Published : 27 Dec 2021, 07:54 PM
বহুত্ববাদ সংস্কৃতির বিশেষ দিক হলো, সেখানে অগণিত শ্রেণির সমন্বয় থাকে। ফলে তার সমাহারের ব্যপ্তি কিংবা বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার বিশাল হয়ে থাকে। তবে কেউ কেউ এর বিশালতা বুঝতে পারেন না। তারা নিজেদের সম্পদ অন্যের হস্তগত হতে দেখেন। এরকম এক উদাহরণ আফগানিস্তানের নাদিয়া নাদিম। উগ্রবাদী, মৌলবাদী আগ্রাসনে শিশু অবস্থায় ট্রাকের পেছনে করে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। আজ এ নারী ফুটবলার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় ২০০ মত গোলের মালিক। পাশাপাশি একজন সফল ডাক্তার, সার্জন। কথা বলতে পারেন ১১টি ভাষায় !
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বহুত্ববাদকে আগলে পথ চলবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার উদাহরণ এখানকার নারীরা এখন বিশ্বজয়মুখী। তবে এখন আরো একটি অংশকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, শিশু-কিশোরদের প্রতিবন্ধিত্ব প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিকভাবে তাদেরকে বোঝা হিসেবে দেখা শুরু হয়। এমনকি এসময় প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা-মাও এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। অনেকক্ষেত্রেই ঠিকঠাক পরামর্শ না পেয়ে চাপে পড়ে তারা দিশে হারিয়ে ফেলেন। আমাদের সমাজ এখনো তৈরি হয়ে ওঠেনি এটা বোঝানোর জন্য যে, প্রতিবন্ধীরা আমাদের দায় নয়, বরং দায়িত্ব।
সেই হিসেবে সকলের জানা জরুরী, একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো জন্মের তিন বছরের মাঝে ঘটে থাকে। আরও বিস্তৃত অর্থে বললে, এর সবটাই মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ঘটে এবং তা মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের আক্রান্ত হবার পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা বা অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। যা শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্পষ্ট হতে শুরু করে।
সবচেয়ে দুঃখজনক হল, জিনগত বিষয়গুলো ছাড়াও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস যেমন শারীরিক, নেশা জাতীয় দ্রব্য, অ্যালকোহল, সিগারেট গ্রহণ- এসব শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু জন্মের জন্য দায়ী। ভয়ের কথা হলো, সামাজিক পরিসংখ্যান হিসেবে দেশে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ তরুণ-তরুণী নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে। এর সাথে সিগারেটের বিষয়টি যোগ করলে এই সংখ্যা হয়ে উঠে আরও ভয়াবহভাবে। কিন্তু এই অংশ জানেই না তাদের অভ্যাসের কারণে শিশুরা জন্মগতভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছেন। অথচ নিজেদের কিছু বাজে অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করলেই একে কমিয়ে আনা সম্ভব।
পাশাপাশি শিশুদের এই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা যে জয় যোগ্য সেটাকেও সামনে আনা জরুরী। গাঁয়ের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এই ক্যাম্পেইনগুলো ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন যেন কেউ ভীত না হয়ে সকলে একে অন্য দশটা অসুখের মতই দেখেন এবং নিয়মিত চিকিৎসা করান। এটা করা সম্ভব এবং সেটা সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। কারণ যেহেতু এর বিস্তৃতি একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ পর্যন্ত সেহেতু একে দিয়েই অটিজম বিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দেবার সুযোগ আছে। আর এতে রাষ্ট্রকে বাড়তি খরচ গুণতে হবে না।
সামাজিক ব্যবস্থায় অটিজম নিয়ে নানা গুঞ্জন প্রচলিত আছে। যেমন এরা সংবেদনশীল নয়, অনুভূতিহীন ইত্যাদি। অথচ বিশ্ব ব্যবস্থায় দেখা যায় যত্নের মাধ্যমে বেড়ে উঠার মাধ্যমে এরা অন্য দশটা শিশুর মতই দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হতে পারে, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। কাজেই এদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া জরুরী।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সরকার তাই করে আসছে। যেমন এখানে প্রায় ৯ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু আছে। বিভিন্ন উৎসব- ইদ-পূজা, নববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম সম্বলিত শুভেচ্ছা কার্ড ব্যবহার করে আসছেন, যা তাদের জন্য প্রেরণার। এছাড়া একটি বোতলজাত পানির সাথে এরা যুক্ত থাকায় সেই পানি ব্যবহারে নিজে সরাসরি উৎসাহিত করে আসছেন।
নিয়মের প্রতি অনীহা এই অঞ্চলের পুরনো অভ্যাস। একারণেই টয়লেট থেকে বেরিয়ে সাবান ব্যবহার করতে হয়- এই সচেতনতা সৃষ্টিতে মীনা কার্টুনের মত প্রযোজনার প্রয়োজন হয়েছিল এবং তাও প্রায় একযুগ। কাজেই অটিজম নিয়ে যে সচেতনতা জরুরী তা যে রাতারাতি হয়ে যাবে এমন ভাববারও সুযোগ নেই। তবে এক্ষেত্রে আমাদের শিল্প-সাহিত্যে ভূমিকা প্রায় শূন্য- এটাও অস্বীকারের উপায় নেই। মূলত গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাত ধরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিদের অধিকার নিয়ে বেশ কিছু কাজ এগিয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন তা আশার সঞ্চার করে। কাজেই অপেক্ষা এখন সকলের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন অংশগ্রহণের।