Published : 14 Apr 2021, 11:20 PM
গেল কয়েকদিন ধরে করোনাবাইরাস সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বেড়ে চলার কারণে সরকার 'কঠোর লকডাউন' দিতে বাধ্য হলো। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি আর দৈনিক মৃত্যু তো বৈশাখের প্রথমদিন ১০০ ছুঁয়েছে। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের দেশব্যাপী এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। লকডাউনের খবর জেনেই মানুষ ঈদের ছুটি উদযাপনের মতো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। ফলে স্থল ও জল পথের সবখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযতভাবে মানা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার সুবিধার্থেই সরকার যেখানে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে সেখানে গ্রামমুখী মানুষের ঢল সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপকেই বাধাগ্রস্ত করে দিচ্ছে।
জনগণের সহযোগিতা না থাকলে সরকারের একার পক্ষে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ সহজ বিষয়টা আমরা কেন বুঝিনা? স্বাস্থ্যবিধি যথাযতভাবে কেনো মানছিনা? কেন সরকারী নির্দেশনা পালন করছিনা? সরকার, করোনা বিশেষজ্ঞ, ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজকর্মী, সাংবাদিকসহ সচেতন মানুষেরা নিয়মিত পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনসহ সোস্যাল মিডিয়ায় বারবার সাবধান করার পরেও আমাদের বোধোদয় কেন হচ্ছে না? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, নিজে কিংবা পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত, পরিবারের কেউকে না হারানো পর্যন্ত আমরা করোনার ভয়াবহতা অনুভব করতে পারি না। কারণ, যে হারায় শুধু সেই জানে করোনাভাইরাস কী জিনিস, কতটা ভয়ংকর এবং কী হারিয়েছে!
পয়লা এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে "মাস্কের সঙ্গে শত্রুতা কোথায়" । মাস্ক না পরার কুযুক্তি এবং করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা, উদাসীনতা ও বেপরোয়া মনোভাবের করুণ চিত্র উক্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন থেকে মানুষের চিন্তাধারা জেনে অনেক বেশি অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে সরকার যত কঠোর পদক্ষেপই নিক না কেনো জনগণ তাতে সহযোগিতা না করলে কোন পদক্ষেপই সফল হবে না। আমাদের চিন্তাধারার এমন দৈন্যতা চলতে থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনারও অতীত। লেখার শেষার্ধে সাধারণ মানুষের ধারণাগুলোর ওপর প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা হয়েছে।
এ সময়ের কয়েকটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে ভুক্তভোগী আর "এখনও আক্রান্ত হননি" তেমন মানুষদের চিন্তার বা অনুভুতির তফাৎটা পরিষ্কার হবে।
ক. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাবাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছেন। এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে অনেক দৌড়েছেন। শেষপর্যন্ত আইসিইউ জোগাড় করতে পারলেও তার বাবাকে বাঁচাতে পারেননি। একই সময়ে তার পরিবারের আরও ৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন! বাবাকে চিরবিদায় জানিয়ে এখন তিনি তার মাকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তিনি কতটা দুঃসময় সময় পার করছেন সেটা কেবল তিনিই জানেন।
খ. কয়েকদিন আগে পরিচিত একজন ফোন করেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে বললেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার বাবা মারা গেছেন, পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। ছেলে বাবাকে দাফন করতে পর্যন্ত যেতে পারেনি। এমন খবর জেনে তাকে কী শান্তনা দেওয়া যায়! শান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা আছে?
গ. পরিচিত এক ভদ্রলোক কিছুদিন আগে তার পরিবারের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চার জনকে একসাথে নিয়ে একই হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েছেন, একাই সব কিছু সামলেছেন। তিনি তখন কতটা অসহায় বোধ করেছেন তা অন্য কারও দ্বারা অনুমান করা সম্ভব নয়। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ঘ. অনেক বন্ধু এবং পরিচিত জনদেরকে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখি, "আপা/ভাই/মা/বাবা, শেষ বেলায় একটা জিনিসই তো চেয়েছিলে, একটা আইসিইউ! দিতে পারিনি, ক্ষমা করে দিও।" কিংবা "করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবা আইসিইউতে, মা হাসপালে ভর্তি, ভাইবোন বাসায় আইসোলেশনে আছেন, দোয়া চাই!" এসব ফেইসবুক স্ট্যাটাস পড়ে মন্তব্য করার ভাষা হারিয়ে ফেলি।
ঙ. আমি নিজেই করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুর থাবার ভুক্তভোগী। মায়ের চেহারা সব সময় চোখের সামনে ভাসে। হাসপাতালের দিনগুলো আমাকে অনেক পীড়া দেয়। করোনা আক্রান্ত হয়ে মা যখন হাসপালে ভর্তি ছিলেন তখন পরিবারের অন্য তিন সদস্যও করোনা পজিটিভ। করোনার কারণেই আমাদের মা মার্চের শুরুতে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। যেহেতু আমি মাকে হারিয়েছি সেহেতু আমি জানি বেদনাটা কেমন। কী পরিমাণ অসহায় লাগে তখন! যে হারায় শুধু সেই জানে কষ্ট কতটা তীব্র।
করোনা সংক্রমিত হয়ে অসুস্থ হওয়া আর অন্য যেকোন রোগে অসুস্থ হওয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। একইভাবে অন্য কোন রোগে কেউ মারা যাওয়া আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার মধ্যেও অবর্ণনীয় পার্থক্য। এই পার্থক্যের ভয়াবহতা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না, বোঝা সম্ভবও না, বুঝতে চায়ও না। কারণ, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় তার বা তার পরিবারের কষ্ট কাছ থেকে দেখার সুযোগ অন্যদের হয় না। অন্যদিকে নিজে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কষ্টটা কেউ অনুধাবন করতে পারে না। আপনজনের স্বাভাবিক মৃত্যুতেও মানুষ শোকাতুর হয় কিন্তু পরিবার করোনা আক্রান্ত হলে এবং আপনজনকে হারালে মানুষ যে অসহায় হয়ে পড়ে তার কষ্টটা অসীম, ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। করোনা আক্রান্ত হয়ে অসহায় হয়ে না পড়লে কেউ বুঝতে পারে না অসহায়ত্ব আসলে কী! করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা দ্রুত ছড়ায় এবং একটা পরিবারের অনেককেই একসাথে আক্রান্ত করে। ফলে পরিবারের যে ব্যক্তিটি অপেক্ষাকৃত সুস্থ কিংবা এখনও আক্রান্ত হননি, সবার চিকিৎসাসহ যাবতীয় দেখভালের দায়িত্বটা পড়ে তার উপর। আত্মীয় স্বজনেরা চাইলেও তখন আশানুরূপ সহযোগিতা করতে পারেন না সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কারণে। অন্য কোন কারণে কেউ অসুস্থ হলে সবাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, মারা গেলে সবাই মিলে দাফন করেন। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হলে সাধারণ কেউ আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধরেন না, এগিয়ে আসেন না, আসা সম্ভবও না। হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করতে কোভিড প্রটোকল অনুসরণ করে ফলে বেড পাওয়া, আইসিইউ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, আত্মীয় স্বজনকে পাশে পাওয়া যায় না। আর এইযে সবকিছু একা সামলানো, এটাই অসহায়ত্ব। সমুদ্রের পানিতে ভেসে থেকেও খাবার পানি না পাওয়ার মত অসহায়ত্ব!
আপনি যদি ভুক্তভোগী হন তবেই বুঝতে পারবেন কষ্টটা কোথায়। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে প্রিয়জনের শ্বাসকষ্টের দৃশ্য দেখা। এটা সহ্য করার মতো নয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ব্যক্তিটি যখন আপনার চোখের সামনে শ্বাস নেওয়াই বন্ধ করে দেয় তখন এর চেয়ে কষ্টের, অসহায়ত্বের দৃশ্য পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। করোনা আক্রান্ত বলে কিংবা নতুনভাবে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অসুস্থ বা মুমূর্ষু প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেও পারবেন না। মৃত্যুর আগে হয়তো আপনার প্রিয়জন আপনার চেহারাটা দেখতে চেয়েছিলেন, হয়তোবা তিনি আপনার দিকে তাকিয়েও ছিলেন কিন্তু আপনার মুখে মাস্ক, ফেইস শিল্ড বা পিপিই থাকায় আপনার মুখটাও তিনি ঠিকমতো দেখতে পাননি। এমন অবস্থায় না পরলে কারও দ্বারা বোঝা সম্ভব নয় করোনা আক্রান্ত রোগী সাথে থাকা বা প্রিয়জনকে হারানো কতটা কষ্টের এবং অসহায়ত্বের। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া এমনসব ঘটনা জানার পরেও আমরা কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলিনা? মাস্ক পরতে, ভ্যাক্সিন নিতে আমরা এত অনাগ্রহী কেন?
শুরুতেই উল্লেখিত প্রতিবেদনে উঠে আসা বিভিন্ন জনের মন্তব্য পড়ে বার বার মনে হচ্ছিলো, আমরা এত বোকা বা গোঁয়ার কেন? ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা জেনে, প্রতিদিনের আক্রান্তের ও মৃত্যুর উর্ধ্বগতি জেনেও লোকজন কোন বিবেচনায় বলে, "করোনা-টরোনা কিছু না, আল্লাহ ভরসা, যা হবার হবে, রিক্সাওয়ালার করোনা হয়না, যারা এসির মধ্যে থাকে তাদের করোনা হয় কিংবা সৃষ্টিকর্তার ওপর যাদের ভরসা নেই তারাই মাস্ক নিয়ে টানাটানি করে"?- এসব কেমন কথা!
সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস তো নবী-রাসূলদেরও ছিল, কিন্তু তারা কি অসুস্থ হননি? আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদও (সা.) তার জীবদ্দশায় অসুস্থ হয়েছিলেন। সেখানে আমরা নিজেদেরকে যত বড় ঈমানদারই মনে করি না কেন, করোনাভাইরাস বা অন্য কোন অসুখই আমাদেরকে রেহাই দিবে না। অগাধ বিশ্বাস থাকলেই করোনা আক্রান্ত হবেন না- এমন গ্যারান্টি আপনাকে কে দিল? যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই তো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং প্রতিবেশিকে নিরাপদে রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহামারীকালে করণীয় সম্পর্কে প্রতিদিন আলেম ওলামাগণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলছেন, পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন, ইমামগণ মসজিদে বয়ান করছেন। এর পরেও আমরা বিশ্বাসের দোহাই দেই কোন যুক্তিতে?
মাস্ক না পরার অজুহাত হিসেবে গরম লাগা, ঘেমে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া- এসব যুক্তি দিচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে হওয়ায় আমাদের দেশের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। ফলে মাস্ক পরে থাকতে অস্বস্তি লাগা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মাস্ক না পরার কারণে আক্রান্ত হলে এর চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট কি হবে না? আপনার সামান্য কষ্ট করার অনাগ্রহের কারণে আপনার মাধ্যমে আপনার নিজের, পরিবারের বা অন্য কেউ আক্রান্ত হলে তখন কী কষ্টটা আরও বেশি হবে না? আর "করোনা হলে এমনিও হবে,ওম্নিও হবে, মাস্ক পরে কি আর আটকে রাখতে পারব"- বলেন কোন যুক্তিতে? মাস্ক পরে কেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে পারবেন না? করোনা কি এমনিতেই হয়? মাস্ক পরে তাকে শরীরের ভিতরে ঢুকতে না দিলে এমনি-অমনি কোনমতেই আপনার করোনা হবে না। মাস্ক পরলে, স্বাস্থ্যবিধি মানলে- আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ কমে যায়। ফলে নিজে নিরাপদে থাকা যায়, পাশাপাশি পরিবারকেও সুরক্ষা দেওয়া যায়। জগতে কোন কিছুই এমনি এমনি হয়না। এসির মধ্যে আছেন নাকি রোদের মধ্যে আছেন- ভাইরাস সংক্রমণের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে আপনি হয়তো আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু আপনার গায়ে লেগে থাকা ভাইরাস অন্য কারও গায়ে ছড়াবে না এ নিশ্চয়তা কোথায় আছে?
অনেকে আবার অনেক সাহস দেখান। নিজের শারীরিক শক্তি, যৌবন বা তারুণ্যের কারণে করোনা সংক্রমণকে পাত্তাই দেন না। ভাইরাসের সংক্রমণের সাথে আপনার শারীরিক সক্ষমতার বা পেশার সম্পর্ক খুব কমই আছে। শারিরীক সক্ষমতা আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কো-মর্বিডিটি এক নয়। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে আপনি লক্ষণবিহীনভাবেও আক্রান্ত হতে পারেন, কিংবা আক্রান্ত নাও হতে পারেন। রিক্সাওলার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়তোবা কম (আসলেই কম কিনা এ ব্যাপারে এখনও গবেষণালব্ধ নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই), কিন্তু শক্তিমান আপনি কিংবা সুরক্ষিত (!) রিক্সাওয়ালা ভাইরাসের বাহক হয়ে অন্যের কাছে ভাইরাস ছড়াতে পারেন।
আপনার পরিবারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন সদস্য আপনার দ্বারাই আক্রান্ত হতে পারেন। বাহক ব্যক্তি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যকে আক্রান্ত করে হারিয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের মনে রাখা উচিত, মহাবীর আলেকজান্ডার মাত্র ৩২ বছর বয়সে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। আপনি কোথাকার কোন পালোয়ান যে আপনাকে ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না? সুঠাম দেহের অধিকারী আমার নিজের পরিচিতই অনেক বন্ধু/আত্মীয় আছেন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও কোঁকাচ্ছেন, কেউ কেউ মারাও গেছেন। আপনি আপনার শরীরের সব দুর্বলতা জানেন?
অনেকে আবার গোঁয়ার্তুমি করে বলেন, "মরলে মরে যাবো।"! কেন রে ভাই? প্রথমত, করোনা আক্রান্ত হয়ে মরে যাবার মতো আত্মঘাতী বেপরোয়া সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, আপনার নিজের জেদের ফলাফল যাই হোক, আপনার অবহেলার কারণে পরিবারের এবং চারপাশের মানুষের জীবনকে হুমকির সম্মুখীন আপনি করতে পারেন না। আপনার এমনটা করার অধিকার নেই।
আমরা সবাই সচেতন না হলে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সরকারি নির্দেশনা না মানলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে আইসিইউ সাপোর্ট তো দূরের কথা, হাসপাতালেই জায়গা পাওয়া যাবে না। রাস্তাঘাটে পড়ে পড়ে মরতে হবে। তবে খুব সম্ভবত এমন পরিস্থিতে না পড়া পর্যন্ত আমরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করতে পারবো না। ভুক্তভোগীর বেদনা অনুভব করার চেষ্টা আমাদের করা উচিত। সরকারি নির্দেশনা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবাই সবাইকে সহযোগিতা করা উচিত। বেঁচে থাকলে বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া যাবে, মাস্ক না পরেই হাওয়া খেতে বেরোনো যাবে, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি আরও জমকালোভাবে আয়োজন করা যাবে। করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজে কষ্ট অনুভব করে এবং প্রিয়জনকে হারিয়ে বেদনাবিধুর হওয়ার মাধ্যমে আর কেউকে যেনো করোনার ভয়াবহতা ও অসহায়ত্ব অনুভব করতে না হয় এ কামনাই করি।