Published : 31 Dec 2019, 02:59 PM
দেখতে দেখতেই যেন কালের গর্ভে হারিয়ে গেল ২০১৯ সাল। ২০১৯ এখন পুরাতন বছর। পুরাতনকে আমরা বিদায় জানাই। তাই ২০১৯-কেও বিদায়। নতুনকে বরণ করাও এক চিরায়ত স্বাভাবিক রীতি। তাই স্বাগত ২০২০। ভালোয়-মন্দয় মিলিয়ে চলে গেল ২০১৯ সালটি। আমরা আশা করবো, পুরাতন বা সদ্য বিদায় নেওয়া বছরে আমাদের যত অপ্রাপ্তি তার পূরণ হবে নতুন বছরে। বিদায়ী বছরে কী আমাদের ব্যক্তি জীবনে, কী আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে, সবটুকুই হয়তো ভালো ছিল না, প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু এটা তো সত্য যে, যাই ঘটুক না কেন, আমাদের এগিয়ে চলার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সব স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়নি, ব্যর্থতার গ্লানিও আছে কিন্তু তারপরও থেমে ছিল না কিছুই। বছর শেষের দিকে সরকারের 'শুদ্ধি' অভিযান অনেকের মনেই কিছুটা আশা জাগিয়েছে। এগিয়ে চলার, সামনে যাওয়ার নিরন্তর প্রয়াস আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, নতুন বছরকে বরণ করার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
গত বছরের শুরুতে, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ আমরা পেয়েছিলাম একটি নতুন মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভা। চমকের মন্ত্রিসভা। চমকের, কারণ তৃতীয় মন্ত্রিসভার ৩৬ জনকে বাদ দিয়ে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মধ্যে ২৭ জনই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। তুলনামূলকভাবে কম বিতর্কিত, ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন তার সহকর্মী হিসেবে। বছরকে বিদায় দিয়ে আমরা কি বলতে পারছি যে, চমকের মন্ত্রিসভা চমকপ্রদ পারফরমেন্স দেখাতে পেরেছেন? না, একজন মন্ত্রীও তার অসাধারণ কাজের জন্য সাধারণ মানুষের নজর কাড়তে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বরং দু'চারজন মন্ত্রী নতুন করে বিতর্কিত হয়েছেন, সমালোচিত হয়েছেন দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয়তা, সব দিকে সতর্ক মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষিপ্রতা – অন্য মন্ত্রীদের ব্যর্থতাকে আড়াল করেছে বরাবরের মতো। মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ শোনা না গেলেও দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের উদ্যোগী ভূমিকাও তেমন দৃশ্যমান হয়নি। মন্ত্রীদের গড়পরতা পারফরমেন্সের কারণে কারো সাফল্য আলোচনায়ও আসেনি।
বছরটি শেষ হয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং নতুন কমিটি গঠনের আগ্রহ-কৌতূহলের মধ্য দিয়ে। শেখ হাসিনা নবম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প কারো ভাবনায় ছিল না। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থাকলেও তা হয়নি। মন্ত্রিসভায় যেমন নতুন মুখের ছড়াছড়ি ছিল, চমক ছিল- আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতেও সে রকম হবে বলে কেউ কেউ আশা করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাননি। যাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের ওপরই নির্ভর করেছেন। কিছু রদবদল, যোগ-বিয়োগ হয়েছে, তবে সেটা মামুলি। সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া আর কারো বিষয়ে তেমন আলোচনা নেই। দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অরাজক পরিস্থিতির জন্য যাকে এক নম্বরে দায়ী করা হয়, সেই শাহজাহান খানের আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতৃত্ব পাওয়ার ঘটনাটি অনেককেই বিস্মিত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। সরকার এবং দলকে আলাদা করার একটি চেষ্টাও দলের কমিটি গঠনের সময় লক্ষ করা গেছে। মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য দলের কমিটিতে ঠাঁই পাননি। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী দলের নেতৃত্বে থাকায় এই আলাদাকরণের বিষয়টি খুব সহজে কারো নজর কাড়বে বলেও মনে হয় না। বিশেষ করে দলের সাধারণ সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলে সরকার ও দলের মধ্যে পার্থক্য করার বিষয়টি আলোচনায় আসবে না। একসময় আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের একজন মন্ত্রিসভার সদস্য না হওয়ার নীতি অনুসরণ করা হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এই নীতি মেনে চলতেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে তিনি দলের সভাপতির পদ ছেড়ে সরকার প্রধান থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নতুন বছরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কী ভূমিকা পালন করে সেটাই হবে দেখার বিষয়। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। দ্বন্দ্ব-বিরোধও বেড়েছে। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্বও প্রকট হয়েছে। সুযোগ সন্ধানী, সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য বাড়ার অভিযোগও আছে। দলকে সংগঠিত এবং দলীয় শক্তিকে সংহত করার কাজে নতুন কমিটি কতটুকু সাফল্য দেখাতে পারে, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
২০১৯ সাল বিএনপি এবং সরকারবিরোধী দলগুলোর জন্য কোনো সুখবর তৈরি করতে পারেনি। সংসদে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে নানা নাটকীতা শেষে বিএনপি সংসদে গিয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপি কার্যকর কিছুই করতে পারেনি। সর্বোচ্চ আদালতে দৌড়ঝাঁপ করেও খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। আবার আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার কথা একাধিকবার বলেও বিএনপি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সরকারি বাধা মোকাবেলা করে মাঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি বিএনপির নেই।
বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির মধ্যে হতাশা বেড়েছে, বেড়েছে অভ্যন্তরীণ সংকট। দলের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল বেড়েছে। আবার দল ছাড়ার প্রবণতাও আছে। সব মিলিয়ে, বিএনপি কোন পরিণতির পথে হাঁটছে ২০১৯ সালে তার কোনো স্পষ্ট পথরেখা আঁকা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সাল বিএনপির জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ১১ মার্চ ২০১৯ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজনীতি ও সমাজ সচেতন মহলে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। আশা করা হচ্ছিল, ডাকসুর পর অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বন্ধ দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের পর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা-সংকট দূর হওয়ার পথ তৈরি না হয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ডাকসু ভিপি পদে সরকারবিরোধী বলে পরিচিত নুরুল হক নুর নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচিত ডাকসু কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। নির্বাচনের পর নয় মাসে ইতিবাচক কোনো কাজে হাত দেওয়ার জন্য ডাকসু আলোচনায় আসেনি। বরং ছাত্রলীগের সঙ্গে ভিপির বিরোধ এবং সংঘাত, মারামারির ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ডাকসুতে। নতুন বছরে ডাকসু নিয়ে কোনো আশার আলো দেখা যাবে বলে মনে হয় না। বছরের বেশ কিছু সময় জুড়ে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অসন্তোষের ঘটনা ছিল আলোচিত বিষয়। ভিসি তথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের 'বিদ্রোহ' নতুন বছরে নতুন মাত্রা পায় কিনা, সেদিকেই অনেকের নজর থাকবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে ওঠা ছিল বিদায়ী বছরের একটি বড় ঘটনা। ছাত্রলীগের দাপটে যারা ছিল তটস্থ, নির্যাতন সহ্য করাটা যেখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে 'বিচার' ব্যবস্থা ফিরে আসাটাই একটি বড় অর্জন।
রাজনীতিতে বড় কোনো আলোড়ন ২০১৯ সাল জুড়ে ছিল না। সারা বছরই রাজনীতির মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। সরকারকে বেকায়দায় বা চাপে ফেলার মতো একাধিক ইস্যু তৈরি হলেও অসংগঠিত, উদ্যমহীন বিরোধী দল তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। সরকার সব চাপ অনায়াসেই অতিক্রম করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। কিন্তু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ওপর মানুষের আস্থাহীনতাও চরম হওয়ায় সরকার এক ধরনের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। মানুষ এটা ধরে নিয়েছে যে, সরকার এবং সরকারি দল যা করতে চায়, যেভাবে করতে চায়, তা করার সক্ষমতা তাদের আছে। তাদের মোকাবেলার শক্তিসামর্থ্য বিরোধীদের নেই। তাছাড়া সরকার বদল হলে দেশের অবস্থা ভালো না হয়ে আরো খারাপ হবে বলেও মানুষ মনে করে। সরকার প্রধান হিসেবে মানুষের সামনে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই। আওয়ামী লীগে মানুষের অসন্তোষ থাকলেও শেখ হাসিনায় তাদের পুরোপুরি সন্তুষ্টি আছে।
বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা কোনটি ছিল তা বলা কঠিন এই কারণে যে, বেশ কয়েকটি ঘটনাই ঘটেছে যা মানুষকে আলোড়িত করেছে, প্রভাবিত করেছে। ক্যাসিনোকাণ্ড, পেঁয়াজকাণ্ড, গুজবকাণ্ড, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্যাসিনো নামের জুয়ার আসর যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল, এর সঙ্গে সরকারি দলের কারো কারো সংশ্লিষ্টতা, বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন, পাচারের খবরে মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে। দুর্নীতির নতুন ক্ষেত্র সামনে এসেছে। সরকার দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হলেও সরকারের জন্য এটা এক সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হয়েছে।
পেঁয়াজ সংকট মোকাবেলায় যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষ। পেঁয়াজের কেজি প্রায় তিনশো টাকা হওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছে চরম ক্ষোভ। পেঁয়াজ নিয়ে একাধিক মন্ত্রীর হাস্যকর বক্তব্য মানুষের ক্রোধ বাড়িয়েছে। পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাবও লক্ষ করা গেছে।
পদ্মাসেতুতে নরমুণ্ডু লাগবে – এই গুজব ছড়িয়ে দেশে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে পিটিয়ে নির্দোষ মানুষ হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাও দেশে বিদায়ী বছরে ঘটেছে।
ঘটেছে কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড, বনানী এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড, বছরের শেষ দিকে এসে কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানা এবং গাজীপুরের ফ্যান কারখানার অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মানুষের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা, আইনকানুন, বিধিবিধান না মানা এবং লাভ-লোভের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষাই এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য মূলত দায়ী। তাই এগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই বলা হচ্ছে। নতুন বছরে কি আমরা আইন মেনে চলার অভ্যাস রপ্ত করবো?
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি আমাদের দেশে একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সড়কে জীবন যাচ্ছে। কত পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চালকদের শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা সফল হয় না সংগঠিত সংঘবদ্ধ শক্তির চাপের কারণে। বিদায়ী বছরে সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রেন দুর্ঘটনাও। রেলপথকে সুলভ, নিরাপদ এবং আরামদায়ক বলে মনে করা হয় পৃথিবী জুড়েই। আমাদের দেশে রেলপথকে দীর্ঘদিন উপেক্ষা করা হয়েছে। পরিবহন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে উপেক্ষিত হয়েছে জনস্বার্থ। শেখ হাসিনার সরকার রেলপথের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। রেলকে আধুনিক ও সম্প্রসারিত করার জন্য প্রচুর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকার যখন রেল যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ব্যয় বাড়াচ্ছে, তখন একের পর এক রেল দুর্ঘটনাও কোনো পরিকল্পিত 'স্যাবোটাজ' কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। নতুন বছরে আমরা রেলে নতুন অবস্থা দেখতে চাই।
অনেক মৃত্যু ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বিদায়ী বছরে আলোড়ন তুলেছিল সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারা এবং বরগুনার রিফাত শরিফ নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা দুটি। ঘটনা দুটি দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাবের উর্দ্ধে উঠে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের কারণে মানুষ স্বস্তিও বোধ করেছিল।
আশাহত হওয়ার মতো অনেক কিছু ঘটলেও বিগত বছরে দেশবাসীর সামনে আশার উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগ-দুর্বিপাক-সংকটে তার উপস্থিতি মানুষকে আশ্বস্ত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। শেখ হাসিনা আছেন, কাজেই উপায় একটি হবেই – এই ভরসার জায়গাটি অবিচল থাকায় আমাদের এগিয়ে চলা বন্ধ হয়নি।
বিদায় ২০১৯। ওই বছরটি আর আমাদের কাছে ফিরে আসবে না।
২০২০ সালকে আমরা সানন্দচিত্তে স্বাগত জানাই। এই বছরটি মুজিববর্ষ হিসেবে পালিত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালা থাকবে সারা বছরজুড়ে। মুজিববর্ষে বাঙালিচিত্ত হরষে থাকুক – এটাই আমরা চাই । তাই এই বছর মুজিব-অনুসারী ও ভক্তরা নেতিবাচক কিছু করা থেকে বিরত থাকবে বলেই আমরা আশা করি । সরকার এবং আওয়ামী লীগকে এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। 'দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো'ই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন। তিনি চেয়েছেন 'সোনার বাংলা' এবং 'সোনার মানুষ'। বাঙালি শুধু বাঙালি হয়ে থাকবে না, 'মানুষ' হবে – এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং বিশ্বাস। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ ২০২০ সালে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাক – এ প্রত্যাশাই করি বছরবরণের মুহূর্তে।