Published : 24 May 2020, 05:59 PM
"আত্মঘাতী হামলাকারীর কবলে বাংলাদেশ! হাজার হাজার আত্মঘাতী হামলাকারী সুইসাইডাল ভেস্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মুহুর্মুহু বোমায় কেঁপে উড়ছে বাংলার প্রতিটি অঞ্চল, চারিদিকে ধোঁয়া উঠছে। সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দিগ্বিদিক ছুটছে! কন্ট্রোল রুমে বিশেষজ্ঞরা বসে রয়েছেন সামনে বড় স্ক্রিনে বাংলাদেশের ম্যাপ, পুরো ম্যাপ লাল রংয়ে ভরে আছে।"
কী ভাবছেন?- এক্সট্র্যাকশনের পরে নেটফ্লিক্সের পরবর্তী সিরিজের গল্প বর্ণণা করছি যেটার প্লটও বাংলাদেশ? হাস্যকর মনে হচ্ছে?
কিন্তু, ঘটনা সত্যি! হাজার হাজার আত্মঘাতী হামলাকারী এখন আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শরীরের ভেতর সেট করা করোনাভাইরাস নামের টাইম বোম। শুধু পার্থক্য হলো আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা জানে তারা বোমা বহন করছে, এবং হামলা করে স্বেচ্ছায়। আর আত্মঘাতী করোনা-হামলাকারিরা হামলা করছে অজান্তে। দেশের সবকয়টি জেলায় এখন করোনা হামলাকারীরা পৌছে গেছে। বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশের গত ১৯ মে তারিখের করোনা ম্যাপটি দেখুন-
তবে, উপরের ছবিটি পুরো সিনেমা নয়, সামান্য ট্রেইলার মাত্র। ২৪ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষা হয়েছে ৮,৯০৮টি এবং করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১,৫৩২ জনের, মারা গেছেন ২৮ জন। যদি পরীক্ষাটি আরো বেশি জনের করা যেতো সন্দেহাতীতভাবেই করোনা শনাক্তের সংখ্যা আনুপাতিক হারেই বাড়তো। সেটি হচ্ছে না কারণ, সারা দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাব আছে মাত্র ৪৩টি। এইকারণেই পরীক্ষার সংখ্যা এতো কম এবং পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে ২ থেকে ৭ দিন লাগছে। আর এই সময়ক্ষেপণই প্রতিদিন তৈরি করছে আরো নতুন মানব করোনা বোমা।
আমরা তো আসলে আমাদের সঠিক আক্রান্তের সংখ্যা জানছি-ই না। আমরা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে একটা অংশকে শনাক্ত করছি। এর বাইরে আরো অসংখ্য টাইম বোমা পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সঠিক তথ্য পাচ্ছি না, কিভাবে থামাবো বুঝছি না। যার ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও দেখা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা।
করোনাভাইরাসের সঠিক চিত্র জানলে আমরা এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতাম না। আর সঠিক চিত্র আমাদের দিতে পারে টেস্ট, টেস্ট, এবং টেস্ট।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে ৪৩টি ল্যাবে যে পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে বলে রিয়েলটাইম পিসিআর। এই পদ্ধতিতে নমুনা হিসেবে রোগীর লালা কিংবা শ্লেষ্মা পরীক্ষা করা হয়। করোনাভাইরাস নির্ণয়ে এই রিয়েলটাইম পিসিআরকেই সবচেয়ে নির্ভুল ধরা হয়।
কিন্তু, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি। এর পাশাপাশি এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য যে রি-এজেন্ট লাগে সেটিও খুব দামী। এতোকিছুর পরও এটি শতভাগ নির্ভুল নয়। এর পাশাপাশি ভারী যন্ত্রপাতি বসানোর পাশাপাশি এটি পরিচালনায় লাগে দক্ষ টেকনিশিয়ান। তাই, রিয়েলটাইম পিসিআরে প্রতিদিন লাখ লাখ টেস্ট করার বাস্তবতা এবং আর্থিক সামর্থ্য আমাদের তো নেইই, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেরও নেই। কিন্তু, আমাদের বাঁচতে হলে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতেই হবে।
পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে গেলে পরীক্ষা পদ্ধতি কম খরচে দ্রুত করার পাশাপাশি পরীক্ষার সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। রিয়েলটাইম পিসিআরের মতো ব্যয়বহুল এবং ভারী ল্যাব থেকে বিষয়টিকে র্যাপিড পরীক্ষার দিকে নিয়ে আসতে হবে। র্যাপিড টেস্টিং কিট/পদ্ধতি এক্ষেত্রে হতে পারে একটি গেইম চেঞ্জার। কারণ, রিয়েলটাইম পিসিআরে একটি পরীক্ষার রেজাল্ট পেতে দুই থেকে সাত দিন লেগে যাচ্ছে। একটি রিয়েলটাইম পিসিআর ল্যাবে যদি ১০০০ স্যাম্পল আসে, পরীক্ষা করতে হয়ত ২০ দিন লাগছে, সেখানে র্যাপিড কিট/পরীক্ষার মাধ্যমে একদিনে হাজার হাজার পরীক্ষা করা যাবে এবং ফলাফল পাওয়া যাবে। এছাড়া রিয়েলটাইম পিসিআর চালাতে যেমন দক্ষ টেকনিশিয়ান লাগে, অন্যদিকে সামান্য প্রশিক্ষণেই যেকোনও স্বেচ্ছাসেবী বা টেকনিশিয়ান র্যাপিড টেস্ট করতে পারবেন।
র্যাপিড কিটের প্রচলিত সমালোচনা হলো, এটিতে ফলস পজিটিভ (আক্রান্ত না হলেও পজিটিভ রিপোর্ট) বা ফলস নেগেটিভ (আক্রান্ত হলেও নেগেটিভ) আসার সম্ভাবনা থাকে।
র্যাপিড টেস্টিং কিট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ গত ২৫ শে এপ্রিল বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফলাফল- যেটিকে ফলস নেগেটিভ বলা হয়- আসতে পারে।
এই সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান আছে। র্যাপিড টেস্টে যাদের পজিটিভ আসবে, তাদের তো কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থা বা আইসোলেশনে যেতেই, হবে। উপসর্গ থাকার পরও যাদের কোভিড নেগেটিভ আসবে শুধু, নিশ্চিত হবার জন্য শুধু সেই পরীক্ষাগুলি আরটি পিসিআর ল্যাবে করা যেতে পারে। এতে করে সরকারের যেমন বিরাট অর্থের সাশ্রয় হবে, তেমনি ফলাফল নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।
দ্রুত করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে দুই ধরনের র্যাপিড ও সাশ্রয়ী পরীক্ষা আলোচিত হচ্ছে-
জি র্যাপিড ডট ব্লট কিট:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত হয়েছে 'জি র্যাপিড ডট ব্লট কিট'। ২০০৩ সালে সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ড. বিজন কুমার শীল। গণমাধ্যমে অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীলের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, ডট ব্লট কিটে ভুল রিপোর্ট তখনই আসে যখন শুধু অ্যান্টিবডি বা শুধু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। 'জি র্যাপিড ডট ব্লট কিট' শরীরের অ্যান্টিবডি ও ভাইরাল অ্যান্টিজেন দু'টি আলাদাভাবে পরীক্ষা করে বলে এতে প্রায় শতভাগ নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত মি. শীলের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের এই কিটে মাত্র পনের মিনিটেই করোনাভাইরাস টেস্টের ফলাফল পাওয়া যাবে, এবং খুব কম খরচে পরীক্ষা করা সম্ভব।। নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পেরিয়ে এই কিটের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে এটি অবিলম্বে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া দরকার।
ল্যাম্প (LAMP – Loop-mediated Isothermal Amplification) টেস্ট:
দ্রুত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের জন্য আরটি পিসিআরের তুলনায় ল্যাম্প পদ্ধতি খুবই সহজ ও সাশ্রয়ী। এর মূল উদ্ভাবকেরা এই পদ্ধতির সূত্র ও প্রক্রিয়া সারা বিশ্বের গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড বায়োল্যাব উহানের গবেষকদের সাথে এই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সিরাজের নেতৃত্বে তার বিভাগের দুইজন শিক্ষক, একজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের একজন শিক্ষক ল্যাম্প টেস্ট তৈরিতে কাজ করেছেন। এই পদ্ধতিতে সন্দেহভাজন রোগীর স্যাম্পল থেকে আরএনএ আলাদা করে কেমিকেল যুক্ত করে ইনকিউবেটরে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর কেমিকেলটি নানা রং ধারণ করে। রং দেখেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি নেগেটিভ না পজেটিভ বোঝা যায়। বাংলাদেশে ল্যাম্প পদ্ধতির গবেষক দলের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, ল্যাম্প টেস্টে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটে ফলাফল পাওয়া যায় এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব। গবেষকরা মনে করছেন, স্যাম্পল পরীক্ষায় এবং রি এজেন্ট আনার ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে এটি বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগটিও সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
একটি কথা অবশ্যই মনে রাখা উচিত, দেশের যেকোন অর্জন ও ভালো উদ্যোগের প্রশংসা আমাদের যেন বিল গেটস্ বা মার্ক জাকারবার্গের ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখে করা না লাগে। প্রতিভাবান বাংলা সন্তানদের আমরা যেন দল-মত নির্বিশেষে সম্মান দিতে পারি, এবং তার মেধাকে দেশের কাজে লাগাতে পারি।
আরেকটি বিষয় হলো, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
টেস্টিং এত দ্রুত না বাড়াতে পারলেও পাশাপাশি চালানো দরকার লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা। তার মানে টেস্টিং এর মাধ্যমে নিশ্চিত না হলেও লক্ষণ দেখেই বাসায় বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিনে চলে যেতে হবে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আলোকপাত করা যাবে আরো।
করোনাভাইরাসের দুষ্টচক্র
দারিদ্রের দুষ্টচক্রের কথা শুনেছেন। এবার শুনুন করোনভাইরাসের দুষ্টচক্রের কথা। যেখানে একজন নন-কোভিড রোগী জরুরি প্রয়োজনেও হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন না করোনাভাইরাসের পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকার কারণে এবং বাসা- হাসপাতাল-বুথ-বাহন/অ্যাম্বুলেন্স এই যাত্রাচক্রে নিজেরে ধীরে ধীরে আত্মঘাতীর কাতারে নিয়ে যান। একজন নন-কোভিড রোগীর করোনাভাইরাস আক্রান্তের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি কারণ রোগের কারণে তার শরীর আগে থেকেই রোগের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজড করেছে।
আবার একই ঘটনা একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের রোগীর ক্ষেত্রে ঘটে। তিনিও একই চক্রে নিজের অজান্তে এক জাদুকরি ছোঁয়ায় আশেপাশের মানুষকে আক্রান্ত করে যান।
উপরের দু'টি ঘটনার সাথে যুক্ত হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর ভুল তথ্য দেয়ার প্রবণতা। আমরা এটাকে বলছি করোনাভাইরাসের দুষ্টচক্র, যেটি আসলে শেষ হওয়ার নয়। আর এই চক্রে ঘুরে ঘুরে করোনাভাইরাস রোগী বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যারা নন-কোভিড তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
সেজন্য এই মুহূর্ত থেকেই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের উচিত করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা ঘরে ঘরে বা বাসার কাছাকাছি গিয়ে সংগ্রহের ব্যবস্থা করা। কোনভাবেই যেন একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি বাইরে এসে আক্রান্ত না হন বা অন্যকে আক্রান্ত না করেন। দ্বিতীয়ত, নন-কোভিড হাসপাতালগুলিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা চালু রাখা।
আপনাদের নিশ্চয়ই সেই অতিরিক্ত সচিবের কথা মনে আছে, যিনি কিছুদিন আগে মারা গেলেন। তার ডাক্তার মেয়ে সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করেও তাকে কোন নন-কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেননি এবং বাবাকেও বাঁচাতে পারেন নি।
করোনাভাইরাস আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সমাজকে এক নির্মম বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একজন নন-কোভিড রোগী কথা চিন্তা করুন যিনি হৃদযন্ত্র, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছেন। অথবা লেবার পেইন নিয়ে ঘোরা কোন প্রসূতি মায়ের কথা! কিংবা যেসব নন-কোভিড রোগী ডায়াবেটিস বা কিডনি জটিলতার মতো ক্রনিক রোগে ভুগছেন এবং যাদের নিয়মিত একটা চিকিৎসা ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। জরুরি ও নিয়মিত চিকিৎসার জন্য এরা কোথায় যাবেন? এর উত্তর বাকের ভাইও দিতে পারবেন না, কারণ এদের জন্য 'কোথাও কেউ নেই'! এ অবস্থা চলতে থাকলে দেখা যাবে দেশে করোনাভাইরাসের কারণে, করোনা-আক্রান্তের চেয়ে নন-কোভিড রোগী বেশী মারা যাচ্ছে।
সরকারি হাসপাতাল তো জরুরি সেবা দিতে বাধ্যই। বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলির জন্য সরকার চলতি মাসের ১১ তারিখে জারি করা নির্দেশনায় বলেছে, বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকগুলিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য আগত কোন রোগীকে ফেরত দেয়া যাবে না।
সরকারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এই নির্দেশনার পরেও প্রতিদিনই পত্রপত্রিকা খুললেই চোখে পড়ছে রোগী এবং স্বজনদের অমানবিক ভোগান্তির চিত্র। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, বেশ কিছু হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে কোভিড-১৯ রোগী তার তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং পরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। এ এক চরম প্যারাডক্স।
হাসপাতালগুলো কী করবে?
মহা মহামারির এই সময়ে হাসপাতালগুলি পরিচালনার জন্য সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা যেতে পারে ট্রায়াজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির কথা জেনেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদের বক্তব্যে।
ট্রায়াজ পদ্ধতি অনেকটা ট্রাফিক সিগনালের মতো লাল, হলুদও সবুজ পদ্ধতি। প্রতিটি হাসপাতালে লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিনটি ইউনিট থাকবে। কোন রোগী হাসপাতালে আসলে তাকে ফেরত পাঠানো যাবে না। হাসপাতালে যিনি রোগীকে অ্যাটেন্ড করবেন তিনি রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন করে তাকে সঠিক ইউনিটে ট্রান্সফার করবেন।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুক্ত কোন একশ মিটার স্প্রিন্ট নয়, এটি একটি ম্যারাথন। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ লড়তে গেলে পরিকল্পনার পাশাপাশি সাশ্রয়ীও হওয়া প্রয়োজন। মানুষ এখন বাড়িতে; সরকারের নীতি নির্ধারকেরা কিছুদিনের কুলিং পিরিয়ড পাবেন ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার জন্য। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখনই সময়। আমাদের আর ভুল করার সুযোগ নেই। এই সময়ে একটি ভুল সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী টাইম বোমকে অ্যাটম বোমা বানিয়ে দিতে পারে।
ঈদের পরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত লড়াইয়ে নতুন এক বাংলাদেশের প্রত্যাশায়। সবাইকে ঈদ মোবারক!
যাদের সহযোগিতা ছাড়া লেখাটি সম্পূর্ণ হতো না-