Published : 07 Oct 2020, 08:39 PM
পরিবেশবান্ধব উন্নয়নতত্ত্ব সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। সেখানে পৃথিবীর সব প্রাণী, মানুষ, উদ্ভিদ, জল, প্রকৃতি সবার সমান অধিকার। এই সমতার সীমা লঙ্ঘন করলে আমাদের এই বাসভূমি এবং স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো নগর তার মানবিক রূপটি হারিয়ে ফেলবে। প্রকৃতির প্রতি অবজ্ঞা ও দখল দূষণের ফলে মরুময়তা, খরা, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি আমরা চোখের সামনে জলজ্যান্ত দেখতে পাই। বস্তুত, নগরের পরিবেশেও স্বাভাবিকভাবে অসংখ্য প্রাণীর বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: শালিক, শকুন, চুড়ুইসহ নানারকমের পাখি, বিড়াল, কুকুর, কাঠবিড়ালিসহ নানা ধরনের প্রাণীর কথা বলা যেতে পারে। যদি এই স্বাভাবিকতা আমরা বিনষ্ট করি তাহলে একদিকে নগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে, তৈরি হবে ভারসাম্যহীনতা। যেমন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) দেয়া তথ্য অনুসারে কুকুর নিধন করলে ইঁদুর ও প্লেগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে (বাংলা ট্রিবিউন, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০)।
কুকুর, বিড়াল, কাঠবিড়ালী মানুষের উপকারী বন্ধু হিসেবেই বহুকাল ধরে স্বীকৃত ও সমাদৃত। এখনকার নগরসমূহেও বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে, মেনে ও মানিয়ে নিয়ে অনেক প্রাণী বিশেষত কুকুর, বিড়াল, কাঠবিড়ালী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এখনো টিকে আছে। যদিও নগরে প্রাণী সম্পর্কিত সঠিক পরিসংখ্যান এবং প্রজাতিভিত্তিক নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই বললেই চলে। সেটা প্রাসঙ্গিক তবে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
সাম্প্রতিক সময়ে কুকুর এবং বেওয়ারিশ এই শব্দ দুটি মিডিয়াতে খুব ঘোরাফেরা করছে। এর কারণ কুকুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বের অংশ হিসেবে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কুকুর স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানান্তরের নামে যা করা হচ্ছে তা রীতিমতো পাশবিক ও নির্দয় আচরণ, জঘন্য হিংস্রতা। অন্যদিকে আইনের পুরোপুরি ও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং অবৈজ্ঞানিক একটি সিদ্ধান্ত। ফলে কুকুরকেই উদাহরণ হিসেবে যদি নেই তাহলে দেখতে পাই যে, এইসব প্রাণীর বেশিরভাগই 'মালিকহীন'। তাই আমরা এদের বেশিরভাগ অংশকেই (বাড়িতে পোষ্য প্রাণী বাদে) 'বেওয়ারিশ' বলে অভিহিত করছি। কিন্তু কেন? কুকুরের মতো সব প্রাণীরা আসলেও কি বেওয়ারিশ? তাদের 'বেওয়ারিশ' বলাটা কতটুকু সমীচীন হচ্ছে?
'বেওয়ারিশ' শব্দটিকে একশ বছর আগে থেকে 'মালিকহীন' অর্থে আমরা অভিধানে খুঁজে পাই। এর আগে অবশ্য একটু ভিন্ন বানানে 'বেওয়ারিস' শব্দটি আমরা ব্যবহার হতে দেখি। যার অর্থ উত্তরাধিকারী নেই এমন। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো একটি এলাকায় জন্ম নিয়ে সেখানেই যদি সেই প্রাণীটি বেড়ে ওঠে, মানুষের পাশাপাশি অবস্থান করে নিজের মতো করেই খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধান করে নেয় তাহলে কি করে তাকে বেওয়ারিশ বলা চলে? নানা কারণে একজন মানুষও তো বেওয়ারিশ হতে পারে। তেমনিভাবে যখন একটি প্রাণীকে বেওয়ারিশ বলা হবে তার পেছনে অবশ্যই কোনো যৌক্তিক ও নির্ভরযোগ্য কারণ থাকতে হবে।
ব্যক্তি মালিকানাহীন না হলেই যদি 'বেওয়ারিশ' বলা যাবে তাহলে পাখি ও অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে কী হবে? তাদেরও কি আমরা 'বেওয়ারিশ প্রাণী' কিংবা 'বেওয়ারিশ পাখী' বলব? পাখি ও প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই শব্দের উদ্ভব আসলে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদেরই সৃষ্টি করা। মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যুক্তিতে হয়তো 'বেওয়ারিশ' শব্দের প্রয়োগ চলে। কিন্তু যেকোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে যেকোনো কারণেই হোক না কেন এই শব্দের ব্যবহার করাটা অযৌক্তিক হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির বিবর্তনমূলক অভিধানের প্রণেতা ভাষাতত্ত্ববিদ ও গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ বলেন, "সাম্প্রতিককালে বেওয়ারিশ কথাটা যে-অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা ব্যাকরণসম্মত নয়। বেওয়ারিশ কুকুর বললে বোঝায় যে-কুকুরের কোনো ওয়ারিশ উত্তরাধিকারী নেই। কিন্তু কথাটা উঠেছে যে-কারণে, তাকেই আমার কাছে অযৌক্তিক এবং অমানবিক মনে হয়। বিদেশে প্রাণীদের রক্ষার আইন ও তার প্রয়োগ আছে। কোনো কারণে কুকুর মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই। একমাত্র পাগলা কুকুর ছাড়া।"
প্রাসঙ্গিকভাবে বাঘ, হরিণ, হাতি ইত্যাদি প্রাণীর কথা যদি আমরা চিন্তা করে দেখি, তাহলে দেখব, এমন অসংখ্য প্রাণীর ক্ষেত্রে আমরা 'বেওয়ারিশ' শব্দটির প্রয়োগ হতে দেখি না। তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই আইনের কথা শুনতে পাওয়া যায়। সেসব প্রাণীর সাথে অন্যায় আচরণ হলে কিছু ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগও লক্ষ্য করা যায়। তাহলে কুকুর কি প্রাণীসম্পদের কিংবা বন্যপ্রাণীর অন্তর্ভুক্ত নয়? যেসব প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে কিংবা বিলুপ্তির পথে সেসব প্রাণীর ক্ষেত্রেই কি শুধুমাত্র আমরা আইনের কথা বলবো কিংবা আইনের প্রয়োগ করব?
যাহোক, বর্তমান সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কুকুর স্থানান্তর কার্যক্রমের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে অন্য প্রাণীর থেকে আমরা যেন কুকুরকে একটু আলাদাভাবে দেখছি কিংবা দেখতে চাচ্ছি। কুকুরকে দেখা হচ্ছে নগরের জঞ্জাল, অবাঞ্ছিত, অনাহূত, অনর্থক ও বেওয়ারিশ হিসেবে। এটা কেন? এর পেছনে কারণ কী?
পেছনের কারণ যদি একটু খুঁজে দেখতে চাই তাহলে প্রথমেই উঠে আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বক্তব্য। সাম্প্রতিক সময়ে তার বক্তব্য অনুসারে: 'আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, ঢাকাকে একটি উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তোলা। পৃথিবীর উন্নত কোন দেশের উন্মুক্ত সড়কে, পার্কে, খেলার মাঠে বেওয়ারিশ কুকুর পাওয়া যায় না।' (দ্য ডেইলি স্টার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০)। এটিই মূল এবং অন্যতম কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়। অন্যান্য যে সকল কারণ রয়েছে (যেমন, কুকুর কামড়ালেই জলাতঙ্ক হয়, রাস্তায় বের হলেই কিংবা নামাজ পড়তে যাবার সময় কিংবা শিশুদের দেখলেই কুকুর কামড়ায় ইত্যাদি) সেসবের বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই এবং সেসবের বিপক্ষে যথেষ্ট জোরালো ও নির্ভরযোগ্য যুক্তি আছে।
ফলে আমার এই লেখায় আমি মূলত প্রধান ও অন্যতম কারণটিই বিশ্লেষণ করব। একথা সত্যি যে, একটি প্রাণী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনেকভাবেই আমাদের উপকার করে থাকে। বিপদের পরম বন্ধু হিসেবে কুকুরের কথা বলা হলে বাড়ি পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে গোয়েন্দা ভূমিকা পালন করা, শিকারের সময় সাথে থাকা থেকে শুরু করে রাতে হিংস্র প্রাণীর বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা, শিশুর বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন থেকে শুরু করে ক্ষতিকর প্রাণী নিধন করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া সার্বিকভাবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার কথা না বললেই নয়।
মেয়র যে উন্নত ঢাকার কথা বলেছেন তা পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন তত্ত্বের সাথে মেলে না। এছাড়া উন্নত দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের তুলনা ঠিক যুক্তিযুক্ত নয়। উন্নত দেশে যে সকল ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে তারা তা নিশ্চিত করেছেন সেটা ব্যাখ্যা করে দেখি না কিংবা সে জায়গাটাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেই না। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের আবর্জনার উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। আমরা জানি, সেখানে প্রতিদিন পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় না এমন আবর্জনাও সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো একটি দ্বীপে নিয়ে গিয়ে ইনসিনারেশন প্ল্যান্টের মধ্যে পোড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই আগুন যে তাপ তৈরি করে তা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো পরিবেশ দূষণ না হয় সেটা নিশ্চিত করা হয়। ইনসিনারেশন প্ল্যান্টের চিমনি থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের না হয়ে বিশুদ্ধ বায়ু ছাড়া পায়। প্ল্যান্টের ৯০ শতাংশ আবর্জনা পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বাকী ১০ শতাংশ ছাইয়ে পরিণত হয়। সেই দূষিত ছাইয়ের জন্যও আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই ছাই অন্য আরেকটি দ্বীপে নিয়ে গিয়ে পানিতে ফেলা হয়। কিন্তু সেই পানি আবার সাগরে মেশে না। সেই ছাই থেকে যায় পানির নিচে সবসময়ের জন্য। একে বলতে পারি, পরিষ্কার আর পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা। ফলে সমুদ্রের নিচের প্রাণীও নিরাপদ থাকে, বনও থাকে দূষণমুক্ত, অবাধ বিচরণ করে স্থলজ প্রাণীরা। সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে তারপর সেখানে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং স্বাভাবিক কারণেই তা বিশ্বব্যাপী অনুসরণীয় উদাহরণ তৈরি করেছে। অথচ আমরা কোনো ধরনের আলোচনা ও পরিকল্পনা ছাড়াই কুকুর স্থানান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়েছি। যা সুনিশ্চিতভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে, জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বায়োডাইভার্সিটি সামিটে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা না পেলে পুরো মানবজাতিই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে বিশ্বে বাস করি, সেখানে প্রতিটি প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, এই বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটি প্রজাতির আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি চার দফা পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। এ সকল সুপারিশসমূহের মধ্যে যেকোনো বিনিয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেটা ভবিষ্যতের জন্য কতটা টেকসই হবে; জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার মাধ্যমে বৃহত্তর জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং আইন ও নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে – এ দুটি অন্যতম। (সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১ অক্টোবর, ২০২০)
তাই, আমাদের বিশেষত নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে। নগরের পরিবেশে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীরা কখনোই জঞ্জাল, অবাঞ্ছিত, অনাহূত, অনর্থক ও বেওয়ারিশ নয়। নগরে কুকুরসহ সংশ্লেষিত সব প্রাণীর অস্তিত্ব সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা রয়েছে। আর সেটা টিকিয়ে রাখতে পারার মাধ্যমেই প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত হতে পারে, হতে পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ নগর প্রতিষ্ঠা করা। আমরা শহরটাকে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যবান্ধব করে তুলব নাকি এ ধরনের আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেবার মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে হাঁটব? এই সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। কারণ এখন এটা শুধু একটি সিটি করপোরেশনের ব্যাপার হলেও, সেটাকে ক্ষুদ্র বা তুচ্ছ করে দেখাটা ঠিক হবে না। কারণ এর সাথে পুরো ভবিষ্যৎ নগরায়ণ প্রক্রিয়ার প্রশ্ন ও দর্শন ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
একটু ভেবে দেখুন তো একজন বেওয়ারিশ মানুষকে আহত হতে দেখলে কিংবা তার লাশ দেখলে আমরা কী করি? আর একটি প্রাণীকে আহত হতে দেখলে কিংবা তার লাশ পড়ে থাকতে দেখলে আমরা কী করি? প্রাণীর প্রসঙ্গে আসার আগে একটু মানুষ প্রাণীটির সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই। একুশে টেলিভিশনের গত ৯ জুন, ২০২০-এ প্রচারিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, "দীর্ঘসময় ধরে অনেক খোঁজ করার পরেও যখন তার কোনো আত্মীয় বা অভিভাবক পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমাদের দ্বিধান্বিত অবস্থা– কী করবো। অবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আত্মীয় পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাকে ফেলে রেখে চলে যাব না। বরং বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে হলেও তাকে দাফন করা মানবিক কর্তব্য। … হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় জিডি করে থানার কাছ থেকে একটা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এরপর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবেই তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত হলো।… কত অর্থবিত্ত খ্যাতি সুনাম প্রতিপত্তি! এতকিছু থাকার পরেও তিনি এখন বেওয়ারিশ! সব থাকার পরেও তার শেষ যাত্রা হলো যাদের কেউ নেই তাদের শেষ যাত্রার মতো সেই বধ্যভূমি গোরস্থানে। অনেকটা বেওয়ারিশ মানুষের মতোই।" অর্থাৎ মানুষ প্রাণীটির ক্ষেত্রেও ধর্ম-বর্ণ-জাতিভেদ নির্বিশেষে বেওয়ারিশ যারা, তাদের উপকার করার ক্ষেত্রে মানসিকতা ও মানবিকতা দৃশ্যমান। এছাড়া লাশ দাফনের ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনাও লক্ষ্য করা যায়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে যা অনুপস্থিত, যা প্রতিষ্ঠা হওয়া এখন সময়ের একটি অন্যতম দাবি হবে।
পশুপাখির প্রতি মমতা দেখানোও স্বাভাবিক মানবিক গুণ। যা আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো ধর্মই প্রাণীর প্রতি হিংস্র, নির্মম ও নৃশংস আচরণের কথা বলে না কিংবা শিক্ষা দেয় না। বরং সব ধর্মই সৃষ্টির প্রতি মমতাশীল হওয়ার শিক্ষা দেয় এবং বলে, স্বজাতি হোক কিংবা না হোক, যেকোনো জীবের প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে। আর একটি মানবিক সামাজে 'বেওয়ারিশ' শব্দটির প্রয়োগ আসলে চলে না। মানুষের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বেওয়ারিশ বা মালিকানাহীন ব্যক্তির সম্পদকে নিজের মালিকানায় নেবার জন্য কত ধরনের অন্যায় পন্থা অবলম্বন করা হয় এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। অন্যদিকে বেওয়ারিশ অসহায় মানুষের দায়িত্ব ও দায়ভার গ্রহণ করার মতো মানুষ সমাজে সত্যিই বিরল।
সুতরাং মানুষই হোক আর প্রাণীই হোক, বিপর্যস্ত ও নির্যাতিত মানুষ কিংবা প্রাণী, তার দায়িত্ব প্রথম ও প্রধানত রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে তাদের সুরক্ষায়। পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের আচরণ সংবেদনশীল হলেই আগামী পৃথিবী সহজ, সুন্দর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।