Published : 07 Oct 2019, 09:14 PM
রুস্তম আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার সাধনপুর গ্রামের শাহজাহান আলী আকন্দ গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের টাকায় নিজের ছেলে রুস্তমের পড়াশোনা চালিয়ে যেত। রুস্তম যখন বাড়িতে ফিরতো, তখন তাদের একটি মাত্র ঘরের মেঝেতে এক পাশে তারা দুই ভাই ও অপর পাশে তাদের বাবা-মা থাকতো। বাবা-মার আশা ছিল তাদের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে তাদের কষ্টের বোঝাটা হাল্কা করে দেবে। তাই ছেঁড়া কাপড়ে, অর্ধহারে থেকে স্বপ্ন বুনন করতো এই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ২০১৪ সালে ৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে নিজ কক্ষে গুলি করে তাকে হত্যা করে তারই রাজনৈতিক অনুসারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার সুবাদে এই রকম হৃদয় মোচড়ানো সংবাদ লিখতে হয়েছে। রুস্তমসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সাড়ে তিন দশকে প্রায় ত্রিশ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা নিতে এসে লাশ হতে হয়েছে- যাদের মধ্যে মধ্যে ছাত্রলীগের আটজন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৫ জন, ছাত্রদলের চারজন, ছাত্র মৈত্রীর দুইজন এবং ছাত্র ইউনিয়নের এক জন রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সংঘঠিত এসব হত্যাকাণ্ডের কোনও দৃশ্যমান বিচার হয়নি। আটক, গ্রেপ্তার, রায়ের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে বছরের পর বছর। রায় বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখা গেছে খুবই কম। এটি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে লাশ হওয়ার সংস্কৃতি বাঙালির অন্যান্য সংস্কৃতির মতই আবহমান কাল ধরে চলে আসছে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে। খুব সম্ভবত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ-ই এমন দেশ, যেখানে উচ্চশিক্ষার শেষে সমাবর্তনের পোশাক না পরে- তার আগেই কোনও কোনও শিক্ষার্থীকে কাফনের কাপড় পরে ঘরে ফিরতে হয়। সন্তানের এই লাশ যে কত বাবা-মার কাঁধে বোঝা হয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
দেশের এমন কোন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের কোন সুষ্ঠু বিচার হয়েছে। একটি ছেলে/মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠাতে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়, তা কেবল বাবা-মায়েরা জানেন। কিন্তু সন্তান শিক্ষা নিতে গিয়ে লাশ হবে, সেই ভবিষ্যত যদি বাবা-মায়েরা জানতেন, তাহলে আমি নিশ্চিত তারা কোনদিন ছেলে-মেয়েদের পড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতেন না। এ এক বিভীষিকাময় চিরন্তন সত্য। কিন্তু কেন এই লাশ? কেন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে বাবা-মার বুক খালি করছে?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হত্যাকাণ্ডগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই মূল ও প্রধান কারণ। কখনো নিজদলীয়, কখনো প্রতিপক্ষ আবার কখনো কখনো তুচ্ছ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সুবিধাগত (টেন্ডার, হলের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি) কোনও কারণে শিক্ষার্থীদের প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বাইরে যে হত্যাকাণ্ডগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে, তার পরিমাণ এতোই কম যে খুঁজে বের করতে রীতিমত গলদঘর্ম হতে হয় ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতাপূর্ণ লড়াইয়ের পর কিছু কিছু শিক্ষার্থী নানা সুবিধা আদায় করতে, কিংবা কখনো কখনো বাধ্য হয়েই 'বড় ভাই'দের মদদপুষ্টতায় হারিয়ে ফেলে নিজেদের স্বকীয়তা। যারা 'বড় ভাই'দের সৃষ্টি করছে, তারা এই দেশকে শাসন করে কিংবা বিরোধীদলে থাকে। বলতে গেলে, আমাদের ক্ষমতার পিরামিডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোকে সেকেন্ডারি স্তরে রাখেন। এই সংস্কৃতির আবডালে এককালের তুখোড় মেধাবীরা হয়ে যায় বখাটে। মাদক-ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘেরাটোপে মেধায় ধরে পচন। যে পচনের দুর্গন্ধ গিয়ে ঠেকে লাশে।
কিন্তু কেন আমরা মেধাবীদের পচনশীল করে তুলি? কেন আমরা তাদেরকে দিনের পর দিন রাস্তায় নামিয়ে রক্তপাত ঘটাই?- এসব প্রশ্নের উত্তর একটি শিশুও বোঝে তাই সেই আলোচনায় না গিয়ে একটু গভীরে যাওয়া ভাল।
দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ছাত্ররাজনীতি এই দেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে ছাত্ররাজনীতি আমাদের জাতীয় অধিকার-সংগ্রাম আদায়ে পথ দেখিয়েছে। দেশের যেকোনও সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগ আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণা জুগিয়েছে। তবে এইসব প্রেরণা এসেছে আমাদের সমন্বিত ছাত্র সংগ্রামের ফলে। একক কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে নয়, বরং আমাদের যাবতীয় অধিকার সংগ্রামের লড়াই হয়েছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। বায়ান্ন, ছিয়াত্তর, উনসত্তর, একাত্তর, নব্বইয়ের স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলন ছাত্রবিক্ষোভ- সমন্বয়ের ফল। এসব ছাত্রবিক্ষোভ ভিন্নমতের সম্মিলনেই হয়েছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিম্নমানের কারণ যদি বিশ্লেষণ করতে বলা হলে নি:সন্দেহে ছাত্ররাজনীতি কিংবা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের কথাই আপনার মাথায় ঘুরপাক খাবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাবতীয় অস্থিতিশীলতার জন্য ছাত্র রাজনীতির নোংরামি-ই যথেষ্ঠ। গুণ্ডামি দেখাতে গিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া বর্তমান মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু লাশ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে নিয়ত নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই দীর্ঘদিনের হলেও এই সংস্কৃতি থেকে কেউ বের হতে পারছে না। আমরা এক অন্য রকম উচ্চশিক্ষালয় গড়ে তুলেছি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও নতজানু হতে হয় এইসব সংগঠনের কাছে। উপাচার্যদের দেয়া হয় ইশারা। শিক্ষক-নিয়োগ থেকে কর্মচারী নিয়োগ পর্যন্ত সব ভাগ-বাটোয়ারায় থাকে এসব ছাত্র সংগঠন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কেন আমাদের ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন? স্কুল, কলেজে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে কি সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ থাকছে না? হ্যাঁ আমাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা ঠেকানোর জন্য আমাদের ছাত্রদের নেতৃত্বে থাকা প্রয়োজন। তবে আপনি যদি এ বিষয়টির প্রতি জোর দেন তাহলে দয়া করে জাতীয় রাজনীতির দিকে তাকান; বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছেলেরা রাজনীতি করে, মারধর করে, খুন করে- তাদের অবস্থান সেখানে কোথায়? গত তিন দশকে ঠিক কতজন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র রাজনীতি থেকে বের হয়ে জাতীয় রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন? কতজন ছাত্রনেতা মেধার সাক্ষর রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন? কতজন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে তার বাবা-মা'র কাঁধে বোঝা হয়েছেন? কতজন ছেলে-মেয়ে এই ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের রাজনীতিবিদরা দিতে পারবেন। কারণ, যারা জাতীয় রাজনীতিতে এসেছেন, তাদের একটি বড় অংশ নেতা হয়েছেন কেবল অর্থের বিনিময়ে। অর্থের দাপটে মনোনোয়ন কিনে নেতা বনে গিয়েছেন। যাদের সিংহভাগ সন্তানদের দেশের বাইরে পড়াচ্ছেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের দাপট দেখানোর জন্য বছরের পর বছর হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের স্বপ্ন বিনষ্ট করতে উৎসাহ দিয়ে গেছে। যে হাতেগোণা যে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছেন তারা প্রায় সবাই আজকের অবস্থানে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-সংসদের নিবার্চনের মাধ্যমে। যেখানে সব সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত দেয়ার অধিকার থাকে। নেতৃত্ব দেয়ার যাবতীয়গুণের পরিস্ফূটন ঘটানোও সম্ভব।
যে ছেলে-মেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বড়ভাইদের জন্য স্লোগান দিয়েছে, সেই ছেলে-মেয়েরা চাকরির জন্য দরজায় দরজায় ঘুরে হতাশা নিয়ে ফিরছে। যেসময়টুকু তাদের পড়াশোনা দরকার ছিল, সেই সময়টুকু তারা কাটিয়েছে সেই রাজনীতির পিছনে। চার বছরের পড়াশোনা দ্বিগুণ বছরেও শেষ হচ্ছে না, মূলত এই রাজনৈতিক মোহ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির সুফল ভোগ করছে মাত্র ১/২ শতাংশ, বাকীরা জিম্মি থাকছে তাদের কাছে। সাময়িক কাঁচা টাকা, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়েছে আমাদের ছেলে-মেয়েরা।
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে জীবনকে আলোকিত করার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর রাজনৈতিক সংগঠনের সম্পৃক্ততায় প্রায় প্রতিবছরই প্রাণ হারাচ্ছেন কোনো না কোনো শিক্ষার্থী। আর এই নোংরামির সর্বশেষ শিকার হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
যে ছেলেটি একাধারে মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখ খানেক শিক্ষার্থীকে টপকে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, সেই ছেলেটিকে আজ লাশ হতে হলো তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের হাতে। মাত্র একবছর আগে ফেইসবুকের অ্যাকাউন্ট খোলা আবরার তার নিজের টাইমলাইনে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১৬টি পোস্ট দিয়েছিল, যার মধ্যে নিজের মতামত প্রকাশ করেছে নয়টি পোস্টে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা মানে কেবল একটি বা দু'টি সনদ নেয়ার জন্য নয়। এখানে পড়তে আসা মানে নিজেকে পরিপূর্ণ মানবরূপে মেলে ধরার পথে পা দেওয়া, নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তায় আলোকিত করা। আবরার কিন্তু সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। ভিন্নমত পোষণ করলেই যে কেউ দেশদ্রোহী কিংবা চেতনাবিরোধী হয়ে যাবে, তা কেন? নিজ দেশের ভালমন্দ নিয়ে যদি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম চিন্তার উন্মেষ না ঘটায়, তাহলে আমাদের মননের বিকাশ ঘটাবে কে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির চর্চার ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনার আগে সামগ্রিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেয়া বেশ প্রয়োজন। নেতৃত্ব দেয়ার গুণ কেবল রাজনীতির মধ্যে থাকে না, এইগুণটি ফুটিয়ে তোলার জন্য নানার ধরনের চর্চার সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে। যে অপ-ছাত্ররাজনীতি বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনদের চোখের পানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেই ছাত্র রাজনীতি আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। আমিও আগেও বলছি, আবারও বলছি, দেশের যেকোনও ক্রান্তিকালে আমাদের ছাত্র সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেখানে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সফলতা-ব্যর্থতার প্রশ্ন নেই।
আমাদের শিক্ষালয় লাশের মিছিলের কিংবা গুণ্ডামির আখড়া হতে পারে না। শিক্ষালয়ে পুলিশের পাহারা বসিয়ে জেলখানা হয়ে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, দেশের বাইরে যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে আপনি কখনো পুলিশকে পাবেন না। বরং পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। সেখানে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষা চলে পুলিশের নজরদারিতে। এটাকে কখনোই পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা বলা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রহত্যার বিচারহীনতার সংস্কৃতি ফাহাদদের হত্যায় উস্কানি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভীরুতায় হত্যাকারীরা বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাস হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা । যার ফলে লাগামছাড়া হয়ে গেছে আমাদের এইসব ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাজনীতির ভালো দিকটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। বারবার বির্তকের জন্ম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পঠন-পাঠনে পঁচন ধরিয়ে ফেলছে।এভাবে কখনোই একটি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কোনও মৃত্যু উপত্যকা নয়, যেখানে যখন খুশি তখন বাবা-মার বুক খালি করার টিকেট দিবে।
অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ক্ষমতার বলয় তৈরি করাটা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নয়; এরা বঙ্গবন্ধুকে পাঠ করেনি, ধারণ করেনি তাকে। এরা মূর্খ, খুনি, বর্বর। এরা রাজনৈতিক দুবৃর্ত্ত। এদের হাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি একটি মাতৃভূমিও নয়। এইসব খুনিরা আমাদের বোঝা। এদের লাগাম টেনে ধরুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুমূর্ষুতা থেকে বাঁচাতে আমাদের করণীয় কি তা নিয়ে ভাবতে হবে। আজ আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরে খুন হলে তার বাবা-মা হয়তো বিচারের কিছুটা মুখ দেখতে পারতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় লাশে সেই আশাটুকু গুঁড়েবালি। আমরা আর কোনও লাশ দেখতে চাই না।
ভিন্নমত যেখানে প্রকাশের অধিকার থাকে না, সেখানে মুক্তচর্চার ক্ষেত্রে তৈরি হয় না। আশা করি, সরকার এইসব অতি উৎসাহী হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনবে। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার দ্রুত বিচার ও শাস্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত রাখবে।