Published : 04 May 2020, 08:47 PM
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে কোন মতের বিপক্ষে অবস্থান নিলেই আপনাকে তুলোধুনো করে ছাড়বে নেটিজেনরা (ইন্টারনেট এবং সিটিজেন মিলেই নেটিজেন, অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী)। তাই যেকোন মতের বিপক্ষে লিখতে একটু ভয়ই পাই। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই হোক কিংবা যেকোন গণমাধ্যম। সেই ঝুঁকিটা নিয়েই লিখতে বসলাম।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আমাদের বেশ একটু আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় আমরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছি। সরকারের তরফ থেকেও নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। তাই অনেকটা বন্দি অবস্থায় আমরা।
বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার পর্যন্ত ৫৮ তম দিনে দেশে মোট শনাক্ত এগারো হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১৮৫ জন। এ অবস্থায় এসে সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু কিছু উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে। আরো কিছু খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এ ধরনের কার্যক্রম বিশ্বের অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের কপালের চিন্তার ভাঁজ কমছে না। বরং বেড়েই চলেছে।
এবার আসুন আমরা করোনাভাইরাস থেকে একটু অন্য একটি রোগের খোঁজ খবর নিয়ে আসি। যক্ষ্মা। এর সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বললে কিংবা গান গাইলেও এ ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন গড়ে ৯৭৮ জন এবং মারা যান ১২৯ জন। এ হিসেবে গত ৫৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজারের কিছু কম বা বেশি মানুষ, আর মারা গেছেন হয়তো সাড়ে ছয় হাজার মানুষ।
আর পুরো বিশ্বে ২০১৮ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ। মারা গেছেন প্রায় ১৫ লাখ। আপনারা অবশ্যই জানেন, যক্ষ্মা চিকিৎসায় ভালো হয়। বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে এর চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
যক্ষ্মার মত একটি মরণব্যাধি মোকাবিলা করে আমরা টিকে আছি, তাহলে কেন করোনাভাইরাসে আমাদের ভয়?
মাস ছয়েক আগের কথা। আমার এক সহকর্মীর পরীক্ষায় ধরা পড়লো তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এ ধরনের রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী আইসোলেশনে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া শুরু করেন। কিন্তু আমার ওই সহকর্মী যক্ষ্মা ধরা পড়ার পরও এক সপ্তাহ অফিস করেছেন। এরপর তিনি ছুটিতে গিয়ে পরে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। কই, আমার ওই সহকর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর তো তার সঙ্গে যারা মিশেছেন তাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়নি। বন্ধ করে দেয়া হয়নি অফিসের কোন কাজও। সবই চলেছে স্বাভাবিক নিয়মে।
যদি যক্ষ্মাকে আমরা ভয় না পাই, তাহলে কেন করোনাভাইরাসকে ভয় করছি? দুটি রোগই সমান ভয়ংকর। তাহলে কেন করোনায় সব বন্ধ করে অর্থনীতিকে ধ্বংস? বিশ্বাস করেন অর্থনীতি না টিকলে করোনা আমাদের যতটা বিপদে ফেলেছে তার চেয়ে বড় বিপদে আমরা পড়বো।
বড় লেখা কেউ পড়ে না। তাই আর বড় করবো না। শুধু একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করি। আমার পরিবারের একজন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। পোশাক কারখানা বন্ধের কারণে শ্রমিকদের বেতন না দেয়া নিয়ে অনেক খবর প্রকাশ করেছি। তারা অনেকে বেতন পেয়েছেনও। কিন্তু আপনি জানেন কি অনেক পোশাক কারখানার কর্মকর্তারা এখনো মার্চের বেতন পাননি। এরই মধ্যে ছাঁটাইয়ের তালিকা হচ্ছে। আমরা গণমাধ্যম যখন কোন নির্দিষ্ট দিকে ঝুঁকে পড়ি তখন শুধু ওই ঝুঁকে থাকা বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করি। সমাজের আরো ছোট ছোট অনেক বিষয় আছে, তার সঙ্গে অনেক জীবনও জড়িত। একটু সবার কথা ভাবি। আমরা ভয় না করে, মোকাবিলা করার চেষ্টা করি। সুদিন আসবেই।