Published : 27 Aug 2020, 10:26 PM
রাজধানী ঢাকা সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর হতে ঢাকার জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসাথে বর্ধনশীল জনসংখ্যাকে ঘিরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসস্থান গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত উপায়ে। বর্তমান হিসেবে ঢাকা শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল খোলা জায়গা ও রাস্তাঘাট রয়েছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে পুরো শহর ছেয়ে গিয়েছে কংক্রিটের মোড়কে।
উল্লেখ্য যে, বাড়িঘর, শিল্প-প্রতিষ্ঠান আর যানবাহনের পরিমাণ বা ঘনত্ব বিবেচনায় এই খোলা জায়গা ও রাস্তার পরিমাণ ৪-৫ শতাংশের এর বেশি হবেনা। আবার তূলনামুলকভাবে উঁচু জায়গা ব্যবহারের পাশাপাশি নিচু জায়গাসমূহ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে বছরের যেকোনোসময়ে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। আর এই জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। নগর জীবন থেকে শুরু করে উৎপাদনমুখী কৃষিক্ষেত্রেও যার প্রভাব রয়েছে বিস্তর।
জলাবদ্ধতায় একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হচ্ছে, একইসাথে এর প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রেও। কর্মঘণ্টার হিসেবে মানুষের বহু সময় ব্যয় হচ্ছে রাস্তাঘাটে আটকে থেকে। স্থবির হয়ে যাচ্ছে পথচলা ও পরিবহণ। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের শুধু রাজধানী ঢাকাতেই এই সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে এমনটা নয়। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনাসহ প্রতিটা মেগাসিটিতেই রয়েছে এই সমস্যা। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও জলাবদ্ধতার প্রভাব প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।
জলাবদ্ধতার একটি অন্যতম ক্ষতিকর অনুষঙ্গ হলো যানজট। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণা জরিপে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক যানজটের এক ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠে। শুধু যানজটের কারণে ঢাকা শহর প্রতিবছর প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এবং উক্ত জরিপে এটাও উল্লেখ করা হয় যে, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা হাতে নিলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব। বিখ্যাত পত্রিকা ইকোনোমিস্টে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানভিত্তিক জরিপের উপর প্রতিবেদনে যানজটের এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে শুধু যানজটের জন্য বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ ৬.৩ থেকে ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে যুক্তরাজ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১২.২ বিলিয়ন ডলার এবং জার্মানিতে ৩.১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে উন্নত দেশগুলো যানজটের অন্যতম কারণ, 'জলাবদ্ধতা' রোধে ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তারা এখন জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটাই মুক্ত। তবে আমাদের দেশে এখনো এই সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।
অন্যান্য ক্ষতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, একটানা পানি জমে থাকার কারণে রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ভিত দুর্বল হয়ে পড়া, এবং সেগুলো আর টেকসই না থাকা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। আবার বৃষ্টির পানিতে উপস্থিত বিভিন্ন লবণ তলানি পড়ে বেড়ে যায় ভূপৃষ্ঠের লবণাক্ততা, যার প্রভাব পড়ে বাস্তুতন্ত্রে ও জীববৈচিত্র্যে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত জায়গার জীববৈচিত্র্যের তুলনায় অনাক্রান্ত জায়গার জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি। পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন হিসেব করছে কিভাবে কৃষি জমির জলাবদ্ধতা রোধ করে উৎপাদন বাড়ানো যায় তখন আমরা ভাবছি কিভাবে রাজধানী ও অন্যান্য নগরের জলাবদ্ধতা দূরীভূত করে নগরজীবন স্বাভাবিক করা যায়।
এই সমস্ত চিত্র মিলিয়ে মসজিদের শহর, প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের শহর ঢাকাকে এখন সবাই জলাবদ্ধতার শহর হিসেবেও চিনে নিচ্ছে। অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত ভবনগুলোকে উপর থেকে দেখলে অনেকটা ভাসমান স্থাপনা বলেও মনে হতে পারে। ঢাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জলাবদ্ধতার এ সমস্যা বহু দিনের পুরনো। আশির দশককে ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা গড়ে ওঠার একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড (Transition period) বলে ধরে নেয়া যায়।
অতীতে ঢাকা শহরে প্রায় ৬৫টি খাল, ২০০০ পুকুর এবং আড়াই হাজার ক্যাচপিট ছিল পানি নিষ্কাশনের জন্য। এই শহরের খালগুলো ছিল যথেষ্ট পরিমাণে প্রশস্ত। ঢাকার চারপাশে থাকা মোট ৬টি নদী; পশ্চিমের বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী, পূর্বে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী, দক্ষিণের ধলেশ্বরী নদী এবং উত্তরের টঙ্গী খাল, শহরের পানি নিষ্কাশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো।
একাধিক গবেষণামূলক প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ঢাকার মোট ৬৫টি খালের মধ্যে ৪৩টি খালই অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে এবং ২৪টি খাল আংশিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তৈরিকৃত এক তালিকায় দেখা যায় একটি বিলুপ্ত (কসাইবাড়ি খাল) হয়ে যাওয়া খালসহ মোট ৪টি খালে (রামচন্দ্রসাগর খাল, কাটাসুর খাল, কসাইবাড়ি খাল, কল্যাণপুর খাল) প্রায় ৩২৪টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। একদা প্রবাহিত খালগুলোর মধ্যে বিলুপ্তির আশংকায় আছে মোট ২৬টি খাল এবং ২০টি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ১২টি খাল প্রবাহিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে এবং ২১টি খাল প্রবাহিত হতে পারছে বর্ষাকালে৷
একদিকে শহরের আভ্যন্তরীন খালগুলোর বেহাল দশা আর অন্যদিকে আশেপাশে থাকা নদীগুলো প্রতিদিন অধিকতর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সমস্যা আরো গুরুতর রূপ নিচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা এবং তুরাগ প্রতিটি নদীই অবৈধ দখল, আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে বালু নদী বর্তমানে চরম নাব্যতা সংকটে ভুগছে এবং নদীটির উপর অপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনের অধিক ব্রিজ নির্মাণ করায় এটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। একইসাথে প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য এবং শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বালির ব্যবসাও একটি লক্ষ্যণীয় ক্ষতিকর কারণ।
অন্যদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্যেও ঢাকার পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, যেখানে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় মোট পুকু্রের সংখ্যা ছিল ২ হাজারটি সেখানে ২০০৭ এ তা নেমে আসে ২০০ এর দিকে এবং বর্তমানে মোট পুকুরের সংখ্যা ১০০ এর কম। এবং আড়াই হাজার ক্যাচপিটের মধ্যে বর্তমানে প্রায় এক হাজারটি ক্যাচপিট বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে দখল-বেদখল, অবৈধ স্থাপনা আর অব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ১৯৮৯ সালে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্বভার ন্যস্ত করা হয় ঢাকা ওয়াসার উপর। এরপরে প্রায় ৩০টি বছর কেটে গেলেও আশানুরূপ সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা খরচ করা হয় ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে। সেই সাথে বিগত বছরগুলোতে ড্রেনেজ বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করেছে ঢাকা ওয়াসা৷ বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ২০১২-২০১৭ পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যয় করেছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও ফুটপাত উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্বলিত বাজেটের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৬০০ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকা। এতদ সত্ত্বেও কোনো সমাধান নেই।
বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের হার ঢাকায় ৮০ শতাংশ এবং বাকি ২০শতাংশ জোগান দেওয়া হয় ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত পানির উৎস থেকে। এর ফলে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর খুব দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে একুইফারের পানির গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের এক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসা এবং ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার ৮০ শতাংশে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেও থেকে যায় টেকসই ব্যবস্থাপনার ব্যপার। কতটা টেকসই হবে এমন ব্যবস্থা? ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করার আগে দরকার হবে ফিল্টার করার। তৈরি করতে হবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের। তাহলে সবমিলিয়ে দেখা যায় খরচের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কোনোকিছুই এখনো স্পষ্ট নয় কী হবে ব্যবস্থা আর কী হতে যাচ্ছে তার ফলাফল।
অন্যদিকে অদ্যাবধি ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা করছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলকৃত খালগুলো পুনরুদ্ধার করার। কিন্তু প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে এই পরিকল্পনা কতোটা কার্যকরী হবে সেই প্রশ্ন যেমন থেকে যায় তেমনি কত সময়ের প্রয়োজন হবে সেটাও এখানে অনিশ্চিত। কিন্তু এই সমাধানের আশায় থেকে ততদিন জলাবদ্ধতার সংকট বয়ে বেড়ানো শহরবাসীর জন্য যেমন অসহনীয় তেমনি অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়াও দুরূহ।
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে জলাবদ্ধতার সংকট দূর করা সময়ের দাবি এবং এই লক্ষ্যে উপযুক্ত গবেষণা ও তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু সরকারী ও স্বায়ত্ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত প্রকল্পসমূহ কোনো টেকসই সমাধান দিতে সক্ষম হয়নি সেহেতু এই সমস্যা সমাধানে আরও ব্যাপক অ্যাকাডেমিক গবেষণা প্রয়োজন। এই তাগিদ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার এবং অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে যার নাম দেওয়া হয়েছে "ওয়াটারলগিং রিডেম্পশান টেকনোলজি"।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক চালানো প্রযুক্তি "রেইন গার্ডেন" থেকে উৎসাহিত হয়ে পরিকল্পনা করা হয় এই প্রযুক্তির। সমস্যার অন্যতম একটি বড় কারণ হচ্ছে ঢাকার ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ মধুপুর গড়ের লাল মাটির অভেদ্য একটি স্তর দ্বারা গঠিত যেটা ভেদ করে জমে থাকা জলাবদ্ধতার পানি নিচে প্রবেশ করতে পারে না এবং অন্যদিকে ড্রেনেজ অবস্থা ভালো না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ভূপ্রাকৃতিক অবস্থার এই ভিন্নতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং দূষণের মাত্রা অত্যাধিক বেশি হওয়ার জন্যে "রেইন গার্ডেন" প্রযুক্তিকে সরাসরি প্রয়োগ করা সম্ভব হবেনা। তাই আমাদের পরকিল্পনা হলো যদি আমরা ভূপৃষ্ঠে জমে থাকা এই পানিকে মধুপুর গড়ের লালমাটি পার করিয়ে তার ঠিক নিচে থাকা ডুপিটিলা ফরম্যাশনে পাঠিয়ে দিতে পারি, যেটা ভেদ্য এবং পুরো বেঙ্গল বেসিনে পানি প্রবাহী একমাত্র স্তরবিন্যাস নামে পরিচিত, তবে এই সমস্যার একদিকে যেমন সমাধান হবে অন্যদিকে ঢাকার পানির স্তর নিচে নেমে শুকিয়ে যাওয়া অংশেও নতুন করে পানি দিয়ে পূর্ণ হবে। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া রোধ করার পাশাপাশি পানির গুণগত মান রক্ষা করাও সম্ভব হবে।
প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার জন্য জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল প্রাঙ্গনকে বেছে নেয়া হয়েছে যেখানে একটি কূপ স্থাপন করা হবে পরীক্ষামূলকভাবে এবং তারপরই চূড়ান্ত কূপটি বসানো হবে। এর আগে ভূতত্ত্ব বিভাগে কৃত্রিম মডেল অনুযায়ী কাজ চলছে যেখানে ভূপৃষ্ঠের সম্পূর্ণ স্তরবিন্যাসকে অনুসরণ করে মডেল তৈরি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মাপের মোট চারটি কূপ এবং নালা বসানো হয়েছে জমে থাকা পানিকে সরাসরি ডুপিটিলা একুইফারে প্রবেশ করানোর জন্য। নালা ও কূপের মধ্যে দেওয়া হয়েছে নুড়িপাথরের প্যাকিং যেটার জন্য পানি নিচের স্তরে যাওয়ার আগেই পরিশোধিত হয়ে যাবে অনেকটাই। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের পরীক্ষাও শেষ করা হয়েছে যেখান থেকে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। তবে এটাকে আরো টেকসই করার জন্য প্রয়োজন হবে নিয়মিত মনিটরিংয়ের। শহুরে বৃষ্টির পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাদামাটি থাকে যেটা বছরে অন্তত কয়েকবার পরিষ্কার না করলে আবদ্ধ করে ফেলতে পারে পানি নিচে যাওয়ার রাস্তা। এজন্যে আলাদা ফিল্টার ব্যবহার নিয়মিত বিরতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে ফিরে পাওয়া যাবে আগেরমতোই কার্যক্ষমতা।
ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবহীন এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে রাজধানীর জলাবদ্ধতা আক্রান্ত সমস্ত জায়গাতেই। এমনকি দেশের অন্যান্য অধিকাংশ স্থানেই করা যাবে এটার ব্যবহার৷ জমে থাকা পানি সরাসরি প্রবেশ করানোর জন্য একুইফারে পানির গুণাগুণে এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ জমে থাকা পানিতে অনেক দূষণীয় পদার্থ ও ভারী দ্রবণীয় পদার্থ থাকতে পারে। সেজন্যে কূপে ব্যবহৃত ফিল্টারের গুণগত পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তাও বিবেচনায় রয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতা আক্রান্ত জায়গাগুলোতে যেখানে বিকল্প কোনোই সমাধান নেই সেখানে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সর্বোচ্চ ফলাফল বয়ে আনবে বলেই আমরা আশাবাদী। একদিকে যেমন গড়ে ওঠা পরিবেশও তার জায়গায় থাকবে তেমনি সমস্যার কার্যকরী সমাধানও পাওয়া যাবে এই ব্যবস্থায়।