ মিনিটেই সন্দ্বীপ চ্যানেল পার হতে সময় লাগে। এই দুর্বিষহ পারাপারে সন্দ্বীপ ভ্রমণের সেই আশা গুড়েবালি হয়ে যায়। কেননা অত্যধিক ভাড়ার বিনিময়ে গুপ্তছড়া কুলের কাদামাটি ও কোমর সমান পানি অহেতুক এক শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচারের নামান্তর মাত্র।
কেইস স্টাডি
১. কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে বিশোর্ধ্ব বয়সী এক তরুণ পিতৃভূমি সন্দ্বীপে বেড়াতে এসেছিলেন। এই প্রথম উনি সন্দ্বীপে আসেন। যাওয়ার পথে সন্দ্বীপের চিরাচরিত খাদ্য সামগ্রীর একটা ছোটখাটো (পিঠা ও দধির) বক্সের 'ফুল ভাড়া' আদায় করেন ইজারাদারের ভাগিনা। কেননা এই বক্স একজনের সিট দখল করেছে। তাকে গালমন্দ করা হয়। ওই স্পিড বোটে ঢাকার একজন রাজনৈতিক নেতা যাত্রী হিসেবে ছিলেন, যিনি সন্দ্বীপের জনস্বার্থে কাজ করেন। উনি প্রতিবাদ করলে স্পিড বোট না ছাড়ার হুমকি দেয় ইজারাদারের ভাগিনা। স্পিড বোটের আরোহীরা ভয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করেন নাই। ভুক্তভোগী ওই তরুণ সন্দ্বীপে আর আসবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন।
২. গত বর্ষার শেষ সময়ে 'সন্দ্বীপ উদ্যোক্তার খোঁজে' সংগঠনের একজন নারী সদস্য সন্দ্বীপ গিয়েছিলেন সন্দ্বীপ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার জন্য। উনাকে পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয় উনার ১ বছরের শিশু কন্যাসহ। সন্দ্বীপ থেকে যাওয়ার সময় একই অবস্থা হয়েছিল। অতঃপর উনি সন্দ্বীপ থেকে ব্যবসায়িক লাইসেন্স করতে আগ্রহী হননি। ফলে শিল্প সন্দ্বীপের কিছু লোক কর্মসংস্থান হারালো।
৩. কয়েকদিন হলো একটি ক্রেটের জন্য হাফ ভাড়ার জায়গায় ফুল ভাড়া চেয়ে বসেন। সামান্য রিকোয়েস্ট করলে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ কর হয়। নদীর পানিতে ক্রেটটি ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। উনি পেশায় ইলেকট্রিকাল ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
এই পারাপারে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন ও অমানবিক কষ্ট পোহাতে হয়। কত করুণ ও অশ্রু সজল কাহিনী আছে যে, প্রবাসগামী প্রিয়জনদের সি অফ করতে অমর্জাদাশীল আচরণের জন্য পারাপার করতে পারেন না অনেকে। শিশুদের নৌকা থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। শিশু মনে এই ধরনের ভয়ভীতি নিশ্চয় তাদের মনোজগতে রেখাপাত করে।
এই পথে পারাপার করতে গিয়ে নদীর পানিতে ভিজে জ্বর সর্দিতে ও নিউমনিয়াতে ভোগার অহরহ ঘটনা আছে। বয়োবৃদ্ধ রোগী ও প্রসূতি মায়ের জীবনের ঝুঁকি উনাদের অসুস্থতার চেয়েও নদী পারাপারের ঝুঁকিটা বেশি। মানুষের শেষ ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে ওসিয়ত থাকে, নিজ ভূমি সন্দ্বীপে দাফনের ইচ্ছাটুকুও উবে যায়। সন্দ্বীপের বাইরে বসবাসকারী বিভিন্ন পেশার লোকজন ঈদে চান্দে সন্দ্বীপে আসেন না, এইসব মর্যাদাহানিকর আচরণের জন্য। বিষয়গুলো এমনই লজ্জাকর যে, কেউ শেয়ার করতে রাজি হন না।
গুপ্তছড়া – কুমিরা স্পিডবোটে নদী পথে যাত্রী পারাপার
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সীতাকুন্ড নৌ রুটে থাকা কুমিরা–গুপ্তছড়া ঘাটটি ৬ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। এই যাত্রী পারাপার ঘাটটি পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ৬ বছরের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০২০ সালের ৩ মার্চ গেজেট আদেশের মাধ্যমে 'মিরসরাই – রাসমণি নদী বন্দর' ও তার সীমানা নির্ধারণপূর্বক এক আদেশ জারি করেন। বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টি এ শাখা এই আদেশনামা তামিলের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনটি একটা এসআরও (STATUTORY RULES AND ORDERS).
উক্ত প্রজ্ঞাপনে মিরসরাই রাসমনি নদী বন্দরের তফশীল হলো নিম্নরুপ:
(ক) উত্তর সীমানা
ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন থাকনোয়াজ খামচি মৌজার মহুরী নদী তীর অতিক্রমকারী অক্ষাংশ –উ-২২° ৪৫' ৩০.০০''।
(খ) দক্ষিণ সীমানা
চট্টগ্রাম জেলার থানাধীন দক্ষিণ কাট্রলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে সন্দ্বীপ চ্যানেল অতিক্রমকারী অক্ষাংশ –উ-২২° ২১' ০৭.৫০''। এবং
(ঘ) ভূ–ভাগের সীমানা:
বন্দর সীমানার আওতায় তীরে ভরাটকাল এর সময় বন্দর সর্বোচ্চ পানি সমতল ভূ–ভাগের দিকে ৫০ (পঞ্চাশ) গজ পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতির এ আদেশ অমান্য করলে ফৌজদারি অপরাধ হবে না। তবে সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গ করা হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বদলি করার আদেশ জারি করা হলো। এটি গেজেটে প্রকাশিত হবে এবং লেখা থাকবে 'রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে'। যদিও এই নির্দেশ স্বাক্ষর করবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষে একজন উপসচিব। যদি এমন হয় যে, এই নির্দেশ জারি হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল নির্দেশ মানলেন না। সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা ইত্যাদির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পেছনে ফিরে তাকানো
২০১৩ সালে গুপ্তছড়া– কুমিরা ঘাটের ইজারা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) ও চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুন্ড), বিআইডবিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ রা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া–কুমিরা যাত্রী পারাপার ঘাট পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ বিআইডবিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
২০২০ সালের পয়লা মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী থানা সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থেকে ডাবল মুরিং থানা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ–বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ-কে নৌ–ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করবে বিআইডব্লিউটিএ। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও তাদের পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ নৌ ঘাটের ইজারাদাতা হিসেবে মালিকানা ধরে রাখতে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদবির করা অব্যাহত রাখে। বিষয়টি সমাধানে দলীয় প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসার অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং সরকার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সকল ঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও ইজারা প্রদানে ক্ষমতা দেয়ায় সমঝোতা স্মারক নবায়ন করতে অনাগ্রহ পোষণ করে বিআইডবিউটিএ। এরপর ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডবিউটিএ-র চট্টগ্রাম কার্যালয় সমঝোতা স্মারক নবায়ন না করতে অনুরোধ করেছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি, এমনকি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও।
ইজারাদার ও মুৎসুদ্ধি ইজারাগ্রহিতার আইন অমান্যের অভিযোগ
এই ঘাটটি সন্দ্বীপের প্রধানতম নৌ রুট হওয়ায় নিজেদের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজি হয়নি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। এই ঘাটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বাবদ আয় ছাড়াও বিভিন্নভাবে আয়ের সুযোগ রয়েছে। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইজারা মূল্য প্রাপ্তির মাধ্যমে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করে চলেছে। তাই সম্প্রতি যাত্রী ও মালামাল পারাপার ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে লুটেরা ইজারাদার ও মুৎসুদ্ধি ইজারাগ্রহিতা, যা গেজেট আদেশের বরখেলাপ।
ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ রাষ্ট্রপতির গেজেট প্রজ্ঞাপনের কারণে মিরসরাই – রাসমণি নদী বন্দরের চলাচলের জন্য নৌ পথে চারটি বয়া স্থাপন করেছিল, যা কিছুদিনের মধ্যে বিকল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়াও গুপ্তছড়া ও কুমিরার জেটিতে লাইটিং, ড্রেজিং ও যাত্রীদের বসার সু–ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যাত্রী স্টিমার সার্ভিস চালু করে যা স্থানীয় সিন্ডিকেটের শিকার।
২০২০ সালের পয়লা মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী মৌজায় মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশ থেকে চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে মীরসরাই–রাসমনি নদীবন্দর ঘোষণা করে সরকার, যা গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে ওই মাসের গত ৩ তারিখে। একই দিন সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডবিওটিএ) এই নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। ফলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে কোনো চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। তাই এই নদী বন্দরের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে।
বিধি অনুযায়ী চট্রগ্রাম জেলা পরিষদ ইজারাদার থাকতে পারে না। তাছাড়া বাংলাদেশের জেলা পরিষদের আয়ের উৎস গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যয়ের খাতগুলিতে আয়কৃত এলাকায় উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার জন্য উল্লেখযোগ্য কোন বাজেট নাই।
(https://lgd.portal.gov.bd/sites/default/files/files/lgd.portal.gov.bd/page/f94d43c4_4dce_4fde_b4f4_7198811c340d/Budget%20rules%2017.pdf )
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ- পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ- নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক ধার্যকৃত দেশের বিভিন্ন নৌ-পথের যাত্রী ভাড়া আদায়ের একটি তালিকা আছে। সে অনুপাতে গুপ্তছড়া-কুমিরা ১৭ কি.মি. নৌ- পথের পারাপার ও যাতায়াতের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা টাকা ২৯ টাকা। কিন্তু সরকারি হিসেবের ২৯ টাকার জায়গায় ২৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, অর্থাৎ ৮ দশমিক ৬২গুণ বেশি।
সমাধান: বিআইডাব্লিওটিএ-র অধীনে অচিরে ফেরি চালু করা
সন্দ্বীপ চ্যানেলের নভ্যতা ও স্রোত বিবেচনায় রেখে গুপ্তচরা ঘাট ও কুমিরা ঘাটের উত্তরে ২/১ মাইলের মধ্যে ফেরি চালাচালের উপযোগী ঘাট নির্ধারণ করা যেতে পারে। বাঁশবাড়িয়া ও বাউরিয়া ফেরিঘাট হতে পারে পরীক্ষামূলক ফেরিঘাট। ফলে দিন-রাত গাড়ি ও মালামালসহ রোগী ও অসুস্থদের জীবন মরণ সন্ধিক্ষণে বেদনার বালুচর থেকে আশার আলো ও স্বস্তি পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা যদি পক্ষ দোষে দুষ্ট হন, তাহলে দেশের বিদ্যমান আইনে THE PREVENTION OF CORRUPTION ACT, 1947 এ প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। এই আইনের ৫ ধারায় সরকারি কর্মকর্তার ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে। আর THE PENAL CODE, 1860 এর ৯ম অধ্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে।
প্রতিকার ও রিট
বাংলাদেশ সরকারের গেজেটের এই অতিরিক্ত সংখ্যা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল ১৯০৮ সালের বন্দর আইনের ক্ষমতা বলে। এই দীর্ঘ সময় ইজারাদাতা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ–কড়ি হাতিয়ে নিয়েছে ও সরকারি কর্মকর্তারা এহেন কর্মে সহায়তা দান করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতির আদেশ অমান্য করা ও তা বলবৎ করার জন্য প্রতিকার নিশ্চয় আছে। নাগরিকের অধিকার ও জনস্বার্থে যে কেউ প্রতিকারপ্রত্যাশী হতে পারেন। দ্বারস্থ হতে পারেন দেশের সবোর্চ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে। রিট রুজ্জু করা যেতে পারে।
২০২০ সাল থেকে আইন অমান্য করে উপার্জিত সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দানের জন্য আবেদন করতে পারেন রিটে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য নৌ পারাপারের ভাড়া সরকারি নিয়মে নটিক্যাল মাইল হিসেব করে সন্দ্বীপ – চট্টগ্রামের সব পারাপারে ন্যায্য ও যুক্তি সঙ্গত ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য রিটে প্রতিকার চাইতে পারেন।
গুপ্তছড়া ঘাটের উত্তরে ফেরি চলাচল চালু করা যেতে পারে। ওই অংশে নদীর স্রোত প্রবাহ হচ্ছে ফেরি চলাচল উপযোগী। যেমনটি বলেছিলেন ফেরি ও নদী প্রবাহ বিশেষজ্ঞরা। আমি ফেরি চলাচল নিয়ে গত ২০ বছর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করেছি। পদ্মা পারাপারের ফেরিগুলো গুপ্তছড়া – কুমিরা নৌ পথে চালু করতে অর্থ জোগান দেয়ার জন্য রিট অর্ডার প্রত্যাশা করা কি অমূলক হবে? তখন আপনি গাড়ি নিয়ে প্রাণের সন্দ্বীপের সাথে সার্বক্ষণিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।
তাছাড়া সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পনুর্বাসন সমিতি ৭ দফা দাবির ৫ নং দাবির জন্য বরাদ্দ হতে পারে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ।
দাবিটি হলো – ''সন্দ্বীপ– নোয়াখালী সড়ক ও সন্দ্বীপ– চট্টগ্রাম সেতু নির্মাণ করা'। সন্দ্বীপের (ভাসানচর – কালাপানিয়া – স্বর্ণদ্বীপ – উড়িরচর ও (নোয়াখালীর) কোম্পানিগঞ্জ এর সাথে প্রস্তাবিত সংযোগ সড়ক ও সন্দ্বীপের পূর্বদিকে প্রস্তাবিত সন্দ্বীপ – চট্টগ্রাম সংযোগ সেতু বাস্তবায়ন করা।
সন্দ্বীপের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ও প্রবাসে কষ্টার্জিত তথাকথিত অতিরিক্ত ভাড়া বাবদ অর্থ উত্তোলন ও জিম্মি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ন্যায় ও সুবিচারের স্বার্থে জনহিতকর খাতে হরিলুট করা অর্থ ব্যয় হোক – এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।