Published : 26 Mar 2021, 07:28 PM
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই স্বাধীনতা আমাদের অনেক উচ্চ দামে কিনতে হয়েছে। স্বাধীনতা কারও দানে পাওয়া নয়। ৩০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। ৩ লাখের বেশি নারীকে সম্ভ্রম দিতে হয়েছে। এক কোটি মানুষকে ভারতে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করতে হয়েছে। দেশের ভেতরেও কত মানুষকে দুঃসহ দুঃখ-দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে। যাদের আত্মদান ও দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে চিরদিন।
১৯৭১ থেকে ২০২১। ৫০ বছর। তাই এ বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। করোনার কারণে গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের কর্মসূচি কাটছাট করতে হওয়ায় এবারও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচির সঙ্গে মুজিববর্ষের কর্মসূচিও কিছু যুক্ত হয়েছে। দুইটি বিষয় আলাদা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা – অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এ দুই উদযাপন একযোগে হওয়া বিরোধাত্মক নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন । কোন পটভূমিতে, কেন এবং কীভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন – সেটা এখন প্রায় সবারই জানা। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আক্রমণ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও আসলে এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আরো অনেক আগেই। স্বাধীনতা ছাড়া যে বাঙালি তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বা্ঁচতে পারবে না– এটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই শেখ মুজিবের মাথায় এসেছিল। অথচ শেখ মুজিব ছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন উদ্যোগী, উৎসাহী যুবকর্মী।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠীর গণবিরোধী এবং বাঙালিবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে বেশি সময় লাগেনি। ভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তার অনুসারীদের বাঙালি এবং বাংলাভাষা বিদ্বেষী অবস্থান তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যে প্রতিবাদ-আন্দোলনের শুরু তারই সফল পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। পাকিস্তানের পুরো সময়কাল জুড়েই কার্যত চলেছে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বহুমুখী লড়াই। আর এসব লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিব। তার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরো অনেকে ছিলেন কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রশ্নে অনমনীয় ও আপসহীন অবস্থান নেওয়ার কারণে শেখ মুজিব তার সময়ের এবং তার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের ছাড়িয়ে হয়ে ওঠেন আস্থাভাজন নেতা । পাকিস্তানি শাসকরাও বুঝতে পেরেছিল তাদের বধ করার জন্য গোকূলে কে বেড়ে উঠছেন। তারা তাদের 'শত্রু' চিনতে ভুল করেনি। তাই জেল-জুলুম ছিল শেখ মুজিবের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনে শেখ মুজিব হতদ্যোম হননি হাল ছাড়েননি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রবাদপ্রতিম নেতা মণি সিংহ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলেচনা সভায় বলেছিলেন, শেখ মুজিব ১৯৫১ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভেবেছিলেন। তিনি উপযুক্ত সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করেছেন। মানুষকে প্রস্তুত করেছেন। একের পর এক কৌশল নির্ধারণ করেছেন, কারামুক্ত হলেই মানুষের কাছে ছুটে গেছেন, মানুষকে সচেতন করেছেন। মানুষও তাকে বিশ্বাস করেছে, তার ওপর আস্থা রেখেছে। অন্যদের বাদ দিয়েই তাকেই নেতার আসনে বসিয়েছে।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা, ১৯৬৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আইয়ুব খানের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯৬৯ সালে ছাত্র-জনতার ১১-দফার ভিত্তিতে আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেখ মুজিবকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে আইয়ুব শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। যাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তিনি হয়ে উঠলেন গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয় নেতা। কারামুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় তাকে জনগণের পক্ষ থেকে 'বঙ্গবন্ধু' সম্মানে ভূষিত করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। শেখ মুজিবের ওপর মানুষের আস্থার বড় প্রকাশ ঘটে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবের হাতে শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দিলে ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লিখিত হতো। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পালের গোদা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান , তার সামরিক-বেসামরিক সাঙ্গপাঙ্গ এবং কুচক্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মিলিত ষড়যন্ত্রে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার দুর্বুদ্ধি কার্যত পাকিস্তানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।
১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া খান পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বাঙালির ক্ষোভের জ্বালামুখে আগুন ধরিয়ে দিন। বিক্ষুব্ধ বাঙালি স্বাধীনতার স্লোগান মুখে তুলে রুদ্র রোষে রাস্তায় নেমে আসে। বাংলার শাসন ক্ষমতা চলে যায় শেখ মুজিবের হাতে, তিনি হয়ে ওঠেন নিয়ন্ত্রক শক্তি। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে ২৫ মার্চ রাতে অতর্কিতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করলে শেখ মুজিবের সামনে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের ডাক দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই ডাক দেওয়ার আইনি এবং নৈতিক অধিকার মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাকেই দিয়েছিল।
পাকিস্তান রক্ষার নামে গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ইয়াহিয়া খান আসলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙন অনিবার্য করেছেন। বঙ্গবন্ধু অবশ্য ৭ মার্চের ভাষণেই 'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকা'র আহ্বান জানিয়ে 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে' তুলতে বলেছিলেন। বলেছিলেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রযাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম'।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা ছিল এই রকম:
'এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান যতদিন না দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে'।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এটা প্রচার হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। যারা এখন এ নিয়ে কূটতর্ক করেন তারা ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কী বলেছিলেন সেটাও শুনে নিতে পারেন। শেখ মুজিবকে ট্রেইটর বা দেশদ্রোহী ঘোষণা করে ইয়াহিয়া বলেছিলেন, 'এই ব্যক্তি (শেখ মুজিব) ও তার দল তিন সপ্তাহ ধরে যা করেছেন, তা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ। একে ক্ষমা করা হবে না'। ইয়াহিয়া অন্য কারো নাম উচ্চারণ করেননি।
বিচারের নামে প্রহসন করে শেখ মুজিবকে হত্যার চেষ্টা সম্পন্ন করা হয়েছিল। কবরও খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিব স্বাধীন দেশের জনক হিসেবে বীরের মতোই স্বদেশে তার জনগণের কাছে ফিরে এসেছেন। তাকে হত্যা করতে পারেননি ইয়াহিয়া এবং তার জল্লাদ বাহিনী। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার যোগ্য সহকর্মীদের সাহসী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এক মরণপণ লড়াই চালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতায় নয় মাসের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশের ভেতরে বাইরে কেউ কেউ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমরা এটা জোর দিয়েই বলতে পারি যে, বাঙালি হারতে জানে না। লড়তে জানে, মরতে জানে এবং সামনে এগিয়ে যেতে জানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই আমাদের শত্রু এবং মিত্র ছিল এবং আছে। এই শত্রু এবং মিত্ররা দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও ছিল এবং আছে। শত্রুরা চেষ্টা করেছে আমাদের পথ রোধ করতে। মিত্ররা সহযোগিতা করেছে পথের বাঁধা দূর করতে। শত্রুদের চক্রান্তে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আমাদের পথচলা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের উল্টো পথে চালানোর অপচেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বহু বছর ধরে ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলেছে কিন্ত তা সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের যিনি স্রষ্টা তাঁকে কী ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়া যায়? হাত দিয়ে কেউ সূর্যের আলো ঢেকে রাখতে পারে না।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায় ১৯৯৬ সালে । পাঁচ বছরে চেষ্টা হয়েছে কলঙ্ক মেচনের। তবে দীর্ঘ দিনের জমা আবর্জনা পরিষ্কার করা সহজ ছিল না। তারপর ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে শাসন ক্ষমতায় থেকে দেশকে এক নতুন ধারায় নিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশ এখন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দেশের নাম। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, একাত্তরে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল তাদের বিচার – এর মধ্যে অন্যতম।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা কিছু সমস্যা সমাধান এবং সম্পর্ক উন্নয়নে শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রশংসিত। ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সরকার। এখন বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, ২০১৯ সালে সেটা হয় ২০.৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের সংখ্যা ১০ দশমিক৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকার ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যর হার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
এক সময়ে খাদ্য ঘাটতির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি-পদক্ষেপের কারণে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর হয়েছে। না খেয়ে থাকা মানুষ এখন একেবারেই কমে এসেছে।
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা তেমন শোনা না গেলেও পরিবর্তনের লক্ষণ আছে। মাতৃ মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২০১৯ সালে ৭২ দশমিক ৭ বছর হয়েছে। ২০০০ সালেও তা ছিল ৬৫ দশমিক ৩ বছর। সরকার এক বছরের কম বয়সী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। সামনে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের যেতে হবে আরো বহু দূর। আমরা এখনো সুশাসন নিশ্চিত করতে পারিনি। নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্য বিয়ে এখনো বন্ধ হয়নি। নারীর চলাচল নিরাপদ হয়নি। সব মানুষের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই এখনো করা যায়নি। সবাই মানসম্পন্ন পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ এখনো সবার জন্য নিশ্চিত হয়নি।
পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র ভেঙে যে সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা কবর দিতে চেয়েছিলাম সেই সাম্প্রদায়িকতাকে আবার বাংলাদেশে ফণা তুলতে দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ জয়ী বাংলাদেশে রাজনীতিতে উদারতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্ত ভিত্তি পাবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল তা-ও এখনো অধরাই রয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক অব্যাহত আছে। রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা দৃষ্টিকটুভাবেই বহাল আছে।
সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। দুর্নীতি-অনিয়মের লাগাম টেনে ধরা যায়নি। এই ঘাটতিগুলো দূর করার রাজনৈতিক অঙ্গীকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অঙ্গীকার হোক: এই দেশটিকে আমরা সত্যিকার অর্থেই সব পেয়েছির দেশে পরিণত করবো। তামাশা করে নয়, আন্তরিকভাবেই যেন বাংলাদেশকে আমরা সব সম্ভবের দেশ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি।