Published : 13 May 2020, 04:58 PM
যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন সম্প্রতি কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদেন বলেছে, ঐতিহ্যগতভাবেই প্রবল সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক যে কোনো সংকটে নেতৃত্বের আসনে থাকে। কিন্তু গোটা বিশ্বে একযোগে ছড়িয়ে পড়া ভয়ঙ্কর ব্যাধি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, ওষুধ প্রস্তুত ও চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্স আয়োজন করে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এর আগেই প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর যে চাঁদা দিত, সেটা স্থগিত করে দেন।
যুক্তরাষ্ট্র্রে সরকারের এ ধরনের মনোভাব কেন? তার উত্তর সম্ভবত মিলবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি মন্তব্যে– সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে 'আমার জন্য এতে কী আছে' এবং 'অন্যরা চুলোয় যাক' দৃষ্টিভঙ্গী খুবই বিপজ্জনক।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার তার সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখবেন, এটা কেউ আশা করে না।
ঢাকায় ব্রিটেনের হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিককসনও তার দেশের সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কোনো কিছু বলবেন না।
একইভাবে ওয়াশিংটন বা লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের কূটনীতিক সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের নীতি ও কর্মকৌশলের সমালোচনা করবেন না – এটাই দস্তুর। পরিস্থিতি এমন হতেই পারে যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য প্রদান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এটা প্রকাশের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে – লন্ডন বা ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের বক্তব্য জানিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশে বসেও এটা সম্ভব – সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূত কিংবা অন্য কোনো প্রতিনিধি ডেকে প্রতিবাদ বা অন্য কোনোভাবে অভিমত প্রকাশ। প্রায়শই আমরা 'কূটনীতিক তলবের' ঘটনা দেখি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ সাতটি দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা একযোগে টুইট করেন– যাতে বাংলাদেশের মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন খোলামেলা কথা বলতে পছন্দ করেন। বঙ্গোপসাগরে নৌকায় ভেসে চলা কয়েকশ' রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য একটি উন্নত দেশ থেকে আহ্বান জানানো হলে তিনি সে দেশকে তাদের আশ্রয় প্রদানের অনুরোধ করেন। সাত দেশে কূটনীতিকদের টুইট বার্তা পদক্ষেপকে দুর্ভাগ্যজনক ও শিষ্টাচার পরিপন্থি হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। কেউ যদি করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব রটনা করে, মিথ্যাচার করে কিংবা এই মহাদুর্যোগের সময় পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্তে যুক্ত হয়ে পড়ে, তাকে কি স্বাধীনতা প্রদান করা যায়?
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন কি করছে? সে দেশে স্পষ্ট নির্দেশ জারি হয়েছে– হোয়াইট হাউসের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া করোনাভাইরাস বিষয়ক কোনো তথ্য প্রচার করা যাবে না। গণমাধ্যম কর্মীরা বার বার অভিযোগ করছেন, তাদের অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ও তার সহকর্মীরা মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার দেশের অভিযোগ– স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটেনের হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন নিশ্চয়ই এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানেন।
কিন্তু তাদের যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা – বাংলাদেশের এ সব বিষয়ে মতামত প্রকাশ না করলে পেটের রুটি-মাংস-পানীয় হজম হয় না। ঢাকায় নিযুক্ত পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশের কূটনীতিক আমাকে বলেছেন, কয়েকটি 'উন্নত দেশের' কূটনীতিকরা প্রায়শই বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের প্রস্তুত করা বিবৃতিতে সই দিতে অনুরোধ করেন। যখন বলা হয়, এসব তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা কেন এ নিয়ে মতপ্রকাশ করতে যাব? উত্তরে উদ্যোক্তারা বলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের নাক গলানোর বিষয়টি বাংলাদেশের কিছু লোক খারাপভাবে দেখে না বরং মিডিয়া খুব প্রচার দেয়। টুইসডে গ্রুপ ও ব্রেকফাস্ট পার্টির জন্ম এভাবেই।
বাংলাদেশের সরকারে কিংবা বিরোধী দলে যারা থাকে তাদের সব কাজ অন্য দেশের সবসময় পছন্দ নাও হতে পারে। একইভাবে অন্য দেশের সব কাজও আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন নিষ্ঠুর ঘাতক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের একনিষ্ঠ সমর্থক। বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে নিয়োজিত পাকিস্তানি সৈন্যদের তারা অস্ত্র দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে। গোটা বিশ্ব ছিল এর নিন্দায় সোচ্চার। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি তার দেশের সরকারের এ নীতির প্রতিবাদ করার জন্য পাকিস্তান আসতে চেয়েছেন। কিন্তু তাকে ভিসা দেওয়া হয়নি। তিনি ভারতে শরনার্থী শিবির পরিদর্শনে গিয়ে বিপুল সংখ্যক শিশু-নারী-পুরুষের কষ্ট দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি শিবিরের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান– আমি কি ধরনের সাহায্য করতে পারি। উত্তরে তাকে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ক্রিমেটোরিয়াম, শবদাহ করার যন্ত্র। কারণ প্রতিদিন শিবিরে এত নারী-পুরুষ-শিশুর মৃত্যু ঘটছে, তাদের সৎকার দুঃসহ হয়ে পড়েছে। কেনেডি অশ্রু সংবরণ করতে পারেন না। কারণ এ গণহত্যার পেছনে তার দেশের সরকারেরও প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ নীতি আমাদের পছন্দ নয়। যেমন পছন্দ ছিল না ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে কেনা গমের জাহাজ মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সিদ্ধান্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর খুনি ফারুক-রশিদ-ডালিম চক্র যখন বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়, তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এটাও আমাদের পছন্দ ছিল না।
এই খুনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রাশেদ চৌধুরীকে যে যুক্তরাষ্ট্র এখনও আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, সেটাও আমাদের পছন্দ নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর খুন-ধর্ষণে সরাসরি জড়িত কুখ্যাত আলবদর বাহিনী ও তাদের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচারের উদ্যোগ ভণ্ডুল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিও আমাদের পছন্দ নয়। আমরা স্মরণ করতে পারি, জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও আলবদর বাহিনীর কমান্ডার কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড যেন কার্যকর না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির টেলিফোনের কথা। তিনি ফোনে বলেছিলেন, 'কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যা বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করবে।'
যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশের মন্দ প্রভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ঠেকানো যায়নি। কিন্তু জন কেরি সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে বলে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, সেটা অমূলক ছিল না। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সর্বতোভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্ধারিত নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা চালায়। পেট্রল বোমা নিক্ষিপ্ত হতে থাকে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয় ঠিক ১৯৭১ সালের মতো। বেগম খালেদা জিয়া ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসির ডাক দেন। জনসমর্থন না থাকায় এ কর্মসূচি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। কিন্তু জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার জন্য কত কিছুই না করেছিল তারা। জন কেরির হুমকি কেবল কাগুজে ছিল না।
এ নির্বাচনের কিছুদিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বৈঠকে বসেছিলেন গুলশানের এক বাড়িতে। বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা, ব্যবসায়ী ও সিভিল সোসাইটির নেতাদের এ সভায় মুড এমন ছিল যেন বিএনপি ক্ষমতায় আসছেই। ড্যান মজিনাকে তখন কৌতুক করে কেউ কেউ বলতেন 'ভাইস রয়', কেউ বা বলতেন 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব'। তিনি দিল্লি গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের পর্যন্ত বোঝাতে চেষ্টা করেন– বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমণ্ডলীয় স্বার্থ রয়েছে এবং সেটা সংরক্ষণে তারা কাজ করে যাবে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতি তার পক্ষপাতও গোপন কিছু ছিল না।
নির্বাচনের বেশ আগেই পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ সহায়তা বন্ধে অপচেষ্টা শুরু হয়। বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লাগে একটি মহল। একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ তোলা হতে থাকে। ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করার ১২০ কোটি ডলার ঋণ বাতিল ঘোষণা করে। সে সময়ে ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি ছিলেন এলেন গোল্ডস্টেইন। তিনি ঋণ বাতিলের পর এক প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে বলেন, ভবিষ্যতে এ প্রকল্পে ঋণ পেতে হলে বাংলাদেশকে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ঋণের অর্থ ঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে। এমনকি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (৫ জানুয়ারি, ২০১৪) কোন পদ্ধতিতে হবে সে বিষয়েও শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তিনি এটাও বলেন, শেখ হাসিনার কার্যক্রম অগ্রহণযোগ্য এবং বিশ্ব ব্যাংকের অবস্থানের প্রতি মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।
এটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের কিছু লোক এতে দোষের কিছু দেখেনি।
বিশ্ব ব্যাংক ভুল করেছে, সেটা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় এসে স্বীকার করে গেছেন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু। ১৬ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি এটাও বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে, সেটা মাত্রা ১০ বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এক পয়সা না নিয়েও এটা বাংলাদেশ করতে পারছে।
বাংলাদেশ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও সাধ্যমতো মোকাবেলার চেষ্টা করছে। এ কাজ বিশাল। আমাদের সাধ্য সীমিত। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৮০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ব্রিটেন, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া করোনাভাইরাসে নাকাল। কারো কাছে প্রতিষেধক নেই। চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রকট ঘাটতি। ভ্যাকসিন কবে আবিষ্কার হবে, সেটা জানা নেই। এ জন্য সম্মিলিত প্রয়াসে সামিল হতে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ উৎসাহী নয়। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিংবা ব্রিটেনের হাইকমিশনার নিশ্চয়ই সে খবর রাখেন। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ বোরো ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে পারছে। কৃষি নিয়ে ভাবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রফতানি বাণিজ্যে যে প্রবল ঘাটতির শঙ্কা, তার কিছুটা হলেও খাদ্য ও সবজি-মাছ দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু উদ্বেগ আছে পোশাক রফতানি নিয়ে। প্রবাসে যে প্রায় এক কোটি লোক কাজ করছে, তাদের একটি অশ দেশে ফেরত আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকেও ফেরত আসার শঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক রফতানি নিয়ে। এমনটি যেন না ঘটে, রফতানি আদেশ যেন বাতিল না হয় এবং যখন করোনাভাইরাসের ওষুধ-ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হবে – বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যেন তার সুফল থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা নিজ নিজ দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারকে বোঝাতে উদ্যোগী হবেন সেটাই কাম্য। 'অন্যরা চুলায় যাক' কিংবা 'আমার কী লাভ'– এই মনোভাব নিয়ে পড়ে থাকা এ ভয়ঙ্কর সময়ে মানবতাবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হবে।