Published : 27 Sep 2020, 09:18 PM
দুটো ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করা যাক। ২০১০ সালের অগাস্ট মাস। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জাপানের তয়ামা শহরে গেলাম একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দিতে। দিনের সেশন শেষে বিকালে একটু সময় পেলাম। ভাবলাম হোটেলের আশেপাশে একটু ঘুরে দেখি। কনফারেন্সে অংশ নেওয়া সবার জন্য সরবরাহকৃত কনফারেন্স মেটেরিয়েলস এর মধ্যে একটা থ্রি-ফোল্ড লিফলেটও দেওয়া আছে যাতে তয়ামা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর উল্লেখ আছে।
যেহেতু বিকাল হয়ে গেছে তাই হাতে ঘোরাঘুরির সময় কম। হোটেলের সবচেয়ে কাছের ২০ মিনিট হাঁটা পথের একটা জায়গা লিফলেট থেকে বাছাই করলাম। ম্যাপ দেখে দেখে হেঁটেই ওই জায়গায় পৌঁছে রীতিমত হতাশ হলাম! দশ ফুট বাই দশফুট একটা ছোট্ট ঘর, একটা পানির কল, আর তার পাশে একটা প্রবাহমান খাল। লোকজন এ কল থেকে পানি নিয়ে খাচ্ছে। এটা নাকি একটা দর্শনীয় স্থান, একটা প্রাচীন টেম্পল!
ঘটনাটা মনে পড়লো এ কারণে যে জাপানের পর্যটন বিভাগ তাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সব খুঁটিনাটি বিষয়কেও কনফারেন্সে আগত ব্যক্তিদের সামনে তুলে ধরেছে। নিশ্চয়ই ওই জায়গাটারও কোন ইতিহাস আছে। সময়ের অভাবে ওই জায়গা সম্পর্কে আগে বিস্তারিত জেনে তারপর বেড়াতে যেতে পারিনি। অবশ্য পর দিন আমাদের প্রেজেন্টেশন সেশন না থাকায় দূরবর্তী তাতিয়ামা মাউন্টেন দেখতে গিয়েছিলাম যেখানে মধ্য গ্রীষ্মেও ১৮ ফুট পুরুত্বের বরফ থাকে। এত সহজে কম খরচে এত সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করতে পেরে আমরা এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে তা স্মৃতিতে আজও অম্লান। যে কয়দিন তয়ামাতে ছিলাম অবসরে আশেপাশের কয়েকটি স্থাপনাও পরিদর্শন করেছিলাম। জাপানি ভাষা জানিনা, তারাও ইংরেজি তেমন জানে না, তথাপি ঘুরাঘুরি করতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি।
অন্যদিকে, ১৯৯৭-৯৮ সালের কোন এক সময় গিয়েছিলাম কক্সবাজার। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। লন্ডন থেকে কিছু বন্ধু এবং ছোটভাই এসেছিল দেশে; তাদের সঙ্গ দিতেই মূলত তখন দল বেঁধে আমাদের কক্সবাজার যাওয়া। রাতের বাসে চড়ে সকালে কক্সবাজার পৌঁছাই। আমার এখনও মনে পড়ে সেই রাতে আমি বাসে ঘুমাইনি। চাঁদনি রাতে রাস্তার আশেপাশের যে দৃশ্যগুলো উপভোগ করেছিলাম তা সত্যি ভুলবার নয়। যাইহোক, সকালে হোটেলে ব্যাগ রেখে নাস্তা খেয়ে সবাই নেমে পড়ি সমুদ্রে। সারা দিন হৈ-হুল্লোড় করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে রাতের খাবার খেয়েই শুয়ে পড়ি। সবাই এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙেনি তাই পরিকল্পনায় থাকা সত্ত্বেও সুর্যোদয় দেখতে সৈকতে যেতে পারিনি। আমরা সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছি কিন্তু লন্ডন থেকে আগত ছোটভাই মনি ভোরেই ক্যামেরা নিয়ে বিচে চলে যায়। সকাল দশটার দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গে পুলিশের হাঁকডাক শোনে। চোখ মেলে চেয়ে দেখি হোটেল কক্ষে পুলিশ, মনির মাথায় ব্যান্ডেজ। বিস্ময়ে ঘটনা জানতে পারলাম যে, ছিনতাইকারীরা মনিকে মেরে মাথা ফাটিয়ে তার ক্যামেরা ও টাকাপয়সা নিয়ে গেছে।
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সে থানায় গেছে। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও নাকি ছিনতাইকারীদের ধরতে পারেনি, তার ক্যামেরাও উদ্ধার করে দিতে পারেনি। কপাল ভালো যে, সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলেনি। যাই হোক, এ ঘটনার পর, ট্যুর প্লান সংক্ষিপ্ত করে ওইদিন সন্ধ্যাতেই আমরা কক্সবাজার ত্যাগ করি। মনি এবং তার বন্ধুরা এর পর আর কোনদিন কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছে কিনা জানি না। আমি অবশ্য এর পরেও কয়েকবার কক্সবাজার গিয়েছি। পরিস্থিতি আগের চেয়ে খানিকটা উন্নত হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
দুটো ঘটনার উল্লেখ করলাম আমাদের পর্যটন খাতের দুরাবস্থা তুলে ধরার জন্য। কবি বলেছেন, "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।" বাংলাদেশটা আসলেই অনেক সুন্দর। রানির মত সুন্দর! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের এক দারুণ সমাহার আমাদের এই বাংলাদেশে। সিলেট অঞ্চলের চা বাগান, পাহাড়, জলাশয়, কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, খুলনার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা হাওর-বাওর, নদী-জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থাপনা; কী নেই আমাদের দেশে! আমরা চাইলেই নিজের দেশের সৌন্দর্য প্রাণভরে নিজেরা উপভোগ করতে পারি, ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারি বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর মাধ্যমে।
বিদেশিরা আমাদের দেশে বেড়াতে আসতে পারে, মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যেতে পারে কিন্তু আমাদের পর্যটন খাত এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভ্রমণ সংস্কৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু পর্যটক সহায়ক ব্যবস্থা এখনও তেমনভাবে গড়ে উঠেনি। বিত্তবানদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষভাবে বড় শহর থেকে একটু দূরে বেশ কিছু রিসোর্ট নামের তারকা হোটেল গড়ে উঠেছে। এসব তারকা রিসোর্ট গড়ে উঠার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, নিরাপত্তা। বিত্তবানরা নাগরিক জীবনের ক্লান্তি কাটাতে এসব রিসোর্টে রাতযাপন নিরাপদ মনে করেন। কিন্তু এসব রিসোর্ট দেশি-বিদেশি সাধারণ পর্যটকদের টানতে পারছে বলে মনে হয় না। দেশের পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করার জন্য মৌলিক যে বিষয়গুলো বিদ্যমান থাকা দরকার সেসব বিষয় এখনও সেভাবে গড়ে উঠেনি। পর্যটন সংস্কৃতি গড়ে না উঠায় আমরা এখনও পর্যটন অর্থনীতি নির্ভর দেশগুলোর কাতারে আমাদের পর্যটনকে নিয়ে যেতে পারিনি। আমরা আজও পর্যটন এর আধুনিক ব্র্যান্ডিং করতে পারিনি।
যেকোন দেশের পর্যটনের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা থাকা প্রয়োজন তা হচ্ছে আকর্ষনীয় স্থান সমুহের স্থানীয় সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা। স্থানীয় লোকজন আন্তরিক এবং সৎ না হলে স্থানীয় পর্যটন কোনওভাবেই গড়ে উঠবে না। বাইরের একটা লোক কোন এলাকায় যেয়ে যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, তবে সে সেখানে যাবে কেন? থাকা-খাওয়া এবং বেড়ানোর জায়গার মানুষগুলোর ব্যবহার যদি অমায়িক না হয়, তবে যে কেউ এক ধরনের অস্বস্তিতে ভুগবে এবং তার বেড়ানোর আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যাবে। পর্যটন সংস্কৃতি গড়ে উঠলে স্থানীয়রা পর্যটন-বান্ধব হবে। পর্যটন সংস্কৃতি নিয়ে দেশে তেমন আলোচনা হতে দেখা বা শোনা যায়নি। যে কোন দেশের পর্যটন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পর্যটন সংস্কৃতি গড়ে তোলা। পর্যটনকে স্কুল কলেজের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে করে পর্যটন সংস্কৃতি গড়ে উঠে।
স্থানীয়দের আন্তরিকতা থাকার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। নিরাপত্তার বিষয়টিও অনেকাংশে নির্ভর করে স্থানীয়দের আচরণের উপর। চুরি-ছিনতাই, বাড়তি মুল্যে পণ্য বিক্রয়, প্রতারণাপূর্ণ সেবা প্রদান ইত্যাদি স্থানীয়দের এড়িয়ে বাইরে থেকে লোক এসে করতে পারে না। ফলে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন একটি এলাকার লোকজনের আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার, পর্যটকের নির্বিঘ্ন ঘোরাফেরা, সাশ্রয়ী ও যৌক্তিক মূল্যে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে দেশি বিদেশি সব পর্যটকই ওই এলাকা ভ্রমণে উৎসাহিত হবেন। যেকোনও দেশের পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেসব দেশের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মানুষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পছন্দ করে। আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার তীক্ত অভিজ্ঞতা অনেকের আছে।
সিলেট এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে যাওয়া নারী ধর্ষিত হয়েছেন কলেজ ক্যাম্পাসেই। এরপর কেউ এমসি কলেজ দেখতে যাবার সাহস করবে বলে মনে হয় না।
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার অন্যতম একটা বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। সড়ক নিরাপত্তা সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক কষ্টে মানুষ কোথাও বেড়াতে যেতে চাইবে কেন? রাস্তাঘাট ভাঙ্গা বা দুর্ঘটনাপ্রবণ হলে ঐ পথ কে মাড়াবে? আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে করতে মানুষ যখন হাফিয়ে উঠে তখনই চায় কোথাও বেড়িয়ে একটু চাপমুক্ত হয়ে আসতে। সেখানে কোথাও যাওয়ার জন্য যদি আরও বেশি চাপ নিতে হয় তবে মানুষ সেদিকে যাবে না। সহজ ও সহজলভ্য যাতায়াত, নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন এগিয়ে যাবেই।
যেকোনও দর্শনীয় স্থানকে আকর্ষণীয় এবং অন্যের কাছে আগ্রহের বিষয় করে তুলতে প্রয়োজন তথ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ। বিভিন্ন মাধ্যমে ওইসব স্থান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করলেই মানুষ ঐসব জায়গা ভ্রমণে আগ্রহী হবে। জায়গাটি কেমন, কেনো সেটা দর্শনীয় স্থান, কিভাবে যেতে হবে, কোথায় থাকা খাওয়া যাবে, খরচ কেমন পড়বে এবং সেখানে গেলে কী অর্জন হবে তার বিস্তারিত বর্ণণা ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মাধ্যমে দিতে হবে। ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে সেইসব জায়গায় ভার্চুয়াল ট্যুরের ব্যবস্থা থাকলে মানুষ ঐসব জায়গা ভ্রমনে আগ্রহী হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যাপ্ত তথ্য অনলাইনে থাকা চাই এবং সেটা হওয়া উচিত নির্ভরযোগ্য। বাংলায়, ইংরেজিতে এবং সম্ভব হলে অন্যান্য ভাষায়ও পর্যাপ্ত তথ্য রাখতে হবে অনলাইনে। ছবি, ভিডিও, ম্যাপ, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নাম্বার ইত্যাদিসহ ট্যুরিস্ট স্পটগুলোকে আকর্ষণীয়ভানে উপস্থাপন করতে হবে। তবেই যে কেউ সেসব তথ্য পড়ে কোন একটা স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হবে। দেশিয় মিডিয়ায় পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাসগুলো নিয়মিত পর্যটন মেলার আয়োজন করতে পারে, দুতাবাসে পর্যটন সহায়ক ডেস্ক স্থাপন করতে পারে। তবেই বেদেশীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে এবং বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ট্রাভেলার স্বেচ্ছায় বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য শেয়ার করেন যা কিনা কেবলই তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্য। সার্বিক তথ্যভাণ্ডার থাকে পর্যটনের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের কাছে। ফলে তথ্য তাদেরকেই সরবরাহ করতে হবে এবং সেটা অবশ্যই মানুষের হাতের নাগালে থাকবে।
পর্যটন বিষয়ক তথ্য সরবরাহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, নদী বন্দর, বিমান বন্দরে তথ্য অফিস স্থাপন করা এবং সেসব অফিসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পারদর্শী ও আন্তরিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। আন্তরিকতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ কোন তথ্য জানতে চাইলে বা সহযোগিতা চাইলে তা যেনো চাহিবা মাত্রই পাওয়া যায়। অফিসের অবস্থানটিও হতে হবে এমন জায়গায় যেনো একজন পর্যটক যানবাহন থেকে নেমে ডানে-বায়ে তাকালেই পর্যটনের অফিস তার চোখে পড়ে। সেখান থেকে কোন একটি স্থানে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সস্তা উপায়টি বাতলে দিবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তখনই পর্যটক কোন একটি জায়গা ভ্রমনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন।
দর্শনীয় স্থান সমূহে প্রয়োজনমত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইড থাকা উচিত। ইংরেজিতে পারদর্শী গাইড থাকলে ভালো। গাইড এর আচরণ, পোশাক হতে হবে সাবলীল, ফি হতে হবে যৌক্তিক, ব্যবহার হতে হবে আন্তরিক যাতে ভ্রমিত স্থানের পাশাপাশি গাইডকেও মানুষ অনেকদিন মনে রাখে। লাউয়াছড়া ভ্রমণের সময় সাথে থাকা গাইডের নাম আমার মনে নেই, চেহারাও কোনওদিন মনে পড়ে না, কিন্তু নেপালের পোখারার ডেভিস ফল পরিদর্শনে গাইড হিসাবে সাথে থাকা ছোট্ট দেবীকে প্রায়ই মনে পড়ে।
পর্যটন স্থানগুলোতে নারীর প্রতি পজিটিভ মনোভাব, নারীর নিরাপত্তা বিধান, শিশুর নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিষ্কার পাবলিক টয়লেট এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২০০৮ সালের দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহর থেকে বেশ খানিকটা দুরে একটা বিল দেখতে গিয়েছিলাম । সেখানে শরতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে। পাকা সড়ক থেকে ঝোপঝাড়পূর্ণ মেঠো পথ ধরে পায়ে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটা ওয়াচ টাওয়ার। বাইনোকুলার দিয়ে পাখি দেখা যায়। কিন্তু ঝোপঝাড়পূর্ণ পায়ে হাঁটা পথে নারী এবং পুরুষের জন্য আলাদা অন্তত তিনটি পাবলিক টয়লেট দেখতে পেলাম যার মধ্যে টয়লেট টিস্যু পর্যন্ত দেওয়া আছে। অথচ আমাদের দেশে মেয়েরা ঘর থেকে বেরোবার আগে ঠিকমত পানি খাবে কিনা সেটা দশবার ভেবে নেয়।
পর্যটন যেকোনও একটি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে, ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর সামনে পজিটিভলি তুলে ধরে এবং স্থানীয় জনসাধারণের রুটিরুজিরও সংস্থান করে। বিশ্বের বহু দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে পর্যটন থেকে। সেসব দেশের মানুষ পর্যটকদের অতিথি গণ্য করে। পর্যটন এর উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত আমাদের দপ্তরগুলো, স্থানীয় জনগণ এবং সর্বোপরি সবাই মিলে কাজ করলে অসংখ্য পর্যটন স্পট এর অধিকারী বাংলাদেশ একদিন পর্যটন শিল্পে অনেক উন্নতি করতে পারবে। আমি পর্যটন বিষয়ক কোন বিশেষজ্ঞ নই, তেমন কোন নিয়মিত পর্যটকও নই। পর্যটন বিষয়ে ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে দেশের সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে আমার পর্যবেক্ষণটা এ লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছি। সার্বিকভাবে নিরাপদ পর্যটন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশ একদিন পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা।