Published : 04 Aug 2021, 07:27 PM
ঘটনাটা পুরাণের গল্পের মতোই। তাই সরল সহজ করে বলি। ধরুন সেই ঘটনা বা গল্প নিয়ে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। কাল্পনিক সেই ছবির গল্পটা আপনাদের বলি। গল্পের জনপ্রিয় রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। রাজাকে সপরিবারে মেরে ফেলা হয়েছে। তার বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও আত্মীয়দেরও মেরে ফেলা হয়েছে। ক্ষমতা দখল করেছে রাজ্যের শত্রুপক্ষের লোকজন। ভাগ্যক্রমে রাজার দুই মেয়ে ভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান। তারা ওই রাজ্যে নিজ দেশের দূতের বাসায় অবস্থান করছিলেন। ওই দূত হত্যাকাণ্ডের খবরটি পরিষ্কার করে না জানিয়ে রাজকন্যাদের বাসা থেকে বের করে দেন।
দিশেহারা এবং নিরুপায় হয়ে রাজকন্যারা অন্যরাজ্যে কর্মরত আরেক দূতের সহযোগিতায় নিজ দেশের পাশের রাজ্যের এক ক্ষমতাসীন রানির আশ্রয় গ্রহণ করেন। কয়েক সপ্তাহ চলে গেলেও তারা প্রকৃত ঘটনা বিশদ জানার সুযোগ পাননি। শেষতক তাদের আশ্রয়দানকারী রানির কাছ থেকেই ঘটনার বিশ দিন পর জানতে পারেন তাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে নাই।
ঠিক এরকমটাই ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার জীবনে। দুই কন্যার বড়জন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর ছোটজন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার কাজ ও অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অনেকের নজরে এলেও অনেকটা অদৃশ্যে থাকা, কিছুটা অগোচরে বা নিভৃতে থাকা ছোটবোন শেখ রেহানার অবদান সেই অর্থে আমাদের অনেকের কাছে অনেকটাই অজানা।
গল্পের সূত্র ভেঙে এবার ইতিহাসের খোলনলচে ঘেঁটে বলি। ১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিনে শেখ হাসিনা, তার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও ছোটবোন শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামের তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ব্রাসেলসের বাসায়। ক্ষমতার পালাবদলের খবর শুনে সেই মান্যবর জাতির জনকের বেঁচে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদেরকে এক প্রকার বাসা থেকে বের করে দেন। এই হলো একশ্রেণির আমলা ও কূটনীতিকদের চেহারা-চরিত্র। রাতারাতি বদলে যাওয়া কাকে বলে এই ঘটনা তার একটা ঐতিহাসিক উদাহরণ। ক্ষমতায় থাকলে একরকম আর ক্ষমতা থেকে দূরে সরে গেলে আরেক রকম। বিচার-বুদ্ধি, বিবেক ও মানবিকতা সবই অবান্তর 'তাহা'দের কাছে। আর এই অবান্তর নির্মম আচরণের মুখোমুখি হয়েছিলেন জাতির জনকের বেঁচে যাওয়া কন্যাদ্বয়।
শেষতক জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী বেগম মাহজাবিন চৌধুরী জাতির জনকের কন্যাদের পাশে দাঁড়ান। সহযোগিতার হাত বাড়ান, আশ্রয় দেন এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখেন। শেষতক ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে অগাস্টের শেষ সপ্তাহে তাদেরকে দিল্লি যেতেও সাহায্য করেন। তারা জানেন পরিবারের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলেছে কিন্তু তখনও পুরোপুরি জানতে পারেননি আসলে কী ঘটেছে, কে বেঁচে আছে, কে বেঁচে নাই। পুরো খবরটা ইন্ধিরা গান্ধীর কাছে থেকেই পেলেন, ঘটনা ঘটার বেশ কিছুদিন পর। জানতে পারলেন পরিবারের কেউ আর বেঁচে নাই।
শেখ হাসিনার জবানিতে এভাবে জানা যায়, 'আমরা জার্মানি থেকে দিল্লি পৌঁছলাম ২৪ আগস্ট। ইন্দিরা গান্ধী বারবার খবর পাঠাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো ৪ সেপ্টেম্বর। তাঁর মুখ থেকে শুনলাম, কেউ বেঁচে নেই।'
ইতিহাসের খুঁটিনাটি গল্প আমরা শেখ হাসিনার বক্তৃতা বিবৃতি থেকে কিছুটা জানতে পারি। আরও কিছু বিষয় জানা যায়, বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং পরের কিছু ঘটনা শেখ রেহানার স্বামী অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিকের লেখাজোকা থেকে। কিন্তু ঘটনার ঘনঘটার একদম কেন্দ্রের নিভৃতে থাকা মানুষটি শেখ রেহানা খুব একটা প্রকাশ্যে আসেননি। অথচ অল্পবিস্তর যতটুকু জানি আর আর বাকিটা কল্পনা করতে পারি ১৯৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় শেখ হাসিনার দ্যুতির পেছনের আলোর মানুষটি যে শেখ রেহানা তা সহজেই অনুমেয়। আমার কেন যেন মনে হয় পরিবারের সবাইকে হারিয়ে শেখ হাসিনা যেমন তার বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন, স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে শেখ রেহানা কি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ব্যক্তিত্বের আলোয় পেছন থেকে ভূমিকা রেখে গেলেন? গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে, কঠিন মুহূর্তের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন শেখ হাসিনার পেছনে সাহস দিয়ে? এসব বিষয়ে বিশদ জানার আরো অনেক বাকি আছে।
১৯৭৫ পরবর্তী দুই বোনের কঠিন দিনগুলো নিয়ে আরো একটু আলোকপাত করতে চাই। তাদের দুই বোনের সময়টা কতটা কঠিন ছিল তা একটু জানা দরকার। ভারতের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বসবাসরত শেখ রেহানার পড়ার কথা ছিল শান্তিনিকেতনে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সেসময়ের সরকার জানালো তারা নিরাপত্তা দিতে পারবে না। উপায় না দেখে শেখ রেহানা পাড়ি জমালেন লন্ডনে, সাহায্য করলেন তার ফুফা সেনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান (পরে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন)। তবে টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। শেখ রেহানা তার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটি জানতে পেরে ইন্দিরা গান্ধী তার টিকেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
শেখ রেহানা দিল্লি থেকে বিলেত গেলেন। সেখানে গিয়ে মুখোমুখি হলেন আরেক নিষ্ঠুর পৃথিবীর। চেনা লোকজনও মুখ ঘুরিয়ে নিত। চাকরি খুঁজছিলেন হন্যে হয়ে। কিন্তু প্রথম প্রথম কেউই এগিয়ে আসছিল না। তারপর কাজ পেলেন লাইব্রেরি ও বুক পাবলিশিং হাউজে। কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন। অসহায়ত্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিককে, যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকার সময়ই তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। শফিক আহমেদ সিদ্দিক তখন কাকতালীয়ভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন। তিনি দাঁড়ালেন শেখ রেহানার ভরসা হয়ে। কিন্তু শেখ হাসিনাসহ পরিবারের বাকিরা কেউই টাকার অভাবে বিলেত যেতে পারলেন না। পরে শেখ হাসিনা তার ছোটবোন রেহানার সন্তান হওয়ার সময় বিলেতে যাবার সুযোগ পান। এসবই ইতিহাস। এরপর শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে স্বদেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর শেখ রেহানা বিলেতে কাজ করছেন, টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। ঘর সামলাচ্ছেন এবং বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
অন্য আলোচনায় যাবার আগে এই পর্যায়ে একটি সূত্র উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। ১৯৯৮ সালে শেখ রেহানার সম্পাদনায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নামে ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বড়সড় একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনে পেছন থেকে কাজ করছিলেন আমাদের বেবী আপা মানে সাংবাদিক বেবী মওদুদ। আর তার সঙ্গে ছিলাম আমি এবং কবি আসলাম সানী। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। আমাদের দেশে কম্পিউটারের যাত্রা তখন প্রাথমিক পর্যায়ে। সংকলনের কাজ চলছিল সেগুনবাগিচায় মোস্তফা জব্বারের আনন্দ কম্পিউটার্সে। গ্রাফিক আর অক্ষরবিন্যাসের কাজ করছিলেন ধনেশ্বর দাস চম্পক দাদা। কম্পিউটার এটা কাজ করে তো, করে না। টোনার আছে কিংবা নাই, ট্রেসিং বের হয় তো, হয় না। এদিকে আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা।
বেবী আপা এই কঠিন অবস্থায় রেহানা অপার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতেন। রেহানা আপাও খুঁটিনাটি খোঁজ নিতেন। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার দুটি গুরুত্বপূর্ণ লেখাসহ বেশকিছু দুর্লভ লেখা নিয়ে সংকলনটি যথাসময়ে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল। বেবী আপা, সানী ভাই আর আমি নাওয়া-খাওয়া রেখে রাতদিন এটার পেছনে খাটাখাটি করছিলাম। বেবী আপা নিয়মিত রেহানা আপাকে অগ্রগতি জানাতেন। ওই সময়ে বেবী অপার একটি কথা আজও মনে পড়ে, 'সংকলন যদি সময় মতো বের করতে না পারি, তাহলে রেহানাকে কী বলব?' আর মাঝে মাঝে মোস্তফা জব্বারকে ফোন করে বলতেন, 'জব্বরগিরি তো ভালোই করো, কিন্তু তোমার কম্পিউটার থেকে সময় মতো যদি ট্রেসিং বের না হয়, তাহলে খবর আছে।' এখানে উল্লেখ্য, বেবী আপা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোস্তফা জব্বারের সহপাঠী।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য তখনও সম্পন্ন হয়নি। সংকলনের গূঢ় তাৎপর্য ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি এবং দাবির সপক্ষে নানা যুক্তি ও তথ্যপূর্ণ লেখাজোকা। তখনও জানিনি শেখ রেহানাই যে আন্তর্জাতিক পরিসরে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ডাক দিয়েছিলেন।
এবার অন্য একটি প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সেরকম জোরালো কোনো আন্দোলন বা উচ্চবাচ্য কি সেইভাবে হয়েছে? দেশে বা বিদেশে? আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে? দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বড় বড় পণ্ডিত ব্যবসায়ী এমনকি বড় বড় পুরস্কারজয়ী মহারথীদের কয়জন সোচ্চার ছিলেন! একটি সত্য তুলে ধরতে চাই। তার আগে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ সামনের আনব। আমরা সকলেই জানি সুইডেন বা স্টকহোমের সঙ্গে বাঙালির গৌরবের যোগসূত্র ১৯১৩ রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার লাভ। তার ঠিক আট বছর পরে ১৯২১ সালের রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারের বক্তৃতা দিতে সুইডিশ একাডেমির আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো সুইডেন সফর করেন।
এরপরে সুইডেন বা স্টকহোমে কোনো বাঙালির ঐতিহাসিক ঘটনার কথা আমরা কতটুকু জানি? এখানে আমি দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। একটি ১৯৫৬ সালের এবং অন্যটি ১৯৭৯ সালের।
বঙ্গবন্ধু স্টকহোমে ১৯৫৬ সালের ৫-৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে সুইডেন সফর করেন। বিশ্ব শান্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আন্তরিকভাবে বঙ্গবন্ধুর মতো গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বরের শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে তৎপর ছিলেন। যে বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তির জন্যেও জরুরি কণ্ঠ ছিলেন, সেই মানুষটিকে হত্যা করে তার হাতে জন্ম নেওয়া দেশটি হয়ে গেল নরকের ঠিকানা। বঙ্গবন্ধুর সফরের তেইশ বছর পরে ১৯৭৯ সালে তার ঔরসজাত কন্যা একই শহরে হাজির হলেন, বিশ্বদরবারে, বিশ্ববিবেকের কাছে নিজের কন্ঠস্বর প্রথমবারের মতো তুলে ধরলেন পিতার খুনিদের বিচারের ডাক দিয়ে। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা।
স্টকহোমের মতো শহর থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের ডাক দেওয়া নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বিশ্বপরিসরে দেশটির নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ কূটনীতির একটা সুনাম ছিল। এই গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এবং পরে আরো পরিশীলিত হয়েছিল। বিশেষ করে জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব ডগ হেমারশল্ড-এর অসাধারণ ভূমিকার কারণে।
অন্যদিকে, দুনিয়াঝুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া রাসেল ট্রাইব্যুনালের প্রতিষ্ঠা এই শহরেই হয়েছিল। আমরা অনেকেই জেনে থাকব যে, দ্য রাসেল ট্রাইব্যুনাল আবার পরিচিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাসেল-সার্ত্রে ট্রাইব্যুনাল বা স্টকহোম ট্রাইব্যুনাল নামে। এটি ১৯৬৬ সালে নোবেল বিজয়ী ব্রিটিশ দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল প্রতিষ্ঠিত এবং ফরাসি দার্শনিক এবং লেখক জ্যা পল সার্ত্রে দ্বারা পরিচালিত একটি ব্যক্তিগত পিপলস ট্রাইব্যুনাল। এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন লেলিও বাসো, সিমোন ডি বেভোয়ার, ভ্লাদিমির দেদিজার, র্যাল্ফ শোয়েম্যান, আইজাক ডয়েসচার এবং আরও কয়েকজন। দ্য ট্রাইব্যুনাল আমেরিকান বিদেশ নীতি এবং ভিয়েতনামে সামরিক হস্তক্ষেপ বিষয়ে তদন্ত এবং মূল্যায়ন করে।
এরকম প্রেক্ষাপটে এই শহর থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ডাক দেওয়া হয়, তাও আবার তারই কন্যার কণ্ঠে- যে শহরেই বঙ্গবন্ধু তার তারুণ্যে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন।
সুইডেনে বাঙালি রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা আকতার জামান এবং অনুশীলন সাময়িকীর সম্পাদক মোর্শেদ চৌধুরীর বরাতে যতটুকু জানা যায়, ১৯৭৯ সালে স্টকহোমে শেখ রেহানার সফরটি ছিল বাকশালের সম্মেলন উপলক্ষে। সম্মেলনটির উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ১০ মে স্টকহোমের প্রাণকেন্দ্রে এবিএফ ভবনে। এই সম্মেলনে আরো উল্লেখযোগ্য বাঙালি যারা যোগ দিয়েছিলেন তারা হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুর রাজ্জাক, শামসুদ্দিন খেতু, আফতাবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার রহমান, আব্দুল কাইয়ুম খান, শফিকুর রহমান জুয়েল, প্রদীপ দত্ত, কাজী কাদের, মনজুরুল হাসান প্রমুখ। শেখ রেহানা তার এই সফরে স্টকহোম ও উপসালায় আরো কিছু কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এসব কর্মসূচিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় আনার ডাক যথারীতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।